প্রায় ২’শত বছরের কালের সাক্ষী ঘাটাইলের ‘অচিন বৃক্ষ’

প্রায় ২’শত বছরের কালের সাক্ষী ঘাটাইলের ‘অচিন বৃক্ষ’

মোঃ রাশেদ খান মেনন (রাসেল) :   টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আমুয়াবাইদ গ্রামের প্রায় ২০০ বছর বয়সী এই বৃক্ষটির নাম জানে না এলাকার মানুষ। নাম না জানার কারণে গাছটি ‘অচিন বৃক্ষ’ নামেই পরিচিত এলাকার মানুষের কাছে। গাছটি ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যেও রয়েছে নানা কৌতূহল, রয়েছে নানা কথা-উপকথা।

প্রায় ২’শত বছরের কালের সাক্ষী ঘাটাইলের ‘অচিন বৃক্ষ’

গত ৩১ মার্চ শনিবার বাংলাদেশ পান্ট ট্যাক্সোনোমিস্ট সমিতি এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম গবেষণা করে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ২০০ বছরের পুরোনো অপর একটি অচিন বৃক্ষের নাম দিয়েছে ‘কুটি কদম’। ঘাটাইলের মানুষও গবেষকদের মাধ্যমে তাদের অচিন বৃক্ষের নাম দিতে চায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ পান্ট ট্যাক্সোনোমিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের কাছে গাছটির বেশ কয়েকটি ছবি পাঠালে তিনি জানান, এই উদ্ভিদটি বটের কোন প্রজাতী হতে পারে,তবে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে নাম নিশ্চিত করা যাবে।

ঐতিহ্যবাহী ঘাটাইল উপজেলার একটি জনবহুল সংগ্রামপুর ইউনিয়নের আমুয়াবাইদ গ্রাম। চাপড়ি-মাকড়াই সড়কের দক্ষিণ পাশে এবং গারোবাজার-পোড়াবাড়ি সড়কের উত্তর পাশে এই ২০০ বছরের অচেনা গাছটি দাড়িয়ে রয়েছে। ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান সামু’র বাড়ি থেকে প্রায় দুই হাজার গজ উত্তরে গাছটি। এ ইউনিয়নের আমুয়াবাইদ নামক স্থানে রাস্তার পাশে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা অচিন বৃক্ষটি এখন কালের সাক্ষী। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো গাছটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। অন্য যেকোনো গাছের সাথে কোনো ধরনের মিল না থাকায় টাঙ্গাইলসহ সারা দেশে মানুষের কাছে বৃক্ষটি অচিন গাছ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই অচিন গাছের নিচে এক সময় হাট বসত। অচিন নাম অনুসারেই হাটটির নাম ছিল অচিনতলা হাট। গাছটির নামকরণের ব্যাপারে স্থানীয়দের মধ্যে মতভেদ থাকলেও এ নামেই এখন প্রসিদ্ধ। গাছটির জন্য দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে টাঙ্গাইলের জনপদ। প্রাচীনতম এ গাছটি একনজর দেখার জন্য কৌতূহল নিয়ে উৎসুক দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে।

জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের নবগঠিত সংগ্রামপুর ইউনিয়নের আমুয়াবাইদ গ্রামে গাছটি কে বা কারা রোপণ করেছিলেন। গাছটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে ডালপালা ছড়িয়ে আজ বিশালাকার ধারণ করেছে। ভিনদেশী গাছ হওয়ায় এবং দেশীয় প্রজাতির কোনো গাছের সাথে মিল না থাকায় স্থানীয়রা গাছটির নাম দেন অচিন বৃক্ষ। পরে এ নামেই পরিচিতি লাভ করে।

আমুয়াবাইদ গ্রামের আব্দুস সামাদ নামে ৮০ বছর বয়সের এক ব্যক্তি জানান, ছোটবেলা থেকে এ গাছটি এমনই দেখছেন তিনি। এমনকি তার বাবা মৃত তছির উদ্দিনের কাছে এ গাছের বয়স সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছেন।
এ গামের ৭০ বছরের প্রবীন মো.হাতেম আলী জানান,এই অচিন গাছে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পাখি বাস করে। বিশেষ করে টিয়া পাখির সংখ্যাই বেশী।

মো.আ.হালিম মিয়া (৬০) জানান,বাপ-দাদারা বলেছেন কুচার দেশ থেকে কেউ হয়তো গাছটি চালান করে দিয়েছিল।
ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.নজরুল ইসলাম খান সামু জানান, গাছটির পাতা অনেকটা কাঠবাদাম গাছের মতো। এ গাছে ফুল হয় এবং ফুল থেকে ছোট এক ধরনের বীজ হয়। বীজ পড়ে গাছটির চার পাশে আরো কয়েকটি গাছের চারা হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে এ গাছের মতো কোনো গাছ তাদের নজরে পড়েনি। গাছের অত্যধিক বয়স হওয়ায় উপরি ভাগে ডালপালা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তবে গাছের নিচের অংশ এখনো রয়েছে সতেজ ও ডালপালায় ভরপুর। প্রাচীনতম এ গাছটি একনজর দেখার জন্য কৌতূহল নিয়ে উৎসুক দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ।

স্থানীয়রা জানান, বৃক্ষটি ঘিরে ওই এলাকায় পর্যটনশিল্প গড়ে উঠতে পারে। গাছটি যেন বেঁচে থাকে আরো বহুদিন, তার সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাদের দাবী ২০০ বছর পরে হলেও যেন গাছটির একটি নাম দেয়া যায়। আর সেই সাথে গাছটির পাশে যে রাস্তা রয়েছে তা প্রশস্ত করে ও বৃক্ষস্থলের আশপাশে মাটি ভরাট করে পর্যটনশিল্প গড়ে তোলা যায় এখানে। এ দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীও।