সখীপুরে ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ প্রসূতি ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত

সখীপুরে ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ প্রসূতি ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত

জুয়েল রানা, সখীপুর প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় ভবনগুলো ক্রমেই ব্যবহার অনুপযোগী হতে চলেছে। এর মধ্যে তিনটি ভবনের দেয়াল ধসে পড়ায় ওইসব ক্লিনিকের পরিচালকরা (সিএইচসিপি) অন্যত্র ঘর ভাড়া নিয়ে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্য ১৪টি ক্লিনিকের পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকি নিয়েই রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। ওইসব ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রসূতি ও শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যহত হেেচ্ছ বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৭ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একটিতেও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ১৭টি ক্লিনিকের দেয়ালে ফাটল, মেঝে দেবে গেছে, ছাদের পলেস্তরা উঠে খসে পড়েছে। অধিকাংশ ক্লিনিকের টিওবয়েলের মাথাসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ খোয়া গেছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় কর্মরত কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) গরমে চরম কষ্টে সেবা দিতে হচ্ছে। এছাড়া তাদের জন্য দেওয়া ল্যাপটপগুলোও ক্লিনিকের ভেতর ব্যবহার করতে পারছেন না। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), একজন স্বাস্থ্যকর্মী ও একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত প্রসূতি ও শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা রয়েছে। বিশেষ করে প্রসূতিদের প্রসবের আগে ও পরের করণীয় বিষয়ে তাঁরা বিভিন্ন পরামর্শ ও সেবা দিয়ে থাকেন। এতে করে বাড়ির পাশেই প্রসূতি মা ও শিশুরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন।

সরেজমিনে উপজেলার প্রতিমা বংকী ও কালমেঘা আতিয়াপাড়া সিসি কমিউনিটি ক্লিনিক গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দেয়ালে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের পলেস্তরা খসে পড়েছে, টিওবয়েল অকেজো এবং বাথরুমটিও পরিত্যক্ত। স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা প্রসূতি মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘ভাঙা বিল্ডিংয়ে আসতে ভয় করে। তারপরও চিকিৎসা নিতে এখানে আসতে হয়।’ আতিয়াপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আবু হানিফ বলেন, ‘বৃষ্টি হলে ভবনের ছাদ চুঁয়ে পানি পড়ে। টিওবয়েলের মাথা চুরি হয়ে গেছে। সারাদিন এখানে থাকতে হয়। পানি ও বাথরুমের ব্যবস্থা না থাকায় খুব অসুবিধা হয়।

অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভবন ভেঙে পড়ায় ঘর ভাড়া করে সেবা দিচ্ছেন মহানন্দপুর, বেড়বা[ড়ী ও রতনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে। মহানন্দপুরের প্রোভাইডার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দেয়ালের অবস্থা নড়বড়ে, ভেঙে পড়ার ভয়ে রোগীরা ভেতরে বসে না। তাই অন্য একটি টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।’ ওই গ্রামের প্রসূতি রতœা আক্তার বলেন, ‘ওই ঘরডা যহন তহন (যে কোন সময়) ভাইঙা পড়তে পারে। এ জন্যে ডাক্তররা অন্য একটি ঘর ভাড়া নিছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকা করে জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এইচইডি) পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত ভবনগুলো সংস্কার করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে টাঙ্গাইল জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এইচইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কার বা পুন:নির্মানের জন্য তালিকা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।’