'একখান ঘর দেন, মরে গেলে নিয়ে নিয়েন'

'একখান ঘর দেন, মরে গেলে নিয়ে নিয়েন'

'একখান ঘর দেন, মরে গেলে নিয়ে নিয়েন'

বাংলাদেশ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

দেশের উত্তরে এখন কনকনে শীত। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে মানুষের শরীরেও কাপুনি শুরু হয়। এমন শীতে রাস্তার পাশে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক বৃদ্ধা। শরীরে একটি জীর্ন গামছা। বিছানা পেতেছেন একটি প্লাস্টিকের ওপর কয়েক টুকরো ছেড়া কাপড় দিয়ে। 

বলছি ছিন্নমূল বৃদ্ধা সাবিনা ইয়াসমিনের কথা। বয়স ৬৪। যিনি জীবনের সিংহভাগ কাটিয়েছেন রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে। জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে সাবিনার আক্ষেপ মাথা গুজতে একটি ঘর পাওয়া। 

আগের শীতকালে দু’বার দুটো কম্বল পেয়েছিলেন। কিন্তু এখন কোনটাই নেই তার কাছে। একটি চুরি আর অন্যটি গেছে ছিঁড়ে। তাই রাতে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে পাতলা জীর্ন গামছাটিই এখন তার রক্ষাকবচ। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় এই ছিন্নমূল মানুষের। 

কথা বলতে বলতে আক্ষেপ আর চোখের জলে বুক ভাসালেন তিনি। বললেন, স্বামী মারা গেছে।  এক ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল, তারাও মারা গেছে। ঘর নাই বহুকাল ধরে। শ্বাসকষ্ট রোগ নিয়ে মাটিতে পড়ে থাকি। যখন শরীরে দম ছিলো তখন বাসা বাড়িতে কাজ করে পেট চলছিল। এখন হাত পেতে যা পাই তা দিয়ে দিন যায়। চিকিৎসা করাতে পারি না। এভাবে একদিন আমিও মরে যাব।  

নিজের কবরের মাটি নেই আক্ষেপ করে এই ছিন্নমূল বৃদ্ধা বলেন, সরকার কম্বল দেই। সরকারের একখান কম্বল নিয়ে কি হবে বাপু। থাকার ঘর যদি একখান থাকত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি একখান ঘর দিত। তাহলে মাথা গুজে থাকা যেত। শুনেছি অনেকে নাকি ঘর পাচ্ছে। আমার তো কেউ নাই। আমি যখন মরে যাব তখন না হয় আবার ঘরখান সরকার নিয়ে নিত। 

জেলায় ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে আরেকজন আব্দুল গনিমিয়া। বয়স ৭০। হতাশার হাসি দিয়ে বললেন, আজকের দিনে বাংলাদেশ যুদ্ধে বিজয় হয়াছিল। আজ খুব আনন্দ লাগছে। চারদিকে উৎসব চলছে। উঁচু দালান সাজিছে। লাল, নীল বাতিও জ্বলেছে। হামরা ভালো আছি বাবা। সে সময়তো পাক বাহিনীর অত্যাচারের ভয়ে এমনি করে খোলা আকাশেও থাকা যাচ্ছিল না। এলা তো তাও অভয়ে ঘুমাবার পারিছি। নাহয় লাগিল কনেক ঠান্ডা। দুইটা তো মাসই তারপর গরম চলে আসিলে অত ঠান্ডা লাগিবেনা। 

এ বিষয়ে কথা হয় ঠাকুরগাঁও ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুব আলম রুবেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি চলছে। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই বীর শহীদদের প্রতি। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করার পর দেশ পাক হানাদার মুক্ত হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের যে প্রকৃত ইতিহাস, যে অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করল তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেটি ভাবতে হবে। সমাজে ধনী গরীবের বৈষম্য বেড়েছে। যার বাস্তব রুপ এ স্টেশন প্লাটফর্ম। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে এক চোখে আনন্দ রেখে অন্য চোখে এ ছিন্নমূল মানুষদের দিকেও তাকাতে হবে। আনন্দ উল্লাস তাদের মাঝে পৌছে দিতে হবে। মানুষের মৌলিক অধিকার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক। বিজয়ের অঙ্গীকার হোক সমাজ পরিবর্তনের। 

এর আগে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে দিন দিন শীত বাড়তে শুরু করেছে। শীত মোকাবেলা করার লক্ষ্যে ছিন্নমূল, গরীব, অসহায় শীতার্ত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে আমরা এই শীতবস্ত্র কিছু বিতরণও করেছি। এছাড়াও আমরা আটলক্ষ টাকা পেয়েছি। যা দিয়ে আমরা চাহিদা অনুযায়ী শীতবস্ত্র বানিয়ে নিতে পারব। সেই সাথে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সংগঠন আমার মাধ্যমে এসব শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। 

বাংলাদেশ জার্নাল/এএম

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/185152/একখান-ঘর-দেন-মরে-গেলে-নিয়ে-নিয়েন