‘সাংবাদিকবান্ধব’ প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আলোকিত প্রেসক্লাব

‘সাংবাদিকবান্ধব’ প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আলোকিত প্রেসক্লাব

আব্বা বলতেন, যে গাছ বেশি ফল দেয়, সেই গাছেই মানুষ বেশি ঢিল ছোঁড়ে। আমার কাছে সাংবাদিকদের দাবি করতে হয় না, দাবি করার আগেই সব কিছু দিয়ে দিই। অথচ সাংবাদিকরাই আমার সমালোচনা বেশি করেন।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এর উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশ ও জাতির কল্যাণে বেশি কাজ করি, তাই সমালোচনা বেশি হয়। যারা কাজ করে না তাদের আবার কী সমালোচনা হবে? তবে সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে চেতনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাংবাদিকরা যেন সহযোগিতা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে ডিইউজে সভাপতি আলতাফ মাহমুদ তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবদার করে বলেন, ঢাকায় অনেক সাংবাদিকের আবাসনের ব্যবস্থা নেই, তারা ঢাকায় মেসে থেকে সাংবাদিকতা করেন। প্রয়োজনে পদ্মানদীর আশে-পাশে হলেও যেন প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়ে যান। এ কথা শুনে তখন মঞ্চে বসে মুচকি হাসছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদের কথার সূত্র ধরেই শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতার স্মৃতি রোমন্থন করে বেশি ফল দেওয়া গাছে বেশি ঢিল পড়ার গল্পের অবতারণা করেন।

এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় প্রধানমন্ত্রী প্রেসক্লাবে পৌঁছান। সেখানে তখন তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন আড়াই হাজার সাংবাদিক, একাধিক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সাংসদ, সাংস্কৃতিক ও চিকিৎসক নেতৃবৃন্দসহ সাড়ে তিন হাজার অতিথি। বিকেল থেকেই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিরা বার্ষিক ইফতার অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন।

‘সাংবাদিকবান্ধব’ প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেসক্লাব আলোকিত হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে তিনি টেবিলে ঘুরে ঘুরে সাংবাদিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, তার আমলে রেকর্ড সংখ্যক বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও কমিউনিটি রেডিওকে অনুমোদনের মধ্য দিয়ে অনেক সাংবাদিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ৮ম ওয়েজ বোর্ড ঘোষিত হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হবে।

তিনি তার শাসনামলের সাফল্যের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, তার সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দরিদ্রতার হার শতকরা ২২ দশমিক ৭ ভাগে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পরিকল্পনা ও নীতিবোধ নিয়ে দেশ পরিচালনা করছি। আমি বলেছিলাম বিদেশি সাহায্য ছাড়াই পদ্মাসেতু করবো। নিজেদের টাকাতেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছি। প্রবৃদ্ধির হার ৬ ভাগের উপরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। কথায় কথায় সাংবাদিকদের গ্রেফতারের আইন পরিবর্তন করেছি।

সাংবাদিক নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে ১০০ কোটি টাকার সিড মানি দাবি করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু চাওয়ার চরিত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। দেশে বর্তমানে তিন ডজন প্রাইভেট টেলিভিশন, ৩৫৩টি জাতীয়সহ ৭ শতাধিক দৈনিক পত্রিকা চলছে। সে সব প্রতিষ্ঠানের মালিক, সাংবাদিকরা যদি ১ টাকা করেও দেন তাতেও একটা ফান্ড তৈরি হবে। আমি দেখতে চাই সাংবাদিকরা কত টাকার প্রাথমিক ফান্ড তৈরি করেন। আমি চাওয়ার আগেই আগেও দিয়েছি, এখনও দেব।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশ বিদেশে মানুষ যেন নির্মাণশৈলী দেখে জাতীয় প্রেসক্লাবের সুনাম করেন সেই ধরনের আধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করা হবে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য পৃথক ওয়েজবোর্ড ঘোষণা ও সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন, আমার সরকারের আমলে অনেক সাংবাদিককে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই সব প্লট মালিকরা প্লট কী করেছেন? এখন মনে হচ্ছে প্লটের বদলে সব জমি এক দাগে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট দিলেই ভালো হতো।

ডিইউজে মহাসচিব কুদ্দুস আফ্রাদ জাগো নিউজকে জানান, প্রতি বছর রমজান মাসে বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্যোগে এ ইফতার অনুষ্ঠিত হয়। এবার আড়াই হাজার সাংবাদিক ও আমন্ত্রিত অতিথিসহ সাড়ে তিন হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ইফতার অনুষ্ঠানটি এক ধরনের উৎসবে পরিণত হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে ও ডিইউজের মহাসচিব কুদ্দুস আফ্রাদের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি শফিকুর রহমান, বিএফইউজে মহাসচিব আবদুল জলিল ভুঁইয়া, ডিইউজে মহাসচিব আলতাফ মাহমুদ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী।

এছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, তথ্যসচিব মোরতোজা আহমেদ, বাসস ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আলমগীর হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার, স্বপন কুমার সাহা, শাহজাহান সর্দার, নঈম নিজাম, মঞ্জুরুল আলম, জাকারিয়া কাজল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা.কামরুল হাসান, বিএমএর সাবেক মহসচিব অধ্যাপক ডা.শারফুদ্দিন আহমেদ, ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, ডিইউজের সাবেক নেতা শাবান মাহমুদ, আবু জাফর সূর্য, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন প্রমুখ।

ইফতারের আগে মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ইমদাদুল হক। প্রধানমন্ত্রী প্রেসক্লাবে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। রাত আনুমানিক পৌনে ৮টায় প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।