‘পেশা পরিবর্তন করে বনদস্যুরাই বাঘ শিকারি’

‘পেশা পরিবর্তন করে বনদস্যুরাই বাঘ শিকারি’

ডেক্স নিউজ : সুন্দরবনের অনেক বনদস্যুই এখন পেশা পরিবর্তন করে বাঘ শিকারে নেমেছে বলে জানিয়েছেন খুলনা রেঞ্জ’র ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামান। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।

৯ আগস্ট সুন্দরবনে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ছয় বাঘ শিকারি ও বনদস্যু নিহত হয়। এর আগে এ দস্যুদের কাছ থেকে বাঘের চামড়া, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে  এ প্রেস ব্রিফিং’র আয়োজন করা হয়।

এস এম মনির-উজ-জামান বলেন, সুন্দরবনে প্রতিনিয়তই বনদস্যু ও বাঘ শিকারির সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন সময় পরিচালিত অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে কয়েকটি দস্যু বাহিনীর প্রধান ও তাদের সহযোগীরা নিহত হয়েছে। কিন্তু তাদের আরও অসংখ্য সদস্য রয়ে গেছে। অনেককেই এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ফলে তারা এখন পেশা পরিবর্তন করে বাঘ শিকারে নেমেছে।

তিনি দাবি করেন, বন্দুকযুদ্ধে নিহত ছয়জন সুন্দরবনের ত্রাস ইলিয়াস ও জাহাঙ্গীর বাহিনীর সদস্য।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. জহির উদ্দিন আহমেদ তার প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতার কথা স্বীকার করে প্রেস বিফ্রিংয়ে বলেন, পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় দস্যুদের ঠেকানোর মতো সক্ষমতা নেই বনরক্ষীদের। এমনকি বনের মধ্যে অনেক বিট অফিসের রক্ষীদের অস্ত্রের পরিবর্তে শুধু লাঠি দিয়ে বন পাহারা দিতে হয়। ফলে বনের বৈধ সম্পদ আহরণকারীদের অনেকেই এখন বাঘ শিকারে নেমেছে। এছাড়া বনদস্যুরাও পেশা পরিবর্তন করে বাঘ ও হরিণ শিকার করছে। ফলে বাঘের সংখ্যা ৪৪০ থেকে কমে এখন ১০৬ এ নেমে এসেছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, বনরক্ষীদের কাছে যে অস্ত্র আছে, তা দিয়ে বন দূরে থাক, তারা নিজেদেরই রক্ষা করতে পারে না।

তিনি বলেন, আইনানুযায়ী খুলনায় বন আদালত থাকার কথা থাকলেও তা নেই। অন্য আদালতে বন মামলা পরিচালনা করতে হয়। ফলে অন্য মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে বন মামলার গুরুত্ব কমে যায়। এতে করে অপরাধীরা বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়।

এ সময় তিনি খুলনায় বন আদালত স্থাপন ও সুন্দরবন রক্ষায় বনে সব ধরনের সম্পদ আহরণের পারমিট প্রদান বন্ধের দাবি জানান।

ব্রিফিংয়ে পুলিশ ও বন কর্মকর্তারা সুন্দরবনের বাঘ নিধন বন্ধে শিকারি ও বনদস্যু দমনে টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান।

বাঘ রক্ষা করতে না পারলে সুন্দরবনকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না উল্লেখ করে তারা সুন্দরবন রক্ষার বিষয়ে দৃঢ়তা প্রকাশ করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত ডিআইজি মো. একরামুল হক ও পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, রোববার (৯ আগস্ট) বিকেলে সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ছয় বাঘ শিকারি নিহত হন। নিহতরা হলেন- আনসার সানা (৫৫), সিদ্দিক সানা (৪৫), রফিকুল ইসলাম (৩৮), মজিদ গাজী (৩৫), মামুন গাজী (২৫) ও বাপ্পি হোসেন (২০)।