রবিবার ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২

Logo
Add Image

রাজনীতি

টাঙ্গাইল-৫ আসনে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাইয়ে সতর্ক

প্রকাশিত: ২০২৫-১০-১০ ২১:২৬:৩৭

News Image

টাঙ্গাইল-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশিত প্রার্থীগণ

টাঙ্গাইল দর্পণ:

জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনটি জেলার মধ্যে নানা কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর এ আসন থেকে বিজয়ী প্রার্থীর দলই সরকার গঠন করার ইতিহাস রয়েছে। ১২টি ইউনিয়ন ও প্রথম শ্রেণির ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৫(সদর) সংসদীয় আসন। এখানে মোট ভোটার চার লাখ ৪০ হাজার ২৪জন। এরমধ্যে পুরুষ দুই লাখ ২০ হাজার ৯৭৬জন, নারী ভোটার ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৪৮জন। 

 

নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপি, আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির ভোটব্যাংক রয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও জাতীয় পার্টি এখনও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেয়নি। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ১ নভেম্বর। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে হাসানুজ্জামিল শাহীন সভাপতি ও ফরহাদ ইকবাল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু প্রায় তিন বছরেও দলটির পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন করতে না পারার অভিযোগ রয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলছেন তারা দুই দফায় পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটির তালিকা কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে জমা দিলেও অজ্ঞাত কারণে পাস করা হয়নি। এক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই। এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি অর্ধডজন নেতা। তবে দলের মনোনয়ন দৌঁড়ে মাঠপর্যায়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। তারা একত্রে দলীয় কর্মসূচিসহ দলের ইউনিয়ন ও শহর পর্যায়ের নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। ওয়ার্ড পর্যায়ে দুজনই ক্রীড়া, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় স্ব স্ব অবস্থান স্পষ্ট করছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি অন্য নেতাদের মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু, জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সভাপতি খন্দকার আহমেদুল হক সাতিল, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদা পান্নার ছেলে জিয়াউর রহমান (প্লেটো) এবং সব সময়ের প্রার্থী সৈয়দ খালেদ মোস্তফাও প্রচারণায় নেমেছেন।  


টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আবদুর রহমান জয়লাভ করেন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মীর মাজেদুর রহমান এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান জয়লাভ করেন এবং পরে তিনি জাতীয়পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মেজর জেনারেল(অব.) মাহমুদুল হাসান জয়লাভ করেন। একই সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আব্দুল মান্নান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মেজর জেনারেল(অব.) মাহমুদুল হাসান এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির(এরশাদ) আবুল কাশেম জয়লাভ করেন। কিন্তু ভোট কারচুপির অভিযোগে মেজর জেনারেল(অব.) মাহমুদুল হাসান মামলা দায়ের করেন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে জাতীয় পার্টির আবুল কাশেমের এমপি পদ রহিত করে ২০১২ সালের ৩০ মে বিএনপির মেজর জেনারেল(অব.) মাহমুদুল হাসানকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ছানোয়ার হোসেন নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ছানোয়ার হোসেন এমপি নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ আসনটি তাদের শরিক দল জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ছানোয়ার হোসেন এমপি নির্বাচিত হন। 


তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন যৌথভাবে পান মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান ও জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু। পরে হাইকমান্ডের নির্দেশে ছাইদুল হক ছাদু মানোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এবারও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশি। এদিকে ২০০১ সালের অষ্টম, ২০০৮ সালের নবম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফরহাদ ইকবাল। মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি খন্দকার আহমেদুল হক সাতিল, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদা পান্নার ছেলে জিয়াউর রহমান (প্লেটো) এবং সৈয়দ খালেদ মোস্তফা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি।  


বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক এবং যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এ আসনের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নানাবিধ দলীয় কর্মসূচি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সদলবলে যোগ দিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীতা ঘোষণা করছেন- বিএনপির ৩১ দফা সম্বলিত পোস্টার বিলাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে টানছেন, মনোনয়ন পেলে এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল ছাত্র রাজনীতি থেকে দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলীয় মনোনয়নের আশায় কাজ করছেন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করেন। তিনি প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপির ৩১দফা বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে স্বীয় অবস্থান শক্ত করছেন। 


টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মূলত দো’টানায় পড়ে গেছেন। একদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, অন্যদিকে ঘরের ছেলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর উদয় হওয়া সুলতান সালাউদ্দিন টুকু নিঃসন্দেহে জাতীয় নেতা। তার নেতৃত্বে টাঙ্গাইলের বিএনপির নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত হয়ে কাজ করার প্রয়াস পাবে এটাই স্বাভাবিক। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এমপি হওয়ার প্রত্যাশায় দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়েও দুঃসময়ে দলের হাল ধরে রাখা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল তাদের ঘরের ছেলে। গত ১৭ বছর সরকারের জেল-জুলুম ও মামলা-হামলা মোকাবিলা করে দলকে তিনি আগলে রেখেছেন। শহরের প্রাণকেন্দ্রে সভা-সমাবেশ তো দূূরের কথা বিএনপির নাম নিয়ে দাঁড়ানো যখন সম্ভব হয়নি তখনও ফরহাদ ইকবাল শহরতলীর বিভিন্ন মাঠ বা রাস্তায় তার অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছেন। এবার ফরহাদ ইকবাল দলের অনুকম্পা চান। তবে জাতীয়পার্টি এখনও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। জাপা নির্বাচনে এলে দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক দলের মনোনয়ন চাইবেন। জাতীয়পার্টি নির্বাচনে এলে বিএনপির প্রার্থীকে জাপা প্রার্থীর সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 


জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনও দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণসংযোগ করছেন। দলের মনোনয়ন পেলে স্থানীয় সমস্যা সমাধানে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। জেলা ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক সভাপতি খন্দকার আহমেদুল হক সাতিল ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চান। ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে আওয়ামীলীগে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার উপর নির্যাতনের খর্গ নেমে আসে। এক পর্যায়ে ফ্যাসিস্টরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগের পতনের পর দেশে ফিরে এসে গণসংযোগে নেমেছেন।   


এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের জেলা আমির আহসান হাবীব মাসুদ। এনসিপি থেকে প্রার্থী হবেন দলের কেন্দ্রীয় সংগঠক আজাদ খান ভাসানী। তিনি মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি। তিনি মওলানা ভাসানীর ইমেজ কাজে লাগাতে ব্যস্ত। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা শাখার সভাপতি আকরাম আলী প্রার্থী হবেন। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মো. ছানোয়ার হোসেন সরকার।
 

Logo
Logo





Logo

আরো পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবু তাহের

© ২০১৪-২০২৫ টাঙ্গাইল দর্পণ, অনলাইন নিউজ পেপার ২৪/৭