জাফর ইকবালকে হত্যা করতে এক বছর ধরে অনুসরণ করে ফয়জুল

জাফর ইকবালকে হত্যা করতে এক বছর ধরে অনুসরণ করে ফয়জুল

টাঙ্গাইল দর্পণ ডেস্ক :


জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করতে এক বছর ধরে অনুসরণ করে হামলাকারী ফয়জুল হাসান ওরফে শফিকুর। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই সূত্র আরও জানায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হামলার দিন (৩ মার্চ) শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যায় হামলাকারী ফয়জুল। সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে হামলার ছক কষে সে। এরপর ওইদিন বিকেলে আবার ক্যাম্পাসে গিয়ে জাফর ইকবালে ওপর হামলা চালায়।


জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুল র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তাদের জানায়, সকালে সে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখতে পায় একটি অনুষ্ঠান চলছে। সেখানে জাফর ইকবালকে ঘিরে অনেক শিক্ষার্থীরা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সকলের পরনে কালো টি-শার্ট। এরপর সে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখপাড়ার বাসায় গিয়ে কালো টি-শার্ট পরে ও ছুরি নিয়ে আবার ক্যাম্পাসে যায়। বিকেলে মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায় ফয়জুল।

সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়াও জানিয়েছেন, শনিবার বিকেলে হামলার আগে ওইদিন সকালে ফয়জুল আরেকবার ক্যাম্পাসে যায় বলে তারা তদন্তে জানতে পেরেছেন। তবে এই হামলায় ফয়জুল একাই অংশ নেয়, না আর কেউ ছিলে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। জানা যায়নি ফয়জুল কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না।

পুলিশের ধারণা, জঙ্গিবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই স্বঃপ্রণোদিত এ হামলা চালিয়েছে ফয়জুল। প্রায় একই ধারণা র্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদের।

পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ফয়জুল অনেকদিন থেকে জঙ্গিবাদী চেতনায় বিশ্বাসী ছিল বলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে। সে এখনো অসুস্থ। হাসপাতালে আছে। সুস্থ হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

এ ঘটনায় আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তবে তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া রোববার রাতেই মহানগরের জালালাবাদ থানা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ফয়জুলের বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান ও মা মিনারা বেগম। তারা বর্তমানে গোয়ান্দা পুলিশের কাছে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া শনিবার হামলার পরই ফয়জুরের মামা ফজলুকে আটক করে পুলিশ। এরপর ফয়জুলের দোকান মালিক মঈনহল হক মঈনকেও শনিবার মধ্যরাতে আটক করে র্যাব-৯। এ পর্যন্ত ফয়জুলে চাচাসহ তিনজনকে আটক করেছে এই এলিট ফোর্স।

হামলার ঘটনার পরই জাফর ইকবালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। রোববার রাতে দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ সদস্য মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তাদের প্রত্যাহার করে এসএমপি পুলিশ।

হামলার পূর্বমুহূর্তের একটি ছবিতে দেখা গেছে, জাফর ইকবাল শাবির মুক্তমঞ্চে চেয়ারে বসে আছেন। তার পেছনে দাঁড়ানো দুই পুলিশ সদস্য মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে হামলাকারী ফয়জুল। ফেসবুকে এই ছবিটি দিয়ে পুলিশের সমালোচনা করেন অনেকে।

তবে মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, পুলিশের দায়িত্বে কোনো গাফিলতি ছিল না। বরং জাফর ইকবালকে পুলিশই উদ্ধার করে হাসপাতালে আনে।

দু’জনকে প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য নয়, দায়িত্বরত অবস্থায় মুঠোফোন ব্যবহারের কারণে দু’জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এদিকে কেবল হামলাকারীকে বিচার আওতায় না এনে এ নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সোমবার শাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানান তারা। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কর্মবিরতি দিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। সোমবারও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস পরীক্ষা হয়নি।

বিক্ষোভ চলছে সিলেট নগরেও। সোমবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গণজাগরণ মঞ্চ সিলেট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ করে।

এই ঘটনা তদন্তে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটি সোমবার থেকে তাদের কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান শাবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল গনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠানে পেছন থেকে অধ্যাপক জাফর ইকবালের মাথা, পিঠে ও হাতে ছুরিকাঘাত করে ফয়জুল। পরে তাকে শিক্ষার্থীরা ধরে পিটুনি দিয়ে আটকে রাখে। পরে রাত সাড়ে ৯টায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাগীব রাবেয়া হাসপাতালে ও পরে সিলেট জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকৎসা দেয়া হয়।

রোববার বিকেলে ফয়জুলকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর ওসমানী হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানেই ফয়জুলের চিকিৎসা চলছে।