ছোট গল্প: ঋণ

ছোট গল্প: ঋণ

ছোট গল্প: ঋণ

মাসিক বেতন ভালোই, তাই চার বাটি কুমিল্লার রসমালাই আর দুই কেজি ময়মনসিংহ, মুক্তাগাছার মন্ডা নিয়ে শফিক তার কয়েক মাস আগে ছেড়ে যাওয়া পুরনো মেসে ফিরে।

নিলয় নীল

মাসিক বেতন ভালোই, তাই চার বাটি কুমিল্লার রসমালাই আর দুই কেজি ময়মনসিংহ, মুক্তাগাছার মন্ডা নিয়ে শফিক তার কয়েক মাস আগে ছেড়ে যাওয়া পুরনো মেসে ফিরে।

শুক্র শনিবার ছুটি, চাকরি করছে বাংলাদেশ বিমানে, এসিসট্যান্ট ম্যানেজার পদে।

আজ শুক্রবার রাত ৯ টায় কড়া নাড়ে মেসের দরজায়। দরজা খুলে দেয় বিপুল, শফিক কে দেখেই চোখে মুখে ভীষণ উচ্ছ্বাস।  

-কি রে ব্যাটা চাকরির কয়েক মাস না হতেই আবার মেসে ফিরলি যে? -কেন ফিরতে পারবো না? সীট খালি নাই নাকি? -কারো শূন্যস্থান কি পড়ে থাকে রে? তবে তোকে ভীষণ মিস করি। আয় ভিতরে আয়! আর এত মিস্টি কেন রে? নতুন রুমমেট গ্রামে, আর মিজান এখনো টিউশন করে বেড়াচ্ছে।

শফিক ভিতরে এসে মিজানের বেডে বসে। মলিন একটা চাদর, বালিশের কভারটা বেশ ময়লা। বোঝা যাচ্ছে টিউশন নিয়ে মিজান খুব ব্যস্ত থাকে। রুমে তার অবস্থান খুব ক্ষনিক সময় জুড়ে।

শফিক, বিপুল ও মিজান গত একবছর একই সাথে থেকেছে,খেয়েছে, পড়েছে আর আড্ডা দিয়েছে। মাঝে মাঝে সারা রাত তাসের আড্ডায় মেতেছে।

একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে একই সেশনে পড়াশোনা শেষ করেই, তারা মেসে উঠে চাকরির পড়াশোনা করছে।

বিপুলের পারিবারিক অবস্থা বেশ ভালোই। বাসা হতে পর্যাপ্ত টাকাই দেয় কিন্তু মিজানের পারিবারিক অবস্থা নাজুক। একবছর আগেই নদী ভাঙ্গনে শেষ ভিটে মাটি হারিয়েছে। অনেক গুলো টিউশন করে বাসায় টাকা পাঠিয়ে নিজের চলতে হয়।

শফিকের সাথে মিজানের বেশ সখ্যতা ছিলো। ম্যাথের নানা বিষয় মিজানের থেকেই সে শিখেছে।

মিজান ঠিক রাত ১০. ১০ এ মেসে ফিরে আসে। বিপুল দরজা খুলতেই মিজান কে দেখেই, শফিক গিয়ে জড়িয়ে ধরে। বিপুলের খেয়াল হয় মিজানের প্রতি শফিকের আকুন্ঠ এক টান।

মিজান দুষ্টুমি করে বলে উঠে:

 -আরে ব্যাটা ছাড় ছাড়! বাইরে থেকে করোনা ফরোনা নিয়ে আইছি।জড়ায় ধরে নিজেরে আক্রান্ত করিস না। বলে শফিকের হাত ধরে নিজের বিছানায় বসে মিজান।

টেবিলে নানা চাকরির পরীক্ষার বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। 

মিজান শফিক কে বলে:

-একটু বস! আমি একটু গোসল সেরে আসি। করোনা আবির্ভাব এর পর থেকে বাইরে থেকে এলেই আগে গোসল সেরে ফেলি ইদানীং। ডানে ঘাড় বাকিয়ে, 

বিপুল কে ডেকে বলেঃ

-বন্ধু শফিককে একটু আলু ভাজা করে খাওয়া। আমার টেবিলের ড্রয়ারে প্যাকেট সস আছে।

আলু ভাজা আর সস তাদের তিনজনেরই সিগনেচার হোম মেড নাস্তা ছিলো।

বিপুল একটু ভারি গলায় বলে:

-আরে থাক এসব ভাজাপোড়া। আমাদের অফিসার সাহেব কত মিস্টি নিয়ে আসছে দেখেছিস? আজকে তো ব্যাটা, ভাত ই খাবো না। শুধু মিষ্টি খাবো। তুই গোসল সেরে আয়। শফিক আজকে রাতে থাকবে।  29 খেলব পাশের রুমের দুলাল ভাইকে ডেকে আনি।

১০ মিনিট পর-

মিজান গোসল সেরে বের হয়। ১০.৩০ এ ফোন আসে বাসা হতে। বেলকুনিতে গিয়ে কথা বলতে থাকে। মিজানের বেডের পাশ দিয়েই, ছোট্ট এক বেলকুনির চিপা। খুব ঠান্ডা ক্লান্তিকর কন্ঠে মিজান।একটা অসহায়ত্ব তার কন্ঠে... 

শফিকের কানে কয়েকটা  শব্দ আসে, "পড়ার সময় ই তো পাচ্ছিনা মা"

শফিক একটু কান খাড়া করে শুনতে থাকে কথা।

শুনে যেটা বুঝলো সেটা হচ্ছে:

" প্রতিদিন কয়েকটা টিউশন আর কোচিং এর ক্লাশ সেরে, ঠিকমত চাকরির পড়া পড়তে পারছে না মিজান। তার ম্যাথে খুব ভালো দখল তবে ইংরেজীতে আরো সময় দিতে হবে

বাসায় কথা শেষ করেই মিজান শফিকের পাশে এসে বসে। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করে, "চাকরি জীবন কেমন যাচ্ছে,বিয়ে শাদী নিয়ে ভাবছে নাকি কিছু। এখন কোথায় আছে,সামনে স্বপ্ন কি"?

সব জানা হলে শফিক মিজানকে প্রশ্ন করে:

- মিজান, এখন কয়টা টিউশন করাস রে তুই?

-এইতো চারটা রে।  সাথে বাসার পাশে এক কোচিং এ ক্লাস নেই।এগুলোর আবার নোট ফোট ও করা লাগে। -তুই জানিস দুইমাস পরেই বেশ কিছু চাকরির পরীক্ষা শুরু হবে? এখন কয়টা টিউশন ছেড়ে দে।বেশি সময় পড়ায় দে।টিউশনি তো আর ক্যারিয়ার না।ওদিকে বয়সও তো শেষ হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।

-সেটা তো বুঝিরে কিন্তু বাড়িতে এখন আরো বেশি টাকা দিতে হয়। বোন সাইন্স নিয়ে পড়ছে। তার দুইটা টিউশন এর টাকা দিতে হয়।সামনে ওর পরীক্ষা। কি যে করব!

 একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপ হয় মিজান।

বিপুল পাশের রুমে দুলাল ভাইকে ডাকতে গিয়ে, নিজেই তাসের আসরে বসে পড়েছে। এদিকে রুমে শুধু মিজান আর শফিক।

শফিক মিজানের কাধে হাত রাখে বলে:

-তোর একাউন্ট নাম্বার আছে কোনো ব্যাংকের? -হ্যা আছে। ** ব্যাংক। -আমি তোকে আমার এই মাসের বেতন হতে ২০০০০হাজার টাকা ধার দিতে চাই। তবে শর্ত দুইটা -দুইটা টিউশন আর কোচিং ছাড়তে হবে -চাকরি পেলে দ্বিতীয় বেতন হতে আমার ২০০০০টাকা পরিশোধ করতে হবে।

মিজান শফিকের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।বেশ অবাক চোখে জিজ্ঞেস করেঃ -আরে মজা নিচ্ছিস নাকি? সেধে কেউ কাওকে ঋণ দিতে চায়?  শফিক হাসি দিয়ে বলে উঠেঃ -আমি সব কিছু নিয়ে মজা করি নারে পাগলা। শর্তে রাজি কিনা এইটা বল

কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিজান একটু হেসে দিয়ে জানায়:

-আচ্ছা কোন সুদ ফুদ দিতে পারব না কিন্তু! -সুদ না চাকরি হলে পুরাণ ঢাকায় সারা রাত যা যা খাইতে পারি সেটা খাওয়াইস... একটু প্রশান্তির হাসি হেসে মিজান শফিকের কাধে রেখে বলে -আচ্ছা আপাতত চল তোর মিস্টি খাই....

(সমাপ্ত) 

বাংলাদেশ জার্নাল/এএম

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/other/literature-and-culture/184023/ছোট-গল্প-ঋণ