ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে সিলেটের তিন শিক্ষার্থীর অনন্য উদ্ভাবন

ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে সিলেটের তিন শিক্ষার্থীর অনন্য উদ্ভাবন

ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে সিলেটের তিন শিক্ষার্থীর অনন্য উদ্ভাবন

ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনায় সড়কপথের পাশাপাশি যাত্রাপথের এক মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে রেলওয়ে। যান্ত্রিক ত্রুটি, রেলওয়ের সংস্কার না হওয়াসহ নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে স্বাচ্ছন্দের ট্রেন ভ্রমণ। ফলে বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা। আর এতে হতাহত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

সিলেট প্রতিনিধি

ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনায় সড়কপথের পাশাপাশি যাত্রাপথের এক মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে রেলওয়ে। যান্ত্রিক ত্রুটি, রেলওয়ের সংস্কার না হওয়াসহ নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে স্বাচ্ছন্দের ট্রেন ভ্রমণ। ফলে বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা। আর এতে হতাহত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির কয়েকজন ছাত্র ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে উদ্ভাবন করেছে ‘রেল প্রটেকশন সিস্টেম’। দুর্ঘটনার মূল তিনটি কারণকে গুরুত্ব দিয়ে এ ডিভাইসটি উদ্ভাবন করে তারা।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এবং গেলো বছরে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ট্রেন দুর্ঘটনায় যখন মানুষের ভেতরে আতঙ্ক তখন থেকেই তাদের স্বপ্নের সূচনা। ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে উদ্ভাবনী চিন্তা মাথায় নিয়ে তখন থেকেই কাজ শুরু করেন লিডিং ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ৩ ছাত্র তারেক আনোয়ার শিকদার, ফাহাদ বিন আইয়ুব ও শেখ ফয়সাল। মাত্র ৪ মাসেই আসে উদ্ভাবনের সফলতা। ট্রেন দুর্ঘটনা পুরোপুরি রোধে তৈরি করে ফেলেন একটি পূর্ণাঙ্গ 'রেল প্রটেকশন সিস্টেম'।

দুর্ঘটনার প্রধান তিনটি কারণ চিহ্নিত করে তার প্রতিকার হিসেবে ‘রেল প্রটেকশন সিস্টেম’ ডিভাইসটি উদ্ভাবন করেন তারা। সে সিস্টেম দ্বারা রেল ক্রসিংয়ের সব দুর্ঘটনা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে তরুণ উদ্ভাবক ফাহাদ বিন আইয়ুব জানান- পাতের কম্পনের মাধ্যমে জানা যাবে ট্রেন ক্রসিং ওভার থেকে কতদূরে আছে এবং যখনই ট্রেন ক্রসিং ওভারের কাছাকাছি চলে আসবে অটোমেটিক্যালি সেটা ক্রসিং ওভারের গেইট অফ করে দিবে। এতে রেল ক্রসিংয়ের আর দুর্ঘটনার সুযোগ থাকবে না।

শিক্ষার্থীরা জানান- গত বছরের শেষের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে বহু হতাহতের পর লিডিং ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের গবেষণায় যোগ হয় মুখোমুখি সংঘর্ষের বিষয়টি। যে কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষ রোধেও সক্ষমতা রয়েছে তাদের তৈরি এই 'রেল প্রটেকশন সিস্টেমে।'

বিষয়টি নিয়ে উদ্ভাবক শেখ ফয়সাল বলেন- ট্রেনের সাথে ট্রেনের সংঘর্ষ প্রতিহত করার জন্য এমন একটি ডিভাইস তৈরী করেছি যেটা প্রত্যেকটি ট্রেনের সাথে লাগানো থাকবে এবং সেটা তার পথ স্ক্যান করবে, যার মাধ্যমে ট্রেনের চালক বুঝতে পারবে তার যাত্রাপথে কোনো বাধা আছে কিনা। যদি কোনো বাধা থাকে তাহলে ট্রেন চালক তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে পারবে। এভাবে উদ্ভাবিত 'রেল প্রটেকশন সিস্টেম' দ্বারা ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব।

বাংলাদেশে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই ঘটে রেল লাইনে ত্রুটির কারণে। এমন দুর্ঘটনার বিষয়ে অনেক গবেষণার পর তিন শিক্ষার্থী সফল হয়েছেন। তাদের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি জানিয়ে দেবে রেল লাইনে ত্রুটি আছে কিনা তার পূর্বাভাস।

উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি নিয়ে উদ্ভাবক তারেক আনোয়ার শিকদার বলেন- রেলপথের নিরাপত্তার জন্য এমন একটি রেল-কার তৈরী করার উদ্যোগ নিয়েছি, যেটা দ্বারা রেললাইনে কোনো সমস্যা বা ত্রুটি আছে কিনা তা জানিয়ে দিবে এবং যে জায়গায় সমস্যা আছে সেটার লোকেশন পাঠিয়ে দিবে রেলস্টেশন মনিটরের কাছে। যাতে করে সেই জায়গার সমস্যা দূর করানো যায়।

তিনি বলেন- যদি কোনো কারণে ট্রেনটি তার রেলপথে দুর্ঘটনার সম্মুখিন হয় তাহলে যে জায়গায় ট্রেনটি দুর্ঘটনার সম্মুখিন হয়েছে সেই জায়গার লোকেশন ট্রেন স্টেশনে সাথে সাথে চলে যাবে যাতে করে সমস্যা থেকে তাড়াতাড়ি উদ্ধার হওয়া যায় ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।

এছাড়া ট্রেনের ইঞ্জিন শক্তি কম খরচ হওয়ার জন্য ট্রেনটিকে নবায়নযোগ্য ট্রেন হিসেবে বানানোর প্রস্তাব উত্থান করা হয়েছে বলে তিনি জানান।   উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে এই ৩ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন যখন ডানা মেলতে শুরু করে তখন তাদের পাঁশে এসে দাঁড়ান লিডিং ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. রুমেল এম.এস রহমান পীর।  তাঁর তত্ত্বাবধানে চলে স্বপ্নবাজ এই তরুণদের গবেষণা।

উদ্ভাবনের শুরু শেষ এবং পরিকল্পনা নিয়ে ড. রুমেল এম.এস রহমান পীর বলেন- আমাদের টার্গেটটা হচ্ছে আমরা কোনো ধরণের দুর্ঘটনা ছাড়াই রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করবো। ছাত্রদের এই দিকনির্দেশনা দেয়াটা ছিল শিক্ষক হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।

তিনি বলেন- লিডিং ইউনিভার্সিটির স্বপ্নবাজ তিন তরুণের স্বপ্ন পূরণ হবে তখনই, যখন এই প্রযুক্তির দ্বারা উপকৃত হবে দেশের মানুষ। তবে তার জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।

আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই উদ্ভাবনটি ঢাল হয়ে দাঁড়াবে যে কোনো ট্রেন দুর্ঘটনার সামনে; এমনটাই জানালেন তরুণ তিন উদ্ভাবক আনোয়ার শিকদার, ফাহাদ বিন আইয়ুব ও শেখ ফয়সাল।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/education/103593/ট্রেন-দুর্ঘটনা-রোধে-সিলেটের-তিন-শিক্ষার্থীর-অনন্য-উদ্ভাবন