স্বপ্ন ওদের জনসেবা!

স্বপ্ন ওদের জনসেবা!

স্বপ্ন ওদের জনসেবা!
মোহাম্মদ হেলালুজ্জামান।
                                                     

স্বপ্ন ওদের জনসেবা! এই মন্ত্র বুকে ধারণ করে এর আগে এই তরুণেরা শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছিল। তারপর তারা ওই সময় তাদের পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে ঠিক করেছিল ইউনিয়ন বা ইউনিয়নের পাশের এলাকার অসহায় মানুষদের জন্য বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরের ব্যবস্থা করা। তারা কথা রেখেছে। মৌখিক, মোবাইল, লিফটলেট, ফেসবুক, মাইকিং এর মাধ্যমে চালিয়েছে প্রচারণা। সারা জাগিয়েছে পুরো এলাকার মানুষের মাঝে। তরুণরা দেখিয়ে দিয়েছে তারাও পারে! টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটি ইউনিয়নে একঝাঁক তরুণেরা বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসার ক্যাম্পেইন করেছে। ফাজিলহাটি ইউনিয়নের ও ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক নানান ধরণের চোখের রোগীর চিকিৎসা করা ও বিনা মূল্যে প্রাথমিক ঔষধ বিতরণ করা হয়েছে।  


 
চোখ এক অমূল্য সম্পদ। অথচ গ্রামের মানুষ চোখ সম্পর্কে এতো সচেতন নয়। তাই গ্রামের সেই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ালো এবার ফাজিলহাটি ইউনিয়নের এই একঝাঁক তরুণেরা! এলাকার মানুষ তাদের শীতবস্ত্র বিতরণ কে খুব সাধুবাদ জানিয়েছে। তাই তাদের পরবর্তী কাজেও ছিল, সবার আন্তরিক সহযোগিতা। এবার তরুণদের প্রচারণায় যুক্ত হলো প্রবাসী কিছু লোক ও ঢাকায় থাকা কিছু গণ্যমান্য মানুষ। তাদের এই উদ্দীপনায় যোগ দিলো এই এলাকার কৃতীসন্তান ড. মোস্তাক আহমেদ। তিনি জগন্নাথ বিশবিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক। সত্যিই যেন এ এক মিলন মেলা। ড. মোস্তাক আহমেদ এর অনুরোধে স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এলো পার্শ্ববর্তী এলাকার এক সময়ের তার সহপাঠী, দেশের স্বনামধন্য ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু কনসালটেন্ট ডা: আনিসুর রহমান খান। 


 
মূলত তার সহোযোগীতাটা ছিল অনবদ্য। পুরো এলাকাটি জুড়ে মাইকিং কিযে এক আনন্দ, এই তরুণদলের যুবকদের মাঝে। তারপর তারা লিফটলেট পৌঁছে দিলো ফাজিলহাটি ইউনিয়নের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, উচ্চ বিদ্যালয়ে ও মাদ্রাসাতে। ইউনিয়নের হাট-বাজারগুলোতে। কিছু তরুণেরা ঢাকায় থাকে, আবার কেও নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তারা মাইকিং করতে না পাড়ার জন্য আফসোস করতে লাগলো। পরে তাদের অনুরোধে দলনেতা তাদের মাইকিং প্রচারণা করার সুযোগ দিলো। ছেলেদের মাঝে কি উন্মাদনা! রাতের আধার বা প্রতিকূলতা তাদের ফেরাতে পারেনি। এ যেন এক ভিন্ন আনন্দের, অন্যরকম আমেজ! দূর-দূরান্ত থেকে বৃদ্ধ-বনিতা সকল শ্রেণী পেশার নানা ধরণের চোখের রোগীরা এসেছিলো বিনামূল্যে চোখের সেবা নেওয়ার জন্য। ডাঃ আনিসুর রহমান খানের সহযোগিতায় রোগীরা পেলো ফ্রি চিকিৎসাসেবা আর বিনামূল্যে প্রাথমিক ঔষধ। কোনো কোনো রোগীকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে চশমা। রোগীরা সত্যিই খুব আনন্দিত। অনেকের মনে ভয় ছিল, আসলেই কি বিনামূল্যে চিকিৎসা বা ঔষধ নাকি, পরে আবার টাকা চাইবে! যখন দেখে সম্পূর্ণ ফ্রি তখন সবাই অবাক।

আসলে গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে যা হয়। দেলোয়ার একটি ফার্মাতে চাকরি করে। সে তার কোম্পানি থেকে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য কিছু ঔষধ সংগ্রহ করে রেখেছিলো আগেই। যা তিনি ডাক্তারের কাছে পৌঁছে দেয়। অর্থাৎ এ যেন এক ত্যাগের মেলা। যে যেভাবে ত্যাগ করতে পারে, তাতেই তার আনন্দ। যা আজকের যুগে সত্যি অভাবনীয়। তরুণদের দলনেতা হেলাল বলেন- আমাদের গ্রামের সাধারণ মানুষদের অনেকেই চোখ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নয়! অথচ চোখ হলো- মানবদেহের সকল অঙ্গের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ!  গ্রামের যারা কখনো চোখের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারে নাই বা সামর্থ নাই তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা সত্যিই খুব আনন্দিত ও গর্বিত। রোগীদের মাঝে গ্রামের মহিলাদের সংখ্যাই অনেক বেশি ছিল। আমাদের ইচ্ছা চক্ষু শিবির ইউনিয়নে অন্তত বছরে ২বার করার। তাছাড়া অন্যান্য রোগীদের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এনে ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার।

 যাদের সহযোগিতায় এই মহৎ কাজটি সম্পন্ন হয়েছে তারা হলেন- হেলাল, ফিরোজ, লেবু মিয়া, জিয়ারত হুজুর, দেলোয়ার, নুরুল ইসলাম, লুৎফর, মাসুদ, মুখলেছুর, তারিফ, আরজু, প্রবাসী টিটু, রাজ্জাক, ইসমাইল, ছাত্র রাকিব, আলমগীর, ফয়সাল, চাকুরীজীবি রফিক দেওয়ান, বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রিয়াদসহ অনেকেই। ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য দাবিদার ইউনিয়নের ভালো মনের এই একঝাঁক তরুণগণ, যাদের সহযোগিতায় এই ইউনিয়নের কিছু অসহায়, অসচেতন, ও নিম্নআয়ের মানুষদের সেবা করা গেছে। কারো শ্রম, কারো অর্থ আবার কারো কল্পনা বা স্বপ্ন এসবের সংমিশ্ৰণে বাস্তবায়ন হলো বা সম্ভব হলো এই মহৎ কাজ। এছাড়া ফাজিলহাটি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, এলাচিপুর-চরপাড়া বাজার কমিটির সভাপতি শাহাদৎ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন এর সহযোগিতা ছিল যথেষ্ট আন্তরিকতাপূর্ণ।  এই নির্লোভী সাদামনের মানুষদের প্রত্যাশা বা স্বপ্ন রইলো, ইউনিয়নের সকল পেশা-শ্রেণীর মানুষদের সহযোগিতায় আবার কোনো মহৎ কাজ সম্পন্নের বা বাস্তবায়নের।


মোহাম্মদ হেলালুজ্জামান
গ্রামঃ কুমার জানি (সরকার বাড়ি),
পোঃ পুটিয়াজানি বাজার,
উপজেলাঃ দেলদুয়ার,জেলাঃ টাঙ্গাইল।
মোবাইল-০১৬৭২৯৫৫৬৫৫