রবিবার ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২
প্রকাশিত: ২০২৫-১০-১২ ১২:৫৫:৩৯
টাঙ্গাইল দর্পণ অনলাইন ডেস্ক:
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আজ ১২ অক্টোবর, ২০২৫ রোববার সকাল ৯টায় রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় এই এক মাসব্যাপী জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত এ কর্মসূচির আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে বিনামূল্যে ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা (TCV) দেওয়া হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, “টাইফয়েডে এখনও দেশের শিশুদের মৃত্যু হয়, এটা লজ্জার। বাংলাদেশ ডায়রিয়া ও রাতকানার মতো রোগ প্রতিরোধে সফল হয়েছে, এবার টাইফয়েডও রোধ করা সম্ভব হবে।” তিনি আরও বলেন, “রোগ প্রতিরোধ করা গেলে হাসপাতালের চাপ কমে এবং দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়।”
একই দিন রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলে উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জন্মসনদবিহীন শিশুরাও এই কর্মসূচির আওতায় আসবে। ইপিআই প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, প্রথম ১০ দিন স্কুল ও মাদরাসায় এবং পরবর্তী ৮ দিন ইপিআই সেন্টারে টিকাদান চলবে।
অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “এই টিকাটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ও নিরাপদ। নেপাল, পাকিস্তানসহ আটটি দেশে এটি সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।” তিনি জানান, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে এই টিকা, যা গ্যাভির সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার পেয়েছে।
টিকাদান কার্যক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুল বা মাদরাসায় এক ডোজ টিকা পাবে। স্কুলে ভর্তি নয় এমন শিশুরা নির্দিষ্ট টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবে। শহরের পথশিশুদের জন্য দায়িত্বে থাকবে বিভিন্ন এনজিও।
অভিভাবকদের জন্য অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। vaxepi.gov.bd/registration/tcv ওয়েবসাইটে ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করে টিকার কার্ড ডাউনলোড করা যাবে। জন্মসনদ না থাকলে পিতা-মাতার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেও নিবন্ধন সম্ভব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, “টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরাই টাইফয়েডে বেশি আক্রান্ত হয়। এই উদ্যোগ তাদের জন্য এক বিশাল সুরক্ষা বলয় তৈরি করবে।”
গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ স্টাডির তথ্য তুলে ধরে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে ৭০ লাখের বেশি মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন, মৃত্যু হয় ৯৩ হাজারের। বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় আট হাজার, যার মধ্যে ৬৮ শতাংশ শিশুর বয়স ১৫ বছরের নিচে। “টাইফয়েড টিকা নিলে এই জ্বরের প্রকোপ ও অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ কমবে,” বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সভাপতি আজমল হোসেন। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, ইউনিসেফের কান্ট্রি ডিরেক্টর রানা ফ্লাওয়ার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ডা. আহমদেম জামশেদ মোহাম্মদ।