২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় খালেদা-তারেক জড়িত

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় খালেদা-তারেক জড়িত

ডেক্স নিউজ : একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের বিচার অবশ্যই হবে এবং আসামিরা শাস্তি পাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ ওই সময় (বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে) যত হত্যাকাণ্ড ও অপরাধ হয়েছে তার বিচার হতেই হবে। বিচারে আসামিরা শাস্তি পাবে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত যেই হোক, ছাড় পাবে না। বিচার না হলে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে। গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান জড়িত বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।

২১ আগস্ট শহীদদের স্মরণে শুক্রবার (২১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সভায় বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার (বঙ্গবন্ধু হত্যা) সঙ্গে যেমন জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন। তেমনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও ছেলে তারেক রহমান জড়িত ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। রশিদ-ফারুক সাক্ষাৎকারে বলেছিলো, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে তারা জিয়াউর রহমানের কাছে গিয়েছিলো। জিয়া তাদের বলেছিলো, তারা যদি সফল হতে পারে তাহলে জিয়া তাদের সঙ্গে আছে। তার মানে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়া জড়িত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা ক্ষমতায় থেকে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত মানুষ হত্যা করেছে। আবার গত ২০১৩ ও চলতি ২০১৫ সালে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। খালেদা জিয়া দলীয় কার্যালয়ে বসে নির্দেশ দেন। আর তার ছেলে তারেক লন্ডনে বসে হুকুম দিয়েছেন। এরা শুধু খুনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। মানুষ খুন করে তারা আনন্দ পায়। ২১ আগস্টের হত্যার বিচার কাজ চলছে। বিচার হবে। আসামিরা শাস্তি পাবে। যারা নিহত হয়েছেন তাদের স্বজনরা এবং যারা আহত তারা বিচার পাবে। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে তারও বিচার হবে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত যে হোক, যে দলেরই হোক, যত বড়ই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বঙ্গবন্ধু হত্যার সাজাপ্রাপ্ত যেসব খুনি পালিয়ে রয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো খুনিকে কোনো কোনো দেশ আশ্রয় দিয়েছে। যেমন আমেরিকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে। কানাডা আশ্রয় দিয়েছে। পাকিস্তানে ডালিম-রশিদ পালিয়ে আছে। ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমেরিকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত দিচ্ছে না। কানাডাও দিচ্ছে না। অথচ এরা যখন মানবাধিকারের কথা বলে তখন কষ্ট হয়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, যে খুনিরা অন্তঃসত্ত্বা আরজু মনিকে হত্যা করেছে, শিশু রাসেলকে হত্যা করেছে, তারা সেই খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে। তখন তাদের মানবাধিকার কোথায় থাকে?

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৪ সালে আমরা সন্ত্রাসবিরোধী ৠালি করতে গিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার শিকার হই। গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। যে গ্রেনেড যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, সেই গ্রেনেড আমাদের শান্তির সমাবেশে মারা হয়েছিলো। ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। শত শত নেতাকর্মী এখনও স্প্রিন্টার নিয়ে বেঁচে আছে। এই ধরনের হামলা হওয়ার পরপরই সরকারের দায়িত্ব ছিল আলামত সংরক্ষণ করা, মামলা করা। তখন ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি-জামায়াত। খালেদা জিয়া তখন প্রধানমন্ত্রী। আলামত রক্ষা করা তো দূরের কথা, রাস্তায় পানি দিয়ে সব ধুয়ে দিয়েছিলো। দু’টি গ্রেনেড অবিস্ফোরিত ছিল, সে দু’টিও রক্ষা না করে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিলো, যেন গ্রেনেড হামলার কোনো প্রমাণ না থাকে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গ্রেনেড হামলার পর পুলিশ এসে আহত-নিহতদের সহযোগিতা না করে হামলা চালায়, লাঠিচার্জ করে, টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে। আক্রমণকারীদের নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার জন্যই যেন এই ব্যবস্থা। এরপর খালেদা জিয়া ও তার দলের নেতারা বলা শুরু করলেন, আমরাই নাকি গ্রেনেড মেরেছি। আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়ে নিজে নিজেই মেরেছি। এ ঘটনা নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে দেয়নি। সংসদে বিএনপি-জামায়াতের সদস্যরা বলেছেন, ১৫ আগস্টের ঘটনা যেভাবে ঘটেছে, আমার পিতা যেভাবে জীবন দিয়েছেন, আমাকেও সেইভাবে যেতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, সরকার রাতের মধ্যেই তাদের বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। আইভি রহমান সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে) চিকিৎসায় ছিলেন, তখন তার ছেলেকেও তার কাছে থাকতে দেওয়া হয়নি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেখতে গেলেও তখন আইভি রহমান মৃতপ্রায়, কিন্তু তার ছেলে-মেয়েদের একটি রুমের মধ্যে আটকে রাখা হয় তখন। কেন তাদের আটকে রাখা হয়েছিল, এর রহস্য কী?

শেখ হাসিনা বলেন, বারবার মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখেছি। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। যতদিন জীবন আছে, এদেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবো।

এর আগে, বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ২১ আগস্টের শহীদদের প্রতি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দলের নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মঞ্চে যান শেখ হাসিনা। সেখানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতের পর প্রধানমন্ত্রী সভায় বক্তৃতা শুরু করেন।

বক্তৃতা শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে চলে যাওয়ার পর অস্থায়ী বেদী উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং ১৪ দলের শরিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় ছিলেন আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাসিম, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া প্রমুখ।