পর্যটন শিল্পের হাতছানি নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া, ভাসানচর ও স্বর্ণদ্বীপ
রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮
টাঙ্গাইলদর্পণ নিউজ ডেস্ক : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বাংলাদেশে রয়েছে অনেক পর্যটক আকৃষ্ট দৃষ্টিনন্দন স্থান। স্থান গুলোতে প্রতি বছরই ভিড় করে সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটক। দেশের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যুগে যুগে বিমোহিত করেছে বিভিন্ন দেশি বিদেশী পর্যটককে। বর্তমান যুগে সব থেকে যুগোপযোগী শিল্প হচ্ছে পর্যটন শিল্প। আমাদের দেশেও রয়েছে এই পর্যটন শিল্প বিস্তার ও শক্তিশালী করার অপার সম্ভাবনা। প্রকৃতি আমাদের এই দেশকে অকৃত্রিম ভালোবাসায় সাজিয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের আবহাওয়া বেশ পর্যটক সহায়ক। সাধারণত পর্যটন শিল্পের দেশ গুলোতে বেশির ভাগই শীত প্রধান দেশ। কিন্তু আমাদের দেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় পর্যটকরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এমন আবহাওয়া পৃথিবীতে বিরল।
নদীমাতৃক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। ছোট-বড় হাজারো নদী ও উত্তাল
বঙ্গোপসাগরের সাথে এই দেশের এবং দেশের মানুষের গভীর মিতালি। উত্তাল সাগরের
কোলে সবুজ প্রকৃতির এক মায়াবী ভূখণ্ড নিঝুম দ্বীপ। দ্বীপের সৈকতে দাঁড়িয়ে
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে বারবার পর্যটক ফিরে যাবে। শুধু সূর্যোদয় ও
সূর্যাস্ত নয় চিত্রা হরিণ আর কেওড়া, বাইন, গেওয়া বন বারবার ডাকবে নির্জন
অপার সৌন্দর্যের এই নিঝুম দ্বীপে। কিন্তু কিছু অসুবিধার জন্য নোয়াখালীর
হাতিয়াদ্বীপ উপজেলার এই নিঝুম দ্বীপে যেতে অনেকেরই একটু বেগ পেতে হয়
বর্তমানে। সরকার নিঝুম দ্বীপকে ঘিরে সাজিয়েছে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে।
যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে।
নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের যাতায়াতে সুব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পর্যটকরা যাতে নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য
উন্নতমানের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে দেশে বিদেশী পর্যটকরা সহজে এবং
নিরাপদে ভ্রমণ করতে। শুধু তাই নয় থাকছে থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা। দেশি
পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরাও যেন ছুটে যান হাতিয়া হয়ে নিঝুম
দ্বীপে, সেজন্য সরকার দ্বীপ দু’টিকে ঘিরে ইকো-ফ্রেন্ডলি (ঐতিহ্য-প্রকৃতির
সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে) পর্যটন কেন্দ্র
গড়ে তোলা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য ৪৮
কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পুরোটাই হবে দেশীয়
অর্থায়নে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর ভিতর
থাকছে পর্যটকের যাবতীয় সুবিধা, তথা ক্যাটারিং, পিকনিক শেড, কিডস কর্নার,
বিনোদন পার্ক, ইয়ুথ ইন, কনফারেন্স হল, ওয়াচ টাওয়ার, কৃত্রিম লেক,
বার-বি-কিউ শেড, সার্ভিস ব্লক ইত্যাদি থাকবে এই দুই দ্বীপে। পুরো এলাকায়
জোরদার করা হবে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাও। শুধু তাই নয় এই পর্যটন শিল্পকে
ঘিরে গড়ে উঠবে কর্মসংস্থান। বর্তমানে দেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশুনা
শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্প দক্ষ কর্মীর মাধ্যমে আরো
শক্তিশালী ও ত্বরান্বিত হবে।
দেশের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রে জানা যায় যে, কেওড়া, বাইন, গেওয়া
বনের নিঝুম দ্বীপে ২২ হাজার চিত্রল হরিণের অভয়ারণ্য রয়েছে। নখরবিহীন
উদবিড়াল, মেছো বিড়ালের পাশাপাশি এই দ্বীপে আছে নিশি বক, দেশি কানিবক, গোবক,
দেশি পানকৌড়ি, ধূসর বক, বালিহাঁস, কালো হাঁস, কোড়া, তিলা লালগা, তিলা
সবুজপা। রয়েছে গুঁইসাপ, নানা প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপও। সুযোগ-সুবিধা
থাকলে এসব জীববৈচিত্র্য স্বভাবতই টানবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।
‘সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যানঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে
নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া, ভাসানচর ও স্বর্ণদ্বীপের সড়ক উন্নয়নের
মাধ্যমে দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে
বর্তমান সরকার। এর মাধ্যমে অন্যান্য শিল্পের মধ্যে পযটন শিল্পেও বাংলাদেশ
সফলতার স্বাক্ষর রাখবে।
তথ্যসূত্র :http://www.banglaramra.com/archives/15446