দায়িত্বশীলদের আশ্বাসে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শেয়ারবাজার

দায়িত্বশীলদের আশ্বাসে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শেয়ারবাজার

অর্থনীতি ডেক্স : দীর্ঘ দিন ধরেই দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিভিন্ন নিয়মনীতি আর একের পর এক দরপতনের কারণে আস্থাহীনতায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও কোনোভাবেই দীর্ঘ মেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না শেয়ারবাজার। তবে এবার দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীদের ইতিবাচক বক্তব্যে টানা দরপতনের পর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শেয়ারবাজার।

বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, শেয়ারবাজার স্পর্শকাতর বাজার তাই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের সংবাদই বাজারকে প্রভাবিত করে। ইতিবাচক বক্তব্য বাজারের জন্য ভালো তবে সেটা গ্রহণয়োগ্য বক্তব্য হতে হবে। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সবসময় ইতিবাচক বক্তব্য আর আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ ও উদ্যোগগুলো সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বাজার দীর্ঘ মেয়াদি স্থিতিশীলতায় ফিরবে মনে করছে তারা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন জাগো নিউজকে বলেন, দায়িত্বশীলদের কাছে বিনিয়োগকারীরা সবসময় ভালো কিছু আশা করে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইতিবাচক বক্তব্যে আসলে বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পায়। আবার নেতিবাচক কথা শুনলে হতাশও হয়।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক্সপোজার লিমিটের সময় বাড়ানোর খবরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। তারা সক্রিয় হচ্ছেন। ফলে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাজারকে ইতিবাচক দেখতে চান। তার নির্দেশনাগুলোও ইতিবাচক। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শেয়ারবাজারের প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেছেন। তাহলেই বাজারে দীর্ঘ মেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে রোববার ভারত ও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেয়ারবাজারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকারের সবরকম সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। আর এ খবরে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ডিএসইতে কারিগরি ত্রুটির কারণে লেনদেন দেড় ঘণ্টা বিলম্ব হওয়ার পরও দেশের উভয় শেয়ারবাজারে সূচকে চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা গেছে।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে জানান, আগে শেয়ার বাজার নিয়ে মন্ত্রীরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। এখন তা করার সুযোগ নেই, এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজাকে গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যদি শেয়ারবাজার নিয়ে পজেটিভ বক্তব্য দেন তাহলে বিনিয়োগকারীদের মনে আস্থা ফিরে পায়, তারা সাহস পায়। তখন বাজার ইতিবাচক হয়।

তিনি আরও বলেন, আসলে বিনিয়োগকারীরা আশ্বাস চায়। সরকার সরাসারি বিনিয়োগ না করলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরাতে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে গত মাস দুয়েক ধরেই বেশির ভাগ সময় পতন ধারা অব্যাহত আছে। পতনের  কারণগুলোর মধ্যে সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংকে একক গ্রাহক ঋণসীমা (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) সমন্বয় করা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে শেয়ারবাজার কারসাজিদের বিচারের একাধিক রায় উল্লেখযোগ্য।

এদিকে, শেয়ারবাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানায়।

এর পরপরই শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে গত ৯ নভেম্বর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়নোর প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে বিএসইসি। পরবর্তীতে গত ১৫ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গণমাধ্যমকে জানান, শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও দুই বছর বাড়ানো হবে। এজন্য শিগগিরই ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হবে। সংসদের মাধ্যমে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের লক্ষ্যে দ্রুত তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য তোলা হবেও জানিয়েছেন তিনি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বেশকিছু দিন নেতিবাচক থাকায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর অনেক নিচে নেমে গেছে। তাই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনছেন। অর্থাৎ কিছুটা সমন্বয় হচ্ছে। তাছাড়াও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য ইতিবাচক বক্তব্য আসলে বাজারের বিনিয়োগকারীরা আস্থা পায়।

অর্থমন্ত্রী ব্যাংকে একক গ্রাহক ঋণসীমা (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছেন তা পজেটিভ। দুই বছর সময় বাড়ালে তা বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে। সব মিলিয়ে ভালো খবর বাজারকে চাঙ্গা করে বলে মনে করেন তিনি।