ওয়েবসাইট উন্নয়নের কাজ চলিতেছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত...
মালিকদের লোভের ফাঁদে যাত্রীরা

মালিকদের লোভের ফাঁদে যাত্রীরা

মালিকদের লোভের ফাঁদে যাত্রীরা

প্রায় ৪০ বছর আগে থেকে চলছে এই ওয়েবিল। এখন এর কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ঢাকা শহরে ওয়েবিল কিছুটা ভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়।

মো.ফরহাদ উজজামান

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বাস ভাড়া বাড়ানোরও ঘোষণা দেয়া হয়। তারপরও নির্ধারিত মূল্যর চেয়ে অতিরিক্ত বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই। এখনও বন্ধ হয়নি সিটিং সার্ভিস, গেটলক ও ওয়েবিল। এর ফলে সড়কে বিপাকে পড়ছেন যাত্রীসহ শ্রমিকরাও।

ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, সিটিং সার্ভিস বা গেটলক নামে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে নগরীর গণপরিবহনগুলোতে। মানা হচ্ছে না কোনও নিয়ম। ভাড়ার চার্ট দেখতে চাইলেও দেখানো হচ্ছে না। বাসে ওয়েবিলের নামে সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অথচ নতুন ভাড়ায় সঠিক হিসাব করলে কোনো কোনো বাসে ভাড়া কমে আসার কথা।

এদিকে শ্রমিকদের দাবি, মালিক পক্ষ থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে ওয়েবিলেই ভাড়া নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু যাত্রীরা ওয়েবিলে ভাড়া দিতে রাজি নন। এ কারণে ওয়েবিল বন্ধের দাবিতে পরিবহন চালানো বন্ধ রেখেছিলেন তারা। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাক্টর-চালকের বাকবিতণ্ডা ঘটছে। কোথাও কোথাও হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা পরিবহন শ্রমিক জালাল বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ঘাটারচর মোহাম্মাদপুর থেকে যে বাসগুলো চলে তার প্রতিটিই ওয়েবিলে চলে। সব বাস সিটিং সার্ভিস। তিনি যে পরিবহনে কাজ করেন সেটির মালিকও ওয়েবিলে চালাতে বলেছেন।

এর আগে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ জানিয়েছিলেন, গত ১৪ নভেম্বর থেকে সিটিং-গেটলক সার্ভিস বন্ধ থাকবে। এ নির্দেশনা না মানলে বাসের লাইসেন্স ও রুট পারমিট বাতিল করা হবে। বাস মালিকের বিরুদ্ধেও নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

তবে, সরেজমিনে তার কোন কিছুই কার্যকর হতে দেখা যায়নি। এমনকি ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাসে আলাদা স্টিকার লাগানোর কথা থাকলেও সেটিও মানা হয়নি।

এ বিষয়ে এসোসিয়েশন অফ বাস কোম্পানিজের সভাপতি রফিকুল হোসেন কাজল বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘পরিবহনে ওয়েবিলের প্রচলন নতুন কিছু নয়, বেশ পুরনো। মূলত গাড়ি কোন স্টেশন থেকে, কখন ছাড়লো, কতজন যাত্রী ছিল বা কোন ফি দিতে হয়েছে কিনা, সেগুলো জানতেই ওয়েবিল ব্যবহার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর আগে থেকে চলছে এই ওয়েবিল। এখন এর কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ঢাকা শহরে ওয়েবিল কিছুটা ভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়।’

ওয়েবিলের ভাড়া কিলোমিটারের দূরত্ব হিসেবে নির্ধারণ করা হয় কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিটির মধ্যে কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দূরপাল্লার বাস গুলোতে কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া নির্ধারণে তাদের লাভ হয়। হাইওয়ের রাস্তাগুলো ফাঁকা থাকে। ঢাকা থেকে কুমিল্লা গিয়ে দিনে কয়েকবার ঘুরে আসা যায়। অন্যদিকে সিটির মধ্যে প্রচণ্ড যানজটে যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা যেতেই সময় লেগে যায় ২-৩ ঘণ্টা। তাই এভাবে কিলোমিটার ভাড়া সিটিতে সম্ভব হয় না।’

ওয়েবিল তুলে দেয়াতে কি সমস্যা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বাস কোম্পানির এই সভাপতি বলেন, ‘ওয়েবিল মূলত একটি খাতা, একটি গাড়ির রুটকে কয়েকটি পয়েন্টে ভাগ করে ওই পয়েন্টগুলোতে কর্মী রাখা হয়। এই কর্মীরা দেখেন যে, ওই পয়েন্টে ওই সময়ে বাসে কত জন যাত্রী ছিল। যত জন যাত্রী থাকে সেই সংখ্যা দিয়ে যে ভাড়া সেটি গুণ করেই প্রকৃত ভাড়া বেরিয়ে আসে। এটাই বাস মালিকদের বুঝিয়ে দিতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে বাসের প্রতিটি যন্ত্রের দাম বেড়েছে। তবে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এগুলোর জন্য বাস মালিকদের যে ভর্তুকি দিতে হয় তা দিয়ে লস কাটানো সম্ভব হয় না। এছাড়া মহামারি করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিলো বাস চলাচল। তখনতো সরকার থেকেও আমাদের কোনো ভর্তুকি দেয়া হয়নি।’

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাসে ডিজেলচালিত স্টিকার লাগানো দেখা গেলেও সিএনজিচালিত কোনো স্টিকার দেখা যায়নি। আবার কিছু বাসে কোনো স্টিকারই চোখে পড়েনি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিবহন শ্রমিক (কন্ডাকটার) বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ওয়েবিলের কারণে এখন যাত্রীদের সঙ্গে প্রায়ই কথাকাটি হয়। ছাত্ররা মারার জন্য তেড়ে আসে। মালিকরা তো বলে দিয়েই খালাস। বেকায়দায় পড়তে হয় আমাদের।

এর আগে বাস পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় চলাচলরত ছয় হাজার বাসের মধ্যে ১৯৬টি সিএনজিচালিত বাস। শতকরা হিসাবে যা ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। তবে বাস মালিকের দেয়া তথ্যের ১৯৬টি বাসের একটির দেখাও মেলেনি সড়কে।

যাত্রীরাও অভিযোগ করেছেন, সড়কে তারা কোনো সিএনজিচালিত বাসের দেখা পাইনি।

ধানমণ্ডি থেকে সিটি কলেজে যাবেন বনি মিয়া। উঠেছেন রজনীগন্ধা পরিবহনের একটি বাসে। বিরক্তি কণ্ঠে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওয়েবিলের নামে এইটুকু পথের ভাড়া ১৫ টাকা। আর সারাদিনে খুঁজে একটা বাসেও সিএনজিচালিত কোনো স্টিকার দেখিনি। আবার ভাড়াও নেয়া হচ্ছে ওয়েবিলের নামে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি।

ওয়েবিলের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘ওয়েবিল পুরোটাই একটা ধান্দার নাম। পরিবহনখাতে এর কোন ভিত্তি নেই। এটা যাত্রীদের পকেট কাটা ছাড়া আর কিছু না। সরকার যে ভাড়া বাড়িয়েছে ওয়েবিলের নামে বাস মালিকরা নৈরাজ্য করছে।’

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডাক্তার সঞ্জীব দাস বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘বর্ধিত ভাড়া কার্যকরের পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কি না, বাসে স্টিকার লাগানো আছে কি না এবং ডিজেলচালিত বাস না হলেও নতুন নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কি না, তা আমরা মনিটরিং করছি।’

তিনি আরও বলেন, অভিযান পরিচালনার সময় যাত্রীদের বিভিন্ন অভিযোগও পেয়েছি। যারা ডিজেলচালিত বাস পরিচালনা না করেও নতুন ভাড়া নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও জরিমানা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। এর পরদিন থেকে হঠাৎ করেই ধর্মঘটের ডাক দেয় গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। সড়ক পথে তিনদিন এবং নৌপথে দুইদিন ধর্মঘটের পর সরকারিভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৮ নভেম্বর) থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে বাস ও লঞ্চ মালিক সমিতি। এরপর থেকেই শুরু হয় ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/182039/মালিকদের-লোভের-ফাঁদে-যাত্রীরা