সখীপুরে ‘ব্রাহমা’ জাতের গরু পালনে সফল আকতারসহ শতাধিক খামারী

সখীপুরে ‘ব্রাহমা’ জাতের গরু পালনে সফল আকতারসহ শতাধিক খামারী

জুয়েল রানা,  সখীপুর প্রতিনিধী: টাঙ্গাইলের সখীপুরে মাংসল ‘ব্রাহমা’ জাতের গরু পালনে সফল হয়েছেন আকতার হোসেন, আবদুল হাই তালুকদার, গোলাম ফেরদৌসসহ আরো অনেকে। এ জাতের মাংসল গরু আমেরিকায় পালন করা হলেও ২০০৮ সাল থেকে সখীপুরে আকতার হোসেনসহ প্রায় শতাধিক খামারী এ জাতের গরু পালন করছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি ওইসব খামারীরা স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শ আর তত্ত্ববধানে তাদের খামারে তিন বছরের মাথায় এক একটি ষাড়ের ওজন দাড়িয়েছে ১ হাজার কেজি বা ১ টন করে। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খামারীরা এক একটি ব্রাহমা জাতের ষাড়ের দাম হাকছেন ১৩ থেকে ১৫  লক্ষ টাকা।

স্থানীয় প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে দেশের মাংসের ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ‘বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় আমেরিকা থেকে উন্নত ব্রাহমা জাতের মাংসল গরু অর্থাৎ ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন নিয়ে এসে নির্বাচিত দেশীয় জাতের গাভীকে প্রজনন দেওয়া হয়।  ২০০৮ সাল থেকে ক্রমান্নয়ে এ উপজেলায় ২০০ জন খামারিকে নির্বাচন করে পাঁচ শতাধিক গাভীকে প্রজনন দেওয়া হয়। এরইমধ্যে এ উপজেলায় প্রায় ২০০ টি  ব্রাহমা জাতের বাছুর জন্মেছে। এদের মধ্যে তিন থেকে  সাড়ে তিন বছরের বাছুরের ওজন দাড়িয়েছে  ৯’শ ৫০ থেকে ১ হাজার কেজি বা ১ টন। এ জাতের গরু এক বছরের মধ্যে দেশি গরুর চেয়ে তিনগুণ বেশি মাংস বৃদ্ধি ঘটায় বলে এটিকে মাংসলও বলা হয়। দিন দিন সখীপুরে যেহারে মাংসল বা ব্রাহমা জাতের গরু  পালন খামারির সংখ্যা বাড়ছে তাতে করে সখীপুর ও জেলা শহরের মাংসের চাহিদা মিটিয়ে দেশের সিংহ ভাগ মাংসের চাহিদা পূরণ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সরেজমিনে ঘুরে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গড়গোবিন্দপুর গ্রামের আকতার হোসেন খামারে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর  ব্রাহমা জাতের এক একটি ষাড় তিন বছর চার মাসের মাথায় ওজন দাড়িয়েছে ১ টন অর্থাৎ ১ হাজার কেজি। তার ১ টন ওজনের ষাড়ের দাম হাকছেন ১৫ লক্ষ টাকা। আকতার হোসেন ছাড়াও ১ টন ওজনের একই এলাকার নূরুর মিয়ার খামারে ২টি, সৈয়দ আলীর ২টি, বহেড়াতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফেরদৌসের ২টি, সানবান্ধা এলাকার আবদুল হাই তালুকদারের ২টি, বোয়ালী গ্রামের তাহের আলীর ২টি ব্রাহমা জাতের ষাড় এ ঈদে বিক্রি করা হবে। যার প্রতিটির মূল্য হাকা হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা।

খামারী আকতার হোসেন বলেন- স্থানীয় প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে ২০১৫ সাল থেকে তিনি ব্রাহমা জাতের গরু পালন শুরু করেছেন। তাঁর তিন বছর চার মাস বয়সী একটি ষাঁড়ের ওজন হয়েছে ১ হাজার কেজি (১ টন)। সামনের এ ঈদে তাঁর খামারের এক একটি ষাড় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা বিক্রি করার আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এ জাতের ষাঁড় খুবই শান্ত স্বভাবের। স্ত্রী ছাড়াও পড়াশুনার ফাঁকে তাঁর ছেলে মেয়েরাও ওই ষাঁড়ের পরিচর্যায় করে থাকে। দেশি গরুর মতো ব্রাহমা জাতের গরুও সবকিছু খায়। যার কারণে এটি  পালনে ব্যয়ও কম হয়। প্রতিদিনই তাঁর খামারে গরু দেখার জন্য স্থানীয়দের পাশাপাশি টাঙ্গাইল ও অন্যান্য জেলা থেকেও উৎসাহী মানুষজন ও খামারীরা ভীর করেন।

এ ব্যাপারে সখীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম উকিল উদ্দিন বলেন, খামারিদের বিনামূল্যে ওষুধপত্র ভ্যাকসিন সরবরাহ ও সার্বিকভাবে দেখবাল করা হচ্ছে। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতিটি গরু ১০ থেকে ১২ লাখ  টাকায় বিক্রি করতে পারবেন  বলে খামারীরা প্রত্যশা করছেন। এতে ব্যয় বাদে  অনেক লাভবান হবেন বলেও খামারীরা জানান।