পাখির গতিপথ জানতে পাখির পিঠেই স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন

পাখির গতিপথ জানতে পাখির পিঠেই স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন

প্রযুক্তি ডেক্স : বিশ্বে প্রথমবারের মতো দেশীয় গাঙচষার গতিবিধি, আচরণ, অবস্থান নিশ্চিত করতে পাখিটির পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তরুণ পাখি গবেষক সামিউলের নেতৃত্বে একটি দেশী-বিদেশি পাখি বিশেষজ্ঞ দল নোয়াখালির নিঝুম দ্বীপ, দমার চর ও ভোলার চর শাহাজালাল, কুকরি-মুকরিসহ উপকূলে বেশ কয়টি চরে এ স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন কাজ শুরু করে। ১০ ফেব্রুয়ারি শেষদিন পর্যন্ত ২টি দেশীয় গাঙচষার পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন করতে সক্ষম হয় এ বিশেষজ্ঞ দলটি।

১১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে ভোলার খেয়াঘাটে তরুণ এ বন্যপ্রাণী ও পাখি গবেষক সামিউল মোহসেনিন সাংবাদিকদের জানান, দেশীয় গাঙচষা পাখিটি নিয়ে বিশ্বে খুব কম গবেষণা হয়েছে। পৃথিবিতে এ পাখিটির সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি হবে না। তার মধ্যে বাংলাদেশের ভোলা ও নেয়াখালী জেলার নদী এলাকার নিঝুম দ্বীপ, দমার চর, চর শাহাজালাল ও চর কুকরি মুকরিতে প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ’ দেশীয় গাঙচষার দেখা মিলে। এক সাথে এতগুলো দেশীয় গাঙচষার দেখা মিলেনা বিশ্বের কোথাও।

সামিউল আরো জানান, বহুদিন ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক পাখি গবেষক দেশীয় গাঙচষার গতিপথ জানার চেষ্টা করে আসছিলো। অবশেষে তিনি সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সফল ভাবে ২টি দেশীয় গাঙচষার পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন করতে সক্ষম হন। ইতিমধ্যে সেই পাখি দুটি স্যাটেলাইট সিগন্যালের মাধ্যমে প্রয়োজনীয়ে তথ্য দেয়া শুরু করেছে। এক একটি স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটারে মূল্য ৬ লাখ টাকা বলে জানান তিনি। আমেরিকার “নর্থ স্টার” নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি ৫ গ্রাম ওজনের স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটারগুলো বাংলাদেশ বন বিভাগের এস.আর.সি.ডব্লিউ.পি (ঝজঈডচ) প্রকল্পের অর্থায়নে সরবরাহ ও নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) বাস্তবায়ন করে।

তরুণ এ পাখি গবেষক জানান, বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে ২ দিনের প্রচেষ্টায় তারা ৫টি দেশীয় গাঙচষা ধরতে সক্ষম হন। তার মধ্যে ওজন কম থাকা ও শারিরিকভাবে দূর্বল থাকার কারণে ৩টি কে ছেড়ে দিয়ে ২৫১ এবং ২৩০ গ্রাম ওজনের ২টি দেশীয় গাঙচষার পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন করেন। এসময় তিনি জানান, গত ২ বছর চেষ্টা করে পাখিটি হস্তগত করতে পারেননি তিনি। কিন্তু এ বছর তার হাতে এসে ধরা দেয় ৫টি দেশীয় গাঙচষা।

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পাখি পর্যবেক্ষক ইনাম আল হক জানান, পাখির গতিবিধি ও অবস্থান জানতে বিশ্বে প্রথম ১৯৮৫ সালে ১৯ মার্চ আমেরিকায় একদল পাখি গবেষক পালক বিহীন একটি ঈগলের পিঠে ১৭০ গ্রাম ওজনের একটি স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন করে। এরপর ২০০৮ সালের ৯ আগস্ট জার্মানের একদল পাখি গবেষক প্রথমবারের মত সৌরশক্তি চালিত সবচেয়ে কম ৫ গ্রাম ওজনের একটি স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার “ইউরেশীয় টিকাশাহিন” পাখির পিঠে সফল ভাবে স্থাপন করে। এর পর থেকে পাখি নিয়ে গবেষণার কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়। ২০১০ সালে বাংলাদেশের হাকালুকি হাওরে প্রথম ১৬টি বিভিন্ন পাখির পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয়েছিলো। তবে তরুণ পাখি গবেষক সামিউল এবছর প্রথম দেশীয় গাঙচষার পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন করে। বিশ্বে এটাই প্রথম কোন পাখি গবেষক এ পাখিটির পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার স্থাপন করেছে।

বন্যপ্রানী ও পাখি গবেষক সামিউল মোহসেনিন-এর নেতৃত্বে গবেষক দলটিতে আরো ছিলেন- ব্রিটিশ পাখি বিশেষজ্ঞ বিল উইলিয়াম জোন্স, স্টিফেন স্যামওরথ, টোন, শিবলী সাদিক, ওমর শাহাদাত, ইসরাত জাহান, জেনিন আজমিরি, হুমায়ারা, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, হাসান, তাইজুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম।-বাসস