আজ নাজিরপুর গণহত্যা দিবস

আজ নাজিরপুর গণহত্যা দিবস

আজ নাজিরপুর গণহত্যা দিবস

১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাবনা সদর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়

পাবনা প্রতিনিধি

আজ ১ ডিসেম্বর পাবনার নাজিরপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাবনা সদর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন ৬২ জন মুক্তিযোদ্ধা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় অসংখ্য ঘরবাড়ি। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও নাজিরপুর গ্রামে কোনো স্মৃতিচিহ্ন নির্মিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এখানকার মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী।

পাবনা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামটি মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল জেলার পশ্চিমাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের মূল ঘাঁটি। এখান থেকেই পরিচালিত হতো পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা, রণকৌশল। পাক বাহিনীর কাছেও নাজিরপুর ছিল আতঙ্কের নাম। ৬২ জনকে ধরে নিয়ে দুটি খালে নৃশংসভাবে হত্যা করে পাক বাহিনী। আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় দুই শতাধিক বাড়িঘরে।

এদিন যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন তাঁরা হলেন - শহীদ জোনাব আলী সরদার, লোকমান সরদার, রুব্বেল সরদার, মোয়াজ্জেম হোসেন, চাঁদ আলী প্রাং (পঁচা), পাঞ্জাব আলী, খইরুদ্দিন প্রাং, কুলমদ্দিন প্রাং, আব্বাস আলী, খোরশেদ আলী, খইরুদ্দিন প্রাং, মালু প্রাং, আব্বাস আলী, খোরশেদ আলী, সাকুব্বর আলী সরকার, আমিন উদ্দিন, ময়েজ উদ্দিন, ডা. ছামেদ প্রাং, আনতাজ প্রাং, ইজ্জত প্রাং, বান্ডুল প্রাং, আসলাম প্রাং, টিপু প্রাং, আজগর প্রাং, কুশাই প্রাং, আহম্মদ আলী প্রাং, ছোহরাব আলী প্রাং এবং হিরাই প্রাং (সহোদর তিন ভাই), ইউনুস আলী প্রাং, রাংতা, মোক্তার হোসেন প্রাং, মিরজান, আজারি প্রাং, মোতালেব সরদার, আজাহার প্রাং, নাজিরপুর বিশ্বাস পাড়ার রহমত বিশ্বাস, শাহজাহান আলী, সেকেন্দার আলী, সলিম প্রাং, মজিবর প্রাং, জবাঠসা (দাপুনিয়া ইউনিয়নের দূর্গারামপুর গ্রামের বাসিন্দা), আকাই প্রাং এবং মোসা প্রাং। অবশিষ্ট ২৬ জনের নাম জানা সম্ভব হয়নি। 

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নাজিরপুর গ্রামের এই দিনে যাঁরা গণহত্যায় নিহত হয়েছিলেন তাঁদের পরিবারকে অদ্যাবধি শহীদ পরিবার হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, মুক্তিযোদ্ধারা নভেম্বরে নাজিরপুর ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতে অবস্থান নিতে থাকে। তাদের গেরিলা আক্রমণে কয়েকজন হানাদার নিহত হয়। এ অবস্থায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক সঞ্চারিত হতে থাকে। তাই পাক সেনারা পার্শ্ববর্তী চর শানিরদিয়াড়, তিনগাছা বাগান, শ্রীকৃষ্ণপুরসহ আশপাশে ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্প থেকে তারা দলবল নিয়ে ঘরে ঘরে অনুপ্রবেশ করে সন্দেহজনকভাবে তরুন-যুবকদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের হত্যা করে গলা কেটে। এ যুদ্ধে মাস্টার শাহেদ ও আফতাব নামের দুই মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা ২৭ নভেম্বর কৃষ্ণপুর ও ১০ নভেম্বর তিনগাছা ক্যাম্পে গেরিলা হামলা চালিয়ে পাকসেনাদের অবস্থান লন্ডভন্ড করে দেয়। এ দুটি হামলায় প্রতিশোধ নিতেই নাজিরপুরে গণহত্যা চালানো হয়। ৬২ জনকে ধরে নিয়ে গিয়ে দুটি খালে নৃশংসভাবে হত্যা করে তারা। আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় প্রায় দুই শতাধিক বাড়িঘরে। সেদিনের কথা মনে করে আজও শিউরে ওঠেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সহ স্বজন হারানো মানুষগুলো।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবুল বাতেন জানান, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হয়ে গেলো। অথচ আজ পর্যন্ত নাজিরপুর গ্রামের স্মৃতিগুলো বিশেষ করে গণকবর বা বধ্যভূমি চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করা হয়নি। অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে সেগুলো। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি এখানে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ দ্রুত নির্মাণ করা হোক। প্রতি বছর অনেকটা নিরবে কেটে যায় নাজিরপুর গণহত্যা দিবস। নাজিরপুরে গ্রামে অতিদ্রুত স্মৃতি সৌধ নির্মাণ, শহীদদের তালিকা প্রস্তুতসহ শহীদদের কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেবে সরকার-এমনটাই প্রত্যাশা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী মানুষের।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/97415/আজ-নাজিরপুর-গণহত্যা-দিবস