চীনে জন্ম হয়নি ৪০ কোটি শিশুর

চীনে জন্ম হয়নি ৪০ কোটি শিশুর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  জন্মনিয়ন্ত্রণ ও জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কমানোর জন্য চীন ১৯৭৯ সালে এক সন্তান নীতি গ্রহণ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক সন্তান নীতির কারণে চীনে ৪০ কোটি শিশুর জন্ম হয়নি। এছাড়া এই দীর্ঘ সময়ে চীনে যারা নীতি অমান্য করেছে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া কঠোর ব্যবস্থা। অনেক নারীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করা হয়েছে দেশটিতে। অনেকেই চীনের এই নীতিকে মানবতাবিরোধী বলে অভিযোগ করেছেন।

বিবিসির হংকং সংবাদদাতা জুলিয়ানা লিউর জন্ম ১৯৭৯ সালে। তখন চীনে এক সন্তান নীতি। তার বাবা-মা দ্বিতীয় সন্তান নিতে পারেননি। লিউর বাবা-মা দুজনেই তখন চাকরি করেন। তারা যদি দ্বিতীয় সন্তান নিতেন তাহলে চাকরি হারাতে হতো।

লিউ বলেন, আমার মা দুবার সন্তান সম্ভবা হয়েছিলেন। কিন্তু দুবারই তাকে গর্ভপাত করাতে হয়েছে। কারণ চীনে তখন এক সন্তান নীতি। সবাই এবিষয়টি জানতো। তিনি বলেন, নিজের সবচেয়ে আদরের সন্তান গর্ভাবস্থাতেই মেরে ফেলার বিষয়টি কতটা বেদনার সেটি নিজে মা হয়ে আমি ভাবতেই পারি না।

চীনে অনেক পরিবারের এ ধরনের গল্প রয়েছে। লিউ শৈশবে যাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন তাদের কারো ভাই-বোন ছিল না। সবাই ছিল একমাত্র সন্তান। একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে বাবা-মায়ের সব প্রত্যাশা ছিল তাকে ঘিরে। স্কুলে ভালো ফলাফল করা, ভালো চাকরি করা, সঠিক মানুষকে বিয়ে করা এ ধরনের সব প্রত্যাশা। এক কথায় সব কিছুতেই পরিপূর্ণ হতে হবে। কারণ আমি একমাত্র সন্তান। চীন যখন এক সন্তানের নীতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলো তখন জুলিয়ানা লিউয়ের আনন্দে মন ভরে যায়।

পাঁচজন থেকে একজন
বিবিসি চায়না বিভাগের ইউয়েন ইউ পাঁচ ভাইবোন ছিলেন। কিন্তু তার নিজের এক সন্তান। তিনি যখন সন্তানসম্ভবা তখন সেই সন্তান জন্মদানের জন্য কত প্রস্তুতি। কারণ সেই সন্তানই প্রথম এবং সেই সন্তানই শেষ। তিনি এক সন্তান নীতিকে সমর্থন করেছিলেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন চীনের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা রোধের জন্য ব্যক্তিগত কিছু ত্যাগ করতে হবে।

কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার যদি আগে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতো তাহলে হয়তো এক সন্তান নীতির প্রয়োজন হতো না। কমিউনিস্ট আমলে চীনের প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৫৩ সালে। সেখানে দেখা যায়, চীনের জনসংখ্যা তখন ৬০ কোটি। এর মধ্যে তার আগের চার বছরেই চীনের জনসংখ্যা বেড়েছে ১০ কোটি!

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাও ইয়েনচু অধিক জন্মহার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি বিষয়টি চীনের নেতা মাও সেতুং-এর কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু জন্মহার কমানোর বিষয়টি মাও সেতুং পছন্দ করেননি। কারণ তখন চীনে মনে করা হতো অধিক জনসংখ্যা মানে অধিক কর্মক্ষম মানুষ। সেজন্য তখন পরিবারগুলোকে বেশি সন্তান নিতে উৎসাহ দেয়া হতো। আর এ কারণেই ইউয়েন ইউ-এর বাবা-মায়ের পাঁচ সন্তান ছিল। কিন্তু এখন ইউয়েন ইউ-এর এক সন্তান।

তিনি বলেন, কিভাবে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে পরিস্থিতি বদলে যায়! যদি তখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হতো তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের উপর এক সন্তান নীতি চাপানোর প্রয়োজন হতো না। এখন এক সন্তান হবার কারণে ইউয়েন ইউ-এর কন্যা অনেকটা স্বাবলম্বী। সে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে এবং কিভাবে বন্ধু তৈরি করতে হয় সেটিও সে জানে। তার মেয়ে স্বাধীন এবং পরিশ্রমী।

ইউয়েন ইউ বলেন, আমার মেয়ে যেভাবে বেড়ে উঠেছে তাতে আমি খুশি। কিন্তু আমার ইচ্ছে হয় যদি তাকে একটি ভাই-বোন দিতে পারতাম।