‘প্রতি মুহূর্তকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করছি’

‘প্রতি মুহূর্তকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করছি’

‘প্রতি মুহূর্তকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করছি’

আসাদ আল মাহমুদ

মো. তাজুল ইসলাম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ৭ জানুয়ারি শপথ নেন। রোববার তার কার্যালয়ে সাফল‌্য, ব‌্যর্থতা, বর্তমান রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির সচিবালয় প্রতিবেদক আসাদ আল মাহমুদ।

রাইজিংবিডি: মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে কী ধরনের চ‌্যালেঞ্জ দেখছেন?

এলজিআরডি মন্ত্রী: দায়িত্ব নেয়ার দিন থেকেই প্রতি মুহূর্তকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করেছি। দিনরাত কাজ করে সরকারের বেশকিছু উন্নয়নকে দৃশ্যমান করতে সক্ষম হয়েছি।

রাইজিংবিডি: নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি গত এক বছরে কতটুকু সফলতা পেয়েছে?

এলজিআরডি মন্ত্রী: আজ থেকে দশ-এগার বছর আগে সড়কে লাইট জ্বলত না। বেহাল ছিল রাস্তাঘাট। নাগরিক সেবা ছিল শূন্যের কোটায়। বিভিন্ন পার্ক ও খেলার মাঠ মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। বর্তমানে এগুলো দখলমুক্ত করে উন্নয়ন করা হচ্ছে। বর্জ্যের ভাগাড় হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এ নগরী অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে অনেকটা পরিচ্ছন্ন। কর্মস্থলে ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিতসহ নানা মোটিভেশনমূলক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথমত মৌলিক যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পরিকল্পনা নিয়েছি। বর্তমানে এগুলোর অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছি। নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, এর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু কাজ বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পরিচ্ছন্ন ঢাকা, যানজট, জলাবদ্ধতা, মশা নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্যমুক্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। 

রাইজিংবিডি: নগরীতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়। সমস্যাটি সমাধানে মন্ত্রণায় কী ধরনের উদ‌্যোগ নিয়েছে?

এলজিআরডি মন্ত্রী: জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরশেন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। অনেক উন্নত ড্রেন নির্মাণ করেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সারফেস ড্রেন ও পাইপ নর্দমা পরিচ্ছন্ন, নতুন ড্রেন ও ফুটপাত  নির্মাণ করা হয়েছে। শান্তিনগর, নাজিমউদ্দিন রোড, গণকটুলী এবং বংশাল এলাকায় প্রায় চার যুগের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।

রাইজিংবিডি: চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ছিল। এর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

এলজিআরডি মন্ত্রী: ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মোকাবিলার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। গত এক বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন প্রতিটি ওয়ার্ড-মহল্লায় মশক নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হয়েছে। মশক নিধনকর্মীরা একযোগে কাজ করেছেন। এছাড়া সিটি করপোরেশনের নিয়োজিত কর্মীদের তদারকি ও ভূমিকা রাখতে অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। 

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সরকার। এ বছর মশক নিধন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে এডিস মশার বংশ বিস্তার ধ্বংস করতে পারব।

রাইজিংবিডি: রাজধানীর বায়ু দূষণ কমাতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? 
এলজিআরডি মন্ত্রী: বায়ু দূষণ কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আন্ত:মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়েছে। সভায় কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশে রাজধানীতে ধুলাবালি কমাতে ২০টি সুইপিং মেশিন কেনা হচ্ছে। ঢাকা শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। ঢাকা শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে। সে অনুযায়ী সংস্থাগুলো সেবা দিতে খোঁড়াখুড়ির কাজ করছে। এতে করে ওয়াসা একদিকে কাটাকাটি করছে, ডেসকো অন্যদিকে করছে, তিতাস আরেক দিকে কাটছে। ফলে ধুলাবালি বাড়ছে। 

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তারা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। তারা রাস্তার পাশে সেবা সংস্থাগুলোর ডাকটিং পয়েন্ট রেখেছে। তারা ঐখান থেকে নতুন জায়গায় লাইনগুলো পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে বারবার একই রাস্তা কাটা হচ্ছে না। সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে কিভাবে সমন্বয় করা যায়, সেটা নিয়ে মাস্টার প্ল্যান করা হচ্ছে। আমাদের এ ধরনের মাস্টার প্ল‌্যান নেয়া হচ্ছে।

রাইজিংবিডি: নগরবাসীর সেবায় ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

এলজিআরডি মন্ত্রী: ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বাতি স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। পার্ক ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত করা হয়েছে। বিনামূল্যে চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের সেবা দেয়া হয়েছে। ওষুধসহ পরামর্শ সেবা বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার মতো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অবৈধ বিলবোর্ড ও ব্যানার অপসারণ করে দৃষ্টিনন্দন ডিজিটাল বিলবোর্ড ও এলইডি বক্স স্থাপন, আধুনিক পুলিশ বক্স নির্মাণ, আধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। সর্বশেষ এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যেতে এয়ারকন্ডিশন যুক্ত চক্রাকার বাস সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে মতিঝিল এলাকায় আরো একটি চক্রাকার বাস সার্ভিস শিগগিরই চালু করা হবে।

রাইজিংবিডি: নদীদূষণ কমাতে প্রধানমন্ত্রী আপনাকে প্রধান করে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন। নদীদূষণ ও বর্তমানে এ কমিটির কাজের অগ্রগতি কতটুকু এগিয়েছে? 

এলজিআরডি মন্ত্রী: ঢাকার চারপাশের নদী দূষণের কী অবস্থা আপনারা তা জানেন। নদী দূষণ কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে প্রধান করে কমিটি করেছেন। আমরা ইতিমধ্যে মাস্টার প্ল্যান করেছি। নদীদূষণ কমাতে কাজ শুরু হয়েছে।

রাইজিংবিডি: বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে প্রকল্প হচ্ছে। গণমাধ‌্যমেও এ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ‌্যমে কী কাজ করা হবে? 

এলজিআরডি মন্ত্রী: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ‘আমিনবাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও মানসম্মত উপায়ে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ হবে। প্রায় ৮২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সরকার। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে তিন বছরে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের আওতায় ৬৮২০০ বর্গমিটার জমিতে দৈনিক ৫০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি প্ল্যান্ট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার মাধ্যমে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এছাড়া ১৩৬০০ বর্গমিটার জমিতে মেডিক‌্যাল বর্জ্য ও ১৬০০০ বর্গমিটার জমিতে বর্জ্য রিসাইকেল ফ্যাসিলিটিজ স্থাপনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

রাইজিংবিডি: প্রতিদিনিই ঢাকায় বাড়ছে মানুষ। এজন্য বাড়ছে বর্জ্যের পরিমাণ। এসব বর্জ্য ল্যান্ডফিল্ডে নিতে কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?

এলজিআরডি মন্ত্রী: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ২০১৪ সালে যেখানে প্রতিদিন ৫ হাজার ১০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হতো, সেখানে ২০১৯ সালে এসে প্রতিদিন ৬ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। চট্টগ্রামে ২০১৪ সালে প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হতো, যা ২০১৯ সালে ২ হাজার টন ছাড়িয়েছে। সম্প্রতি জাপান সরকার ৭৭ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে। এর অধীনে তিন সিটি করপোরেশনকে ১৫০টি বর্জ্যবাহী গাড়ি দেয়া হয়েছে। এসব গাড়ির জন্য তিন সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা আরো বাড়বে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ৫৬টি করে এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ৩৮টি গাড়ি দেয়া হয়েছে।

রাইজিংবিডি: নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে পানি শোধনাগার করা হয়েছে। এর সক্ষমতা কত?

এলজিআরডি মন্ত্রী: গত ১০ অক্টোবর রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার ফেজ-১, সাভার উপজেলার তেতুলঝরা ভাকুর্তা ওয়েলফিল্ড প্ল্যান্ট প্রথম পর্বের উদ্বোধন ও গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা ওয়াসার নতুন এ দুটি পানি পরিশোধানাগার উদ্বোধনের ফলে দিনে চাহিদা অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন ঢাকাবাসী।

রাইজিংবিডি: মুজিববর্ষের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছে। মুজিববর্ষ নিয়ে সরকার ব‌্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আপনার মন্তব‌্য জানতে চাই।

এলজিআরডি মন্ত্রী: মুজিববর্ষ সামনে রেখে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালন করবে সরকার। মুজিববর্ষ সামনে রেখে আমরা পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ উপহার দিতে চাই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতোই বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র পরিছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ অনুযায়ী এসডিজি অর্জন উন্নয়নের মানদণ্ড হিসেবে পরিচ্ছন্ন জনপদ গড়ে তোলা হবে। 

আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সর্বসাধারণের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় দৈনন্দিন অভ্যাস গড়ে তোলা। পাশাপাশি এ বিষয়ে তাদের সচেতন করা। মশাবাহিত, পানিবাহিত, বায়ুবাহিত ও মৌসুমি রোগ-বালাই থেকে পরিত্রাণ পাওয়া। সেই সঙ্গে প্লাস্টিক-পলিথিনের ব্যবহার সীমিতকরণ এবং জলাবদ্ধতা দূর করে নতুন প্রজন্মকে উন্নত পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা ও তাদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতার বোধ ও অভ্যাস গড়ে তোলা।

দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রথমে ছোট এলাকায় কাজ শুরু হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে চালুকৃত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে।

রাইজিংবিডি: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এলজিআরডি মন্ত্রী: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। রাইজিংবিডির জন্য শুভকামনা ও  পাঠকদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা।

 

ঢাকা/আসাদ/সাইফ



from Risingbd Bangla News https://ift.tt/35X5zoS