মজলুম জনতার পক্ষে জালেমের বিরুদ্ধে মওলানাভাসানী

মজলুম জনতার পক্ষে জালেমের বিরুদ্ধে মওলানাভাসানী

মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী, অতিথি লেখক : ১৭ নভেম্বর ১৯৭৬ আফ্র এশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার মজলুম জনগনের নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার  স্বপ্ন দ্রোষ্ট্রা স্থপতি মওলানা আব্দুল হামীদ খান ভাসানীর ইহজগৎ ত্যাগ করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মজলুম এ নেতা কারো রক্ত চক্ষু দেখে ভয় করে জালেমের সাথে আপোষ করেছেন এমন নজির কেউ দেখাতে পারবেন না। আর তিনি এ কারনেই জালেমের রক্ত চুক্ষু উপেক্ষা করতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। তা হচ্ছে গাড়ী বাড়ী এয়ারকন্ডিশন কিংবা ক্ষমতার লোভ যে নেতার ছিল না। তিনিই মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। উচ্চবিলাসিতা না থাকায় তিনি একান্ত সময় প্রায় বলতেন সাড়ে তিন হাত মাটির কবরে মাটির উপর শুয়ার সুযোগ আল্লহ্ পাক দিলেই তার ঋন শোধ করা যাবে না। 

মানুষ হয়ে মানুষের উপর জুলুম চলবে আর কোন মানুষ তা নিরবে দর্শন করলে সে মানুষ না অমানুষ এ প্রশ্ন উঠে আসে । মজলুম এ জাতীয় নেতা কখনোই কাউকে খুশী করা বা অখুশী করার জন্য জালেমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতেন না। তিনি জালেমকে প্রতিবাদের মাধ্যমে জানাতেন মজলুমের আহাজারী আল্লাহ্ পাকের আরশ কেপে উঠলে জালেমের পতন ঘটে। তাই অত্যাচার অনচার ও অবিচার বন্ধে জালেম শাসকদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে প্রতিবাদ জানতে রাজপথে নেমে আসতেন। হুজুর বলতেন আল্লাহ্ পাকের সৃষ্টি শ্রেষ্ট মানবজাতিকে গোলাম বানিয়ে রাখতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর নির্ভরশীল যারা হয়ে পরে তাদের পতন অনিবার্য। ক্ষেত্র বিশেষ নমরুদ ও ফেরাউনের করুন পরিনতির কথা দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরতেন। 

তিনি ভারতকে কখন ভারত বলতেন না। বলতেন হিন্দুস্থান এর পিছনেও রয়েছে রহস্য? বাংলাদেশের পূর্ব, উত্তর, এবং পশ্চিমে হিন্দুস্থান, দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিন পূর্বে মায়ানমার। হিমালয় পর্বত মালা থেকে উৎপন্ন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর দুটি নদী গঙ্গা ও ব্রক্ষপুত্রের পানি এই দেশটির উপর দিয়ে বঙ্গোপসারে গিয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও লুসাই পাহাড় থেকে উপেন্ন বরাক নদীর পানিও বাংলাদেশের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পতিত হয়। বাংলাদেশের বড় বড় নদী যথা ( ভাটিতে পদ্মা) ব্রঙ্গপুত্র (ভাটিতে যমুনা) এবং বরাক (ভাটিতে মেঘনা) ছাড়াও ছোট অনেক নদী হিন্দুস্থান, নেপাল,চীন, মায়নমার ও ভূটান থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সাগেরে গিয়ে পড়েছে। তবে বাংলাদেশের সাথে কেবল মাত্র ভারত ও মায়নমারের আন্তজার্তিক সীমানা আছে। মায়ানমার থেকে আসা তিনটা নদী সহ হিন্দু স্থান থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এ সকল আন্তর্জাতিক নদ-নদীর সংখ্যা মোট ৫৭টি। ৭২ থেকে ৭৫ আওয়ামীলীগের শাসন আমলে গঙ্গা বাংলাদেশে নদীর উপর ফারাক্কা বাঁধ চালু করে হিন্দুস্থান। মজলুম জননেতা মওলনা ভাসানী ২০ মার্চ ১৯৭৬ ফারাক্কার পানি সম্যার সমধান না করলে হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষনা দেন। ১৭ এপ্রিল “ফারাক্কা মিছিলে যোগদানের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান। ১১ মে ফারাক্কা অভিমুখে মিছিলের জন্য ইন্দিরা গান্ধীর সাথে ফারাক্কার ব্যাপারে পত্রালাপ করেন। ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিল নিয়ে সীমান্তের দিকে অগ্রসর হন। ১৭ মে রাজশাহী সীমান্তের কানসাটে মিছিলের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।

বাংলাদেশকে পানি আগ্রাসনের মধ্যে দিয়ে করায়াত্ত করার যে চক্রান্ত হিন্দুস্থান শুরে করেছিল মজলুম এ জননেতা উপলব্দি করতে পেরেছিলন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকাল মজলুম জননেতাকে হিন্দুস্থানের আধিপত্যবাদ সরকার নজরবন্ধী করে রাখেন। ২২ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে মুক্তি দিলে বিনা পার্সপোটে ভুরিঙ্গীমারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। মজলুমএ জন নেতাকে হিন্দুস্থান সরকার দুটি কারনে নজর বন্ধি করেছিলেন। তার একটি কারন হচ্ছে পশ্চিম বাংলাবাসীকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশ গ্রহনের আহবান জানায়। দ্বিতীয় কারনটি ছিল তিনি রুশ-হিন্দুস্থান থেকে সরে এসে স্বাধীনতার যুদ্ধে চীনের সহযোগীতা নেওয়ার লক্ষ্যে যোগাযোগ শুরু করেন। যা হিন্দুস্থানের আধিপত্যবাদ সরকার বঝতে পেরে নজর বন্ধী করে রাখেন। মওলানা ভাসানী হিন্ধুস্থান সরকারের হিন্ধুস্থানের অসাধু ব্যবসায়ীদের সমলোচনা করলে তাকে সাপ্রদায়িক বলে আখ্যা দেওয়া হয়। 

এমন কি তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ও ক্ষমতাসীল অনেক নেতা এবং মস্কোপন্থী দলগুলোর দ্বারা তিনি সমলোচিত হন। মওলানা বলেন হিন্দুস্থান সরকার সমালোচনা করলেও হিন্দু স্থানের জনগনের সহিত আমাদের বন্ধুত্ব আশা রাখি চিরকাল অটুট থাকিবে।“তিনি স্পষ্ট ভাষাই বলেন” আমাদের সংগ্রাম সাম্প্রদায়িকতার সংগ্রাম নয়, শেষেকের বিরুদ্ধে শোষিত মানুষের সংগ্রাম শেষোক হিন্দু হউক, মুসলমান হউক, যে কোনো সম্প্রদায় বা গোত্রের হউক, তাহাদের বিরুদ্ধে যে কোনো বাধা-বিঘœ নির্যতন মাথা পতিয়া বরন করিতে প্রস্তত আছি।” ১৯৫৮-৬৯ সালে আইযুব বিরোধী গন-আন্দোলনের সূচনা হয়। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ঢাকায় সূচিত সে আন্দোলন পরবর্তীতে গন-অভ্যুথনে রুপনেয়। আপসহীন নেতা ছিলেন বলেই আইযুবখান আহ্ত গোল-টেবিল বৈঠক তিনি বর্জন করেন, কিন্তু আপসকামী নেতারা তাতে অংশগ্রহন করেন। পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম তাকে রেড মওলানা বা “লাল মওলানা” বলেন অভিহিত। এই লাল ছিল কমিউনিজমের প্রতিক। ১৯৭০ সালে মার্কিনসাময়িকী। নিউজ উইক তাঁকে প্রফেট অব ভায়োলেন্স বলে চিহ্নিত করে। ১৯৫০ সালে পূর্ব বাংলার বাঙলীদের যে স্বাধীনতার লক্ষ্যে বিদ্রোহ-বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়েছেন। তারই পরোক্ষ স্বীকৃতি রয়েছে এখানে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৭ সালেই মওলানা ভাসানী পাকিস্তানী শাসক গোষ্টির সাথে বসবাস সম্ভব নয় এবং পৃথক আভাসভূমির প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। 

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের মূলে ছিল মওলানা ভাসানীর গুরুত্ব পূর্ন ভূমিকা। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের পর দেশবাসীর কাছে দেওয়া ওয়াদা বেমালুম ভুলে গেলে বিশ্বাস ঘাতক আখ্যায়িত করে যুক্তফ্রন্টের সাথে সম্পূর্ক ছিন্ন করেন। তিনি আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আওয়ামীলীগে যখন জালেমদের আধিপত্যবিস্তার করতে থাকে তখন সেখানে থেকে পদত্যাগ ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্টিত করেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ ভাসানী। দলটির সভাপতি পদে আমৃত্যু অধিষ্টিত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি ন্যাপ, আতাউর রহমানের জাতীয় লীগ, লেঃ কমান্ডার মোয়াজেম হোসেনের লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটিসহ আরো কয়েকটি দলের সমন্বয়ে “সংগ্রাম পরিষদ” গঠন করেন এবং ১৯৭০ সালের নভেম্বরে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। সুদীর্ঘ রাজনৈতিকজীবনে তিনি কোনো শাসন ক্ষমতার অংশীদার হননি বা কোন মন্ত্রী প্রধান মন্ত্রী পদ গ্রহন করেননি। বাস্তবিকই তিনি ছিলিন কৃষক শ্রমিকের নয়মনি। বাংলাদেশে তথা বিশ্বে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি সৃষ্টিতে ও জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে মওলানা ভাসানী অবদান অতুলনীয়। ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসাবে সাধারন নির্বাচনে তিনি আসাম প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বহারা ও শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য তিনি ছিলেন ব্যবস্থাপক সভায় একক কন্ঠস্বর। ১৯৪৪ সালের মার্চের বাজেট অধিবেশনে অভিবাসীদের প্রশ্নে তুমুল বির্তক হয়। 

মওলানা ভসানী ব্যবস্থাপক সভায় বলেছেন, প্রদেশের জমি জরিপ করে অতিরিক্ত জমিঅগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজাতি, হিন্দু, মুসলিম ভূমিহীন কৃষক ও অভিবাসী বাঙালীদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হোক। ১৯৪৭ সালের ৩-৪ মার্চ মওলানা ভাসানী আসামের ধুবড়ীতে বাংলা-আসাম মুজাহিদ সম্মেলন, নও জোয়ান সম্মেল এবং ন্যাশনাল গার্ডস সম্মেলন অনুষ্টিত করেন। ৫ মার্চ ভাসানী মুসলিম লীগের সকল সংসদ সদস্য ও অন্যান্য নেতাকে আসমের সকল এলাকায় অহিংস ও অসাস্প্রদায়িক প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। লাইন প্রথাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে তিনি আসামের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যেতে জনগনের প্রতি আহবান জানান। আসামের অভিবাসীদের অনেকেই সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়। যারা ছাড়েনি তাদের তিনি ঘরবাড়ি না ছাড়ার নিদের্শদেন। কোনো রাজনৈতিক দলের শাসকের আক্রোশের শিকার হলে তিনি শাকের বিরুদ্ধে গর্জে উটতেন। তার প্রতিপক্ষ হলেও শাসকের আক্রোশ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত তিনি পাশেই থাকতেন বটগাছের ছায়ার মত। 

১৯৭১ সালে দুই বিহারী (উদ্রভাষী) কে যখন মুক্তি যোদ্ধারা হত্যা করতে চায় মাওলানা সাহেব তা দেখে বললেন, বিহারীরা (উদূভাষী) হিন্দুস্থানে সংখ্যালঘু, পাকিস্থান সংখ্যালঘু এবং বাংলাদেশেও সংখ্যালঘু। এদের তোমরা হত্যা নয় রক্ষা করো। এসব ঘটনা মওলানা সাহেবের অসাম্প্রদায়িক চারিত্রিক বৈশিষ্ট তাঁর সত্ব্যতার প্রমান করে। যা গান্ধীর জীবনে কোন দৃষ্টান্ত নাই। পশ্চিম বঙ্গের বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা হরেকৃষ্ণ কোঙার মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন বাংলাদেশর মানুষের সৌভাগ্য যে তারা ভাসানীর মতো একজন নেতা পেয়েছেন। মস্কোপন্থী অধ্যাপক মোজাফর আহম্মেদ এর এক প্রশ্নের জবাবে এ মজলুম জননেতা বলেছিলেন এখন যখন সারাদেশের লোক কইতেছে। এদফা একদাবি আইযুব তুই কবে যাবি। এই সময় আদর্শ ও নীতি বিরোধী দলে অনৈক্য দেখা দিলে আইযুবেরই লাভ হবে। এখন যত লোক ও দল উপদল আন্দোলনে যোগদেয় তত ভালো। হিন্দুস্থান আর মস্কোপন্থীরা লেবাস বদল করে জনগনের প্রত্যাশায় ছুড়িকাঘাত করছে। ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে জালেমের জুলুম দীর্ঘ্যস্থায়ী করে চলছে জাতীয়তাবাদী সেজে। 

এদের চিহ্নত করে দালাল হিসাবে সমাজে পরিচিত করার সময় এসেছে। দালালদের চিহ্নিত করে সামাজিক ভাবে বয়কট করতে পারলে মজলুম জনগনের যেমন আইযুব ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে প্রত্যাশা পুরন করেছিল। তেমনি এখন বিজয় তরান্বিত করা সম্ভব। সৈয়দ আবুল মকসুদ এর ভাসানী কাহিনী ৭৪ পাতার মাওলানারএকটা ভবিষৎদ্বানী” থেকে বিশেষ অংশ তুলে ধরছি। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা থেকে একজন রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক মওলানা ভাসানীর সঙ্গে দেখা করতে সন্তোষ যান। তিনি বলেন, এই সরকারের কোনো স্থির নীতিনেই। মার্কিন সাম্প্রাজ্যবাদীদের সঙ্গেও ভাব জমাতে চায়। রুশ সরকারের সঙ্গেও খাতির করতে চায়। আসলে এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। এক পর্যয়ে তিনি কমিউনিস্ট পাটির নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁরা সরকারকে অন্ধভাবে সহযোগিতা করায় সরকার আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একদর্শনার্থী বলেন, যেহেতু সরকার সমাজ্যতন্ত্র প্রতিষ্টার অঙ্গীকার করছে তাই সোভিয়েত রাশিয়ার বুদ্ধি পরামর্স তার দরকার। ধমকে ওঠেন মওলানা বলেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্টার কি বদ্ধিটা দেবে রুশ নেতারা। 

আমলাতন্ত্রের খপ্পরে পড়ে তাদের নিজেদের সমাজ্যতন্ত্রেই যায় যায় অবস্থা। সামনে আরো খারাপ নেতা দেশে আসতেছে। ক্ষৃদ্ধ কন্ঠে অনেকক্ষন বক্তৃতার পর তিনি এক অমোখ ভবিষ্যদ্বানী করেন। বলেন, তোমরা জানিয়া রাখ, আমি বাঁচা থাকি বা না থাকি, থাকব তো না-ই, আগামী পনের ষোল বছরের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙ্গিয়া যাইবে। সেখানে অনেক গুলো রাষ্ট্র হবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের আয়ু আর বড়জোর পনের ষোল বছর। সেদিন মওলানার এই ভবিষৎবানীকে অতিশায়াক্তি মনে করে ছিলেন ¯্রােতারা। তাঁর এই ভবিষৎদ্বানী একশভাগ সত্যি প্রমানিত হয়েছে। একই গ্রন্তের ৪৭ পাতায় সততার জন্য জিয়াকে সমর্থন শিরো নামে লেখাটি এরকম অসুস্থ মওলানা ভাসানীকে হাসপাতালে দেখতে যান তমদ্দুল মজিলিশের অধ্যাপক আব্দুল গফুর সহ কেউ কেউ। তখন জিয়াউর রহমানকে প্রকাশ্যেই সমর্থন দিচ্ছিলেন ভাসানি। সেদিকে তাঁর দৃষ্টি আর্কষন করে অধ্যাপক গফুর বলেন। 

আপনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা। সেই আওয়ামী লীগ ছিল ক্ষমতায়। প্রকাশ্যে জনসভায় আপনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের বলেছেন, দুনীতি করলে জনগনের জন্য কাজনা করলে তোমাদের পিঠে চাবুক মারা হবে। আপনার নিজের দলের নেতাদেরও এমন কঠোর সমালোচনা, আর আজ একজন সামরিক শাসককে আপনি সমর্থন দিচ্ছেন? জিয়ার প্রতি কেন আপনার এতো দুর্বলতা? মওলানা বলেলেন: আব্দুল গফুর আমি তোমার বাবার বয়সী। আমি আমার জীবনে তোমার চেয়ে বেশি সরকার ও নেতাদের দেখেছি। ব্রিটিশ আমল দেখেছি, পাকিস্তান আমল দেখেছি, বাংলাদেশ আমলেও দেখেছি। তুমি আমাকে একটা এক্সাযামপল দেখাও, কোন রাজনৈতিক নেতা কম বেশি দূনীতি করে নাইবা দূনিতীর প্রশ্রয় দেয় নাই এবং কোন নেতা স্বজন প্রীতিক করে নাই। অধ্যাপক গফুর চুপ করে রইলেন। মওলানা বললেন: এখন পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত দূনীতির কোনো প্রমান পাওয়া যায় নাই। কোনো রকম স্বজনপ্রীতি ও তাঁর মধ্যে নাই। তাঁর আত্বীয়স্বজনকে কেউ চেনে না। তাঁদেরকে সে কোনো সযোগ সুবিধা দেয় না। ইন্ডিয়ন সাব-কন্টিনেন্টে এ ধরনের শাসককে মানুষ পচ্ছন্দ করে। একজন সৎশাসকের তো প্রশংসাই প্রাপ্য। দেখা যাক কিছুদিন, জনগনের জন্য কী করে। 

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ন্যুনতম ঐক্য নেই। আতœশুদ্ধির চেষ্টা নাই। দেখাযাক আগামী নির্বাচনে কারা আসে। আর সেজন্যই শহীদ জিয়ার বিএনপির ভীতরে স্বার্থল্বেষী মহল থাকলেও বিএনপি আজও দেশের সর্ববৃহত্তম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। আর সা¤্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের তাবেদার মহলের কাছে জিয়া পরিবার এবং বিএনপি আতংঙ্ক? একই বইয়ের নামাজ ও মানুষকে ভালবাসা শিরোনামে লেখার এক অংশে শহীদ আসাদ সম্পূর্কে মওলানা ভাসানী বলেন আসাদ বামপন্থী রাজনীতি করলেও ব্যক্তিগত জীবন ছিলেন বিশ্বাসী এবং ধর্ম পালন করতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়তেন। মওলানো নিজেও ছিলেন র্ধমপরায়ন। কিন্তু আসাদের সংগ্রামী জীবনের মূল্যই ছিল তাঁর কাছে বেশি। কারো ব্যক্তিগত বিস্বাস নিয়ে তিনি প্রশ্ন করতেন না। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামদি খান ভাসানী ছিলেন মুকুটহীন রাজনৈতিক সম্্রাট। বিএনপির চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন তিনি ছিলেন নেতাদের নেতা। 

বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহা সচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য কারারুদ্ধ তরিকুল ইসলাম স্বাধীনতা পরবর্তী ন্যাপ এর সাংগঠনিক সচিব, আব্দুল্লা আল নোমান সহ অসংখ্য বিএনপির নেতা মওলানা ভাসানীর স্বানিধ্য পেয়েছেন। মজলুমের পক্ষে মুক্তির জন্য জালেমের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হয়েছেন। আজকের এ বিপর্যয় রোধে মজলুম জননেতার দিক নিদের্শনা অনুস্মরন করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দুঃশাসনের অবসনে ঘটাতে হবে। ১৯৭৪ সালে হুকমতেরাব্বানিয়া সমিতি প্রতিষ্টার পাশা পাশি সন্তোসে গৃহবন্দী অবস্থায় থাকেন। মজলুম জননেতার ইত্তেফাক কৌশলে মালিকানা পরিবর্তন করে নেয়। তারপর ২২ জানুয়ারী ১৯৭২ স্বাধীন দেশে নিশ্চিন্তে নিস্বাষ নিতে বাঁধা দান করায় একই বছর ২৫ ফেব্রয়ারী ‘হক কথা’ প্রকাশনা শুরু করেন। কিন্তু বর্তমান সরকারে মতই তখনকার সরকার হক কথা শুনতে বা দেখতে ভয় পেতে থাকে। 

২২ সেপ্টম্বর ১৯৭২ সরকারী নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি শুধু মজলুম জনগনের নেতা ছিলেন তাই নয় একজন আত্যাধিক নেতাও ছিলেন। আর এ কারনেই তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মজলুম মানুষের অধিকার প্রতিষ্টায় ছিলেন সোচ্চার। আজ তার ৩৮ তম মৃত্যবাষির্কীতে মওলানাকে পুঁজি করে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারের পরিবর্তে মজলুম জনতাকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সফল হলে। আল্লাহ্ পাকের সাহায্য নেমে আসবে। মুকুট হীন রাজনৈতিক সম্্রাটকে নিয়ে লেখারমত দুঃসাহস দেখানো ক্ষামার অযোগ্য। তারপরও আমি ক্ষমা চাই। তবে মজলুম এ জননেতাকে বিএনপি অনুস্মরন করলে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান রাজপথেই আসতে হবে।