সবাই ছুটছেন নিজ নিজ গ্রামে

সবাই ছুটছেন নিজ নিজ গ্রামে


আর মাত্র তিনদিন পরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। সবাই নিজ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। এ কারণে ভোটের দু’দিন আগেই রাজধানী ঢাকার মানুষ নিজ নিজ গ্রামে ভোট দিতে ছুটে যাচ্ছেন।

দেখা গেছে, ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, কর্মব্যস্ত শহর ততই ফাঁকা হয়ে হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা লাখো মানুষ ভোট দিতে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছেন। কারণ ঢাকায় বসবাস করা বেশিরভাগ মানুষ দেশের বিভিন্ন এলাকার ভোটার। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে অনেকেই আগেভাগে বাড়ি ফিরছেন। বুধবার গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর মিরপুরে সাইদুর নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাড়ি যাচ্ছি। অফিস থেকে ৫ দিনের ছুটি নিয়েছি। ভোটের পর আবার ঢাকায় ফিরে আসব। নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিতে চাই। আমার এলাকায় একজন যোগ্য প্রতিনিধি আসবেন এই আশায় বাড়িতে ভোট দিতে যাচ্ছেন বলে জানান।

গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে বসে আছেন বাসের জন্য সাদ্দাম, শাহীন, জয়প্রকাশ ও কাদের। তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দিনাজপুরে বাড়ি যাচ্ছেন ভোট দিতে। এবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন তারা। তাই আগেই বাড়ি যাচ্ছেন। ভোট কেন্দ্রে যাবেন তারা ভোট দেবেন। তবে কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন সে বিষয়ে আগেভাগে কিছুই বলতে চান না এই শিক্ষার্থীরা। তাদের মতো এমন অনেকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন বাড়ি যেতে। কেউ নির্ধারিত বাস খুঁজতে ব্যস্ত, কেউ বাস কাউন্টারে দাড়িয়ে টিকিট নিচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকায় বসবাস করা অনেক মানুষ বাড়ি ফিরছেন।

হানিফ কাউন্টারের ম্যানেজার বেলাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ভোটের কারণে গত দুই সপ্তাহ থেকে অনেক মানুষ বাড়ি ফিরছেন। এ কারণে স্বাভাবিক সময়ের চাইতে বর্তমানে তাদের টিকিট বিক্রি বেড়ে গেছে। তবে টিকিটের মূল্য আগের মতো রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যারা বাড়ি যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশ মানুষ ভোট দিতে বাড়ি যাচ্ছেন। ভোটের পর আবারও ঢাকায় ফিরে আসবেন। নির্বাচনের পরে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী টিকিটের চাপ বেশি থাকবে বলেও জানান হানিফ কাউন্টারের ম্যানেজার।

এদিকে বুধবার সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, অন্য স্বাভাবিক দিনের চেয়ে আজ যাত্রীর উপস্থিতি বেশি। চলতি টিকিট কাউন্টারে মানুষের দীর্ঘলাইন। পাশাপাশি অগ্রিম টিকিট দেয়ার স্থলেও মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে অনেকেই অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের জন্য। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো মাত্রই শুরু হচ্ছে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি।

বিমানবন্দর রেলস্টেশনের অগ্রিম টিকিট কাউন্টারে কর্মরত আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভোট দেয়ার জন্য মানুষ ট্রেনযোগে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। তবে আগামীকাল ও পরশুদিনের অগ্রিম টিকিটের জন্য মানুষ বেশি ভিড় করছেন।

যানচলাচলে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা

এদিকে ভোটের দিন যানবাহন চলাচলের ওপর নির্দেশনা জারি করে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সড়কপথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এর আওতায় রয়েছে- বেবি ট্যাক্সি/অটো রিকশা/ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পুসহ স্থানীয় পর্যায়ে যন্ত্রচালিত বিভিন্ন যানবাহন। আর ২৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

তবে রিটার্নিং অফিসার অনুমোদিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৭ ডিসেম্বর থেকে চার দিন বন্ধ থাকবে ব্যাংকগুলো। এ সময় ব্যাংকে কোনো ধরনের লেনদেন হবে না।

নির্বাচনে বাড়তি নিরাপত্তা

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ৩৮৯ উপজেলায় সেনা ও উপকূলবর্তী ১৮টি উপজেলায় নৌবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন এক হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মাঠে থাকার কথা রয়েছে। অন্যান্য এলাকার পাশাপাশি বিজিবি সীমান্তবর্তী ৮৭ উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ ছাড়াও কয়েকটি উপকূলীয় কয়েকটি উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্র্যাইকিং ফোর্স হিসেবে কোস্টগার্ড মোতায়েন রয়েছে।

তথ্যসূত্র : জাগোনিউজ২৪.কম