দীপন হত্যা : সাদাকালো ফুটেজে সন্দেহভাজন ৬

দীপন হত্যা : সাদাকালো ফুটেজে সন্দেহভাজন ৬

ক্রাইমনিউজ ডেক্স : রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যার ঘটনায় মার্কেটের বিভিন্ন পয়েন্টে লাগানো ৮টি সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করেছে গোয়েন্দারা। ফুটেজ দেখে কাঁধে ব্যাগসহ জিন্সের প্যান্ট ও শার্ট অথবা টি-শার্ট পরা ৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরই খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার তদন্তভার পুলিশের কাছ থেকে ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) কাছে আসে। এ ছাড়াও সিআইডি মামলার বিভিন্ন দিক ও আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তদন্ত করছে।

গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে বুঝা যায় যে, বেলা আনুমানিক ২টা ৪০ থেকে ২টা ৫০ এর মধ্যে হত্যাকাণ্ড হয়। খুনিরা মার্কেটে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অবস্থান করে। এদের মধ্যে একজনকে বেশি সন্দেহ করা হচ্ছে। কারণ সে মোবাইলে কথা বলছিলো বেশি। শেষ মুহূর্তে অন্যদের সঙ্গে একসঙ্গে তড়িঘড়ি করে মার্কেট থেকে বের হয়ে যায় সে।

যাকে বেশি সন্দেহ করা হচ্ছে তার পরনে শার্ট ও জিন্স প্যান্ট ছিল। তবে বাকি যে ৫ জনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের পরনেই জিন্সের প্যান্ট ও শার্ট বা টি-শার্ট ছিল। কিন্তু ফুটেজ সাদা-কালো হওয়ায় পোশাকের ও শরীরের রং বোঝা যায়নি। ৬ জনের কারোরই মুখে দাড়ি ছিল না। তাদের আনুমানিক উচ্চতা হবে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ফুট। দুজনের কাঁধে ব্যাগ ছিল। তাদের দেখতে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলেই মনে হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখন তেমন কিছু বলা যাচ্ছে না।’

আজিজ সুপার মার্কেটের মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোরসালিন বলেন, ‘পুলিশ সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত শুরু করলে খুনিদের শনাক্ত করতে পারবে। যারা ওই স্টলে প্রবেশ করেছিল ফুটেজে তারা সবাই ধরা পড়েছে।’

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দারা। এ সব আলামতের মধ্যে এক থেকে দুই ইঞ্চি লম্বা চুলও রয়েছে। এজন্য চুলগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। যেহেতু সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায় যে সন্দেহজনকদের চুল ছোট করে কাটা, তাই এগুলো খুনিদের হতে পারে।

আলামত হিসেবে দীপনের পরনের কাপড়ও সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলে পাওয়া চশমা, স্যান্ডেল ও রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ফুটেজে দেখা যায়, দীপন দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত একটি গাড়িতে করে মার্কেটে এসেছিলেন।

এই মার্কেটের সামনের দিকে তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে। এছাড়া মার্কেট ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে সীমানা প্রাচীরের ভেতরে আরও দুটি প্রবেশপথ রয়েছে। এর বাইরে পূর্ব পাশের মেডিসিন মার্কেট দিয়েও আজিজ মার্কেটে প্রবেশ করা যায়। মার্কেটে তিন শিফটে নিরাপত্তা রক্ষী থাকলেও সবাই নিচে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় নিরাপত্তা রক্ষীরা থাকেন না।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ‘আনসারুল্লাহ বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠন এ হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সম্ভাব্য সকল আলামত সংগ্রহ করে গোয়েন্দারা তদন্ত করছে। খুনি ও তাদের সহযোগীদের শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে।’

‘৮টি সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছয়জনকে শনাক্ত করা গেছে’ উল্লেখ করে আজিজ মার্কেট সমিতির সভাপতি নাজমুল আহসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘তাদের মার্কেটে অযথা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি, চলাফেরা দেখে সন্দেহ করা হচ্ছে। তারা দীপনের গাড়ি ফলো করছিলো।’

প্রসঙ্গত, রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে শনিবার বিকেলে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে। একই সময় মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার সি ব্লকের ৮/১৩ নম্বর বাসায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলায় গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল, লেখক ও ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিম গুরুতর আহত হন। পরে দুর্বৃত্তরা কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে বিকেলে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন।

ওই প্রকাশনা দুটি থেকে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক নিহত অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র : দ্য রিপোর্ট২৪।