সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২
প্রকাশিত: ২০২৫-০৮-২৮ ১৯:৩৩:৪৯
টাঙ্গাইল দর্পণ অনলাইন ডেস্ক:
বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সাহেবেরচর গ্রামে বাবার নির্দেশে তার সামনে সেজ ভাইয়ের দুই চোখ উৎপাটনের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ ২৮ আগস্ট, ২০২৫ বৃহস্পতিবার বিকেলে তথ্যের সত্যত্যা নিশ্চিত করে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় আহতের বাবাসহ মোট আটজনকে আসামি করে মামলা দায়েরের পর পরই পুলিশের একাধিক টিম অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে নামে। তিনি আরও জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে উজিরপুর উপজেলার মশাং গ্রামের শশুর বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা মামলার আসামি স্বপন বেপারীকে গ্রেপ্তার করেছে মুলাদী থানা পুলিশ। মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।
মামলা দায়েরের মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে এক আসামিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে দাবি করে জেলা পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত স্বপন বেপারীকে ওইদিন (২৮ আগস্ট) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, পারিবারিক বিরোধ ও গচ্ছিত টাকা এবং স্বর্ণলংকার নিয়ে বিরোধের জেরধরে ওই গ্রামের আরশেদ আলী বেপারীর নির্দেশে গত ২২ আগস্ট দিবাগত মধ্যরাতে তার মেজো ছেলে রোকন বেপারী, ছোট ছেলে স্বপন বেপারী, রোকনের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম, মেয়ে সুবর্ণা আক্তারসহ অন্যান্যরা সেজ ছেলে সিরাজুল ইসলাম রিপন বেপারীকে (৫০) বেধম মারধর করে তার (রিপন) দুই চোখ উপরে ফেলে।
বর্তমানে গুরুত্বর আহত রিপন বেপারী রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় গত ২৫ আগস্ট রিপনের স্ত্রী নুরজাহান বেগম বাদি হয়ে আটজনকে আসামি করে বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিচারক মামলাটি গ্রহণ করে মুলাদী থানাকে এজাহারের নির্দেশ দেন।
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। ওই ভিডিওর সূত্রধরে আহত রিপন বেপারীর ছেলে শাহিন বেপারী বলেন-ভিডিওতে রোকন বেপারী আঙুল দিয়ে রিপন বেপারীর বাম চোখ তুলছে। এ সময় স্বপন বেপারী রিপনের পা ও শরীর চেঁপে ধরে আছে। ঘটনার সময় রোকন বেপারীর স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগমের হাতে একটি উৎপাটিত চোখ দেখা যায়। একই সময় রোকনের মেয়ে সুবর্না আক্তার রিপনের মুখমন্ডলে মারধর করছে। ঘটনাস্থলে রিপনের বাবা আরশেদ আলী বেপারী উপস্থিত ছিলেন এবং উৎপাটিত চোখ দুটি তার হাতে দেওয়া হয়।
আহত রিপন বেপারীর ছেলে শাহিন বেপারী আরও বলেন, তার মেজো চাচা রোকন বেপারীর কাছে টাকা ও স্বর্ণালংকার গচ্ছিত রেখেছিলো তার বাবা রিপন। এছাড়া বাড়ির জমিজমা নিয়েও চাচাদের সাথে তাদের বিরোধ ছিল। ওই বিরোধ মেটাতে চাচারা তার বাবাকে সংবাদ দিয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে ডেকে নেন। এরপর রাতে তারা পরিকল্পিতভাবে রিপন বেপারীর দুই চোখ তুলে নিয়েছেন।
মুলাদী থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক টিক অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রিপন তার পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে চুরি, ছিনতাই ও প্রতারণা করে টাকা ও স্বর্ণালংকার সংগ্রহ করতেন। অবৈধপথে আয় করা সেসব টাকা ও স্বর্ণালংকার তার মেজ ভাই রোকন বেপারীর কাছে গচ্ছিত রাখতেন। গচ্ছিত প্রায় ৩০ লাখ টাকা ও ২০ ভরি স্বর্ণালংকার ফেরত চাওয়ার নিয়েই তাদের ভাইদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এনিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ বৈঠকও হয়েছে।
তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে আহত রিপনের বড় ভাই খোকন বেপারী বলেন, রিপন ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে মেজ ভাই রোকনের কাছে গচ্ছিত টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত চায়। কিন্তু রোকন টাকা দিতে অস্বীকার করলে দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রাত এগারোটার দিকে বাবা আরশেদ বেপারী ক্ষিপ্ত হয়ে রিপনকে মারধর করে দুই চোখ তুলে ফেলার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে বাবার নির্দেশ পেয়েই রোকন, স্বপন ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মিলে রিপনকে মারধর করে তার দুই চোখ সমূলে উৎপাটন করে বাবার হাতে তুলে দেয়।
থানা পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী রিপনের বিরুদ্ধে ঢাকার রমনা থানায় চুরি-ছিনতাইয়ের আটটি মামলা এবং মুলাদী থানায় হত্যা মামলাসহ অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে।