তোমার শিকড় বাংলা, তুমিও একজন বাঙ্গালী

তোমার শিকড় বাংলা, তুমিও একজন বাঙ্গালী

মোঃ আব্দুল হামিদ , বার্তা সম্পাদক, টাঙ্গাইলদর্পণ.ডট.কম : 


মাতৃভাষা বাংলা আমাদের অহংকার, আমাদের মাথার তাজ। কেননা এই ভাষার জন্যই আজ আমরা আামাদের মনের ভাবকে প্রকাশ করতে পারি। এই ভাষাকে যদি আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জন করতে না পারতাম তবে আজ আমাদেরকে উর্দু ভাষাতে কথা বলতে হতো। যে ভাষা আমাদের আদি পুরুষদের কথা মনে করিয়ে দেয়, যে ভাষায় তারা প্রথম তাদের মনের আকাঙ্খাকে আত্মপ্রকাশ করেছে সেই ভাষাকে কী আমরা এত সহজেই ভূলে যেতে পারি।

এই পুরো পৃথিবীতে না জানি কত ভাষাভাষীর মানুষের বসবাস। তবে ইতিহাস ঘাটলে এমন কোন জাতি (বাঙ্গালী ব্যতিত) কে খুজে পাওয়া যাবে না, যারা তাদের মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎষর্গ করেছে।তাই আমাদের সকলেরই উচিত এই ভাষাকে সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখা। 

এমন একটা সময় ছিলো যখন আদিম পূর্বসূরীরা তাদের মনের ভাব প্রকাশের জন্য একটা মাধ্যম আবিষ্কারের চেষ্টা করছিলো, তখন বাঙ্গালী জাতিরাও এই বাংলা ভাষার সৃষ্টি করেছিলো। ভাষা এমন একটা মাধ্যম যা ব্যতীত কোন মানুষই তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারবে না।আমরা সবাই জানি ইংরেজরা এক সময় পুরো পৃথিবী শাসন করেছে, তাইতো তাদের এই ভাষা আজ আর্ন্তজাতিক ভাষায় হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

পুরো পৃথিবী এখন এই ইংরেজী ভাষাকে তাদের ব্যবসা ও আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ব্যবহার করে। ভাষার এমন একটি মাধ্যম যা আপনাকে আপনার আপন স্বত্ত্বাকে জানতে ও সমাজের সাথে মিশতে সাহায্য করে।তবে মাঝে মাঝে দুঃখ হয় এই ভেবে যে, বাংলা ভাষার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছিলাম কিন্তু কিছু বাঙ্গালী নামধারীরা অন্যভাষায় নিজেকে প্রকাশ করতে বেশি পছন্দ করে। তাদের ভাবটা এমন যেন বাংলা ভাষা একটা স্বল্পমানের ভাষা, তার কী তখন এটা একবারও স্মরণ হয় না যে, তুমিও কোন না কোন বাঙ্গালী বাবা-মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছো “তোমার শিকড় বাংলা, তুমিও একজন বাঙ্গালী”।  

এই পুরো লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা বাঙ্গালী জাতিরা আজ নিজের স্বত্ত্বাকে ভূলে গিয়ে বিদেশ পারি দিয়ে সেই ভাষায় মত্ত্ব হয়ে পড়ি এবং পরবর্তীতে বাংলা ভাষায় কথা বলতে এমনকি নিজেকে বাঙ্গালী জাতি হিসাবে পরিচয় দিতে লজ্বা বোধহয়। এমন সব ব্যক্তিবর্গের জন্যই আজ আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে। 

তাই আসুন আমরা বাংলা ভাষাকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে বেশি বেশি বাংলা ভাষার চর্চা করি এবং অনলাইন মাধ্যমে যত বেশি সম্ভব বাংলায় লেখা গল্প, কবিতা, উপন্যাস, শিক্ষামূলক, গবেষনামূলক লেখাকে প্রকাশ করি যাতে বিশ্বব্যপী ছড়িয়ে থাকা বাঙ্গালীরা আমাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য ভূলে না যেতে পারে এবং নিজের ভিতরের বাঙ্গালীয়ানাকে প্রস্ফুটিত করতে পারে। 

আমরা একতটাই অভাগা জাতি যে, চীনের মতো হতে পারলাম না! এখানে আপনার মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে কেন আমি চীনের কথা বললাম। কারণটা হলো তারা তাদের মাতৃভাষাকে এতটাই প্রাধ্যান্য দিয়েছে যে, প্রযুক্তিকেও তারা নিজের ভাষাতে ব্যবহার করে। যেমন : তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তাদের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন আছে (বাইদু.ডট.কম), সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে (কিউকিউ.ডট.কম), ভিডিও শেয়ারিং এর জন্য (ইয়াউকু.ডট.কম), অনলাইনে কেনা-বেচার জন্য আর্ন্তজাতিক মাধ্যম (আলীএক্সপ্রেস/আলীবাবা.ডট.কম)। আর সেখানে আমাদের দেশের নামে এমন কোন ভাল প্লাটফর্ম তৈরী হলেও সেটার প্রতি আমাদের কোন আগ্রহ নেই বললেই চলে। 

আমাদের দেশেও এমন কিছু প্রযুক্তি আছে যেমন : তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তাদের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন আছে (পিপীলীকা.কম), সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে (বেশতো.ডট.কম), ভিডিও শেয়ারিং এর জন্য (বঙ্গবিডি.ডট.কম), অনলাইনে কেনা-বেচার জন্য দেশীয় অনেক ই-কর্মার্স সাইট রয়েছে যেগুলো আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনে সঙ্গী হতে পারে। তবে দু:খটা সেখানেই আমরা বিদেশী-ভিন্নদেশী পন্যের প্রতি মায়াবোধ করি, তাদেরকে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেই আমরা অথচ আমাদের দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এই দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে।
আমরা কী তাদের একটু সুযোগ দিয়ে তাদের পথ চলায় সঙ্গী হতে পারি না।দেশের টাকা দেশেই রাখা যেত তাহলে। কেনই বা আমরা নিজের পকেটের টাকা বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে নিজের দেশকে পিছিয়ে রাখছি? অনেক কথা বলে ফেললাম এজন্য আমি আপনাদের কাছে দু:খিত যদি এই লেখাটি পরে আপনার মনে একটি বারের জন্যও দাগ কাটে তবে বাঙ্গালী হিসাবে আমাদের বাংলা ভাষাকে সম্মান দিয়ে ও দেশীয় পন্য ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করে তাদের সাথে আমাদের বাঙ্গালী জাতি হবার বিষয়টা পুরো বিশ্বকে জানিয়ে দিতে আপনাদের সকলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আশা করছি।

এখানে আমি কোন প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য কাজ করিনি। আমি শুধু তাদেরকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি যারা বাংলা ভাষায় নিজের ও প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বব্যপী তুলে ধরার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।