অভিযোগের প্রাথমিক অবসান ঘটালেন প্রার্থী নিজেই

অভিযোগের প্রাথমিক অবসান ঘটালেন প্রার্থী নিজেই

অভিযোগের প্রাথমিক অবসান ঘটালেন প্রার্থী নিজেই

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে ইউনিয়নের ঝুকিপূর্ণ ১ নং ওয়ার্ডের ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি ও শঙ্কার সৃষ্টি হয়।

মাসুম লুমেন, গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরবেষ্টিত কাপাশিয়া ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্রে প্রায় ২০ বছর ধরে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হয় না বলে অভিযোগ উঠে এক প্রার্থী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ, প্রতিবারই ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় ওই প্রভাবশালী পরিবারটির প্রার্থীর লোকজন।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে ইউনিয়নের ঝুকিপূর্ণ ১ নং ওয়ার্ডের ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি ও শঙ্কার সৃষ্টি হয়।

সরেজমিনে ভোটকেন্দ্রটি পরিদর্শন করে জানা যায়, এই কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা এক সময় ছিল প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। ভাঙনের কবলে পরে এই এলাকার অনেক ভোটার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে চলে গেছে। ফলে দুর্গম চরে অবস্থিত চর কাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা এখন মাত্র ২০৯ জন! আসন্ন নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী হিসেবে ফুটবল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন লায়েক আলী খান মিন্টুর স্ত্রী খুরশিদ জাহান। আর দীর্ঘদিন ধরে এই ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন ইক্তিয়ার হোসেন বিপুল। তার এবারের নির্বাচনী প্রতিক মোরগ।

বিপুল সমর্থকদের অভিযোগ, এই কেন্দ্রে বিগত দিনগুলোর মতো এবারও কেন্দ্রের আশপাশে লাঠিসোঁটা ও চারিদিকে বাঁশের প্যান্ডেল বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ভোটকেন্দ্র দখল করে প্রতিদ্বন্দ্বী মেম্বার প্রার্থী ইক্তিয়ার হোসেন বিপুলের এজেন্টদের বের করে দিয়ে এককভাবে সিল মারার পরিকল্পনা করছে।কখনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট না হওয়ায় এখানে  ক্ষমতার পালাবদলও হয়নি। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়েক আলী খান মিন্টু নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন এবং তখন তাঁর বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে একক সিদ্ধান্তে মেম্বার পদে নির্বাচিত করেন। ভোটকেন্দ্র দখল করে এই পরিবার থেকেই বারবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছে। ২০০৩ সালের পরে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনগুলোতে মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রেই যেতে পারেন না বলে তারা জানান।

এ ব্যাপারে মেম্বার প্রার্থী ইক্তিয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে নির্বাচন করে আসছি। প্রভাবশালী লায়েক আলী খান মিন্টুর লোকজন আমাদের ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতার দাপটে বারবার নির্বাচিত হয়ে আসছে। আমি এবার ইউএনও, ওসি, নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, যাতে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়'।

এদিকে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বিকেল ৫টার দিকে অভিযুক্ত পরিবারের অপর মেম্বার প্রার্থী লায়েক আলী খান মিন্টুর স্ত্রী খুরশিদ জাহান বলেন, ‘আমাদের ভোটাররা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসবে। তাই নারী ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য আমরা অস্থায়ী তাঁবু করেছি। দাঙ্গা-হাঙ্গামা করার জন্য নয়।’ 

এসময় তিনি প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে তার লোকজনকে বাঁশের প্যান্ডেল খুলে ফেলার নির্দেশ দেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্ত বাঁশ কাঠ সরিয়ে ফেলেন। এতে উভয় প্রার্থীর লোকজনের মধ্যে একটি আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং তারা কোনরকম হাঙ্গামা ছাড়াই দীর্ঘদিন পর ভোটাধিকার প্রয়োগের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সাংবাদিকদের উপস্তিতিতে তৎক্ষণাৎ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রটির বাঁশকাঠ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল মারুফকে অবগত করলে তিনি জানান, 'নিজে থেকেই বাঁশ, কাঠ অপসারণের জন্য মেম্বার প্রার্থী খুরশিদ জাহানকে ধন্যবাদ জানাই'। দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে কেন্দ্রটি বিবেচিত হওয়ায় সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণ পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলেও তিনি জানান। 

বাংলাদেশ জার্নাল/এএম

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/politics/182948/অভিযোগের-প্রাথমিক-অবসান-ঘটালেন-প্রার্থী-নিজেই