হতাশা কাটিয়ে শান্তর নির্ভীক হয়ে ওঠার রহস্য

হতাশা কাটিয়ে শান্তর নির্ভীক হয়ে ওঠার রহস্য

হতাশা কাটিয়ে শান্তর নির্ভীক হয়ে ওঠার রহস্য

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিপিএলে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিং দুই ভাগে ভাগ করা যায়। লিগ পর্বের শুরুর অংশ আর শেষাংশ। এ দু’য়ের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য মিলবে!

প্রথম ৮ ম্যাচে এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের রান ছিল ১১৫। সেই ব্যাটসম্যান গতকাল এক ম্যাচেই করলেন ১১৫? কল্পনাতীত ভালো খেলেছেন শান্ত। কল্পনাকেও হার মানানো এই ধ্রুপদী ইনিংসের পেছনে রয়েছে রহস্য। যেখানে রয়েছেন একজন কারিগর। যিনি শুধু আত্মবিশ্বাস দিয়ে পাল্টে দিয়েছেন শান্তকে। কাটিয়েছেন তার হতাশাকে।

শনিবার মিরপুরে শান্ত হঠাৎ হয়ে উঠেন অশান্ত! ব্যাট হাতে রুদ্রমুর্তি ধারণ করেন। কোনোভাবেই তাকে আটকানো যাচ্ছিল না। সেট হওয়ার পর চমকে দেন সবাইকে। অবাক করা একেকটি শট যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিলো যুব ক্রিকেটের শান্তকে।

ঢাকার দেওয়া ২০৬ রান তাড়া করে যখন জয় নিশ্চিত করলেন শান্ত তখন তার মুখে প্রাপ্তির হাসি। ৫৭ বলে তার নামের পাশে লেখা ঝকঝকে ১১৫ রান। এবারের আসরে যা সর্বোচ্চ। ৮ চার ও ৭ ছক্কায় মোড়ানো ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। এর আগে ক্যারিয়ারে ছিল মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি। সেটাও ২০১৬ সালে নিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে। এরপর ৫০ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন শান্ত। কিন্তু একটি ইনিংসেও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ছাড়াতে পারেননি শুরুর সে ইনিংসকে।

দীর্ঘ পথ চলার পর অবশেষে আসল মাহেন্দ্রক্ষণ। তাইতো কঠিন পথটাকে মনে করতেই গা শিউরে উঠেন শান্ত, ‘সত্যি বলতে আসলেও খুব হতাশ ছিলাম। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। এই ফরম্যাটে আমি দ্রুত হতাশ হয়ে যায়। লুকানোর কিছু নেই। ’

তার এ হতাশা কাটিয়েছেন তার দল খুলনা টাইগার্সের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। সেটা কিভাবে? সেই রহস্য জানিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

‘শেষ দুই মাস আমার উপরে ভরসা রেখেছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন স্যার ও কুমিল্লার কোচ সোহেল স্যার। সুজন স্যার সব সময় আমাকে বলেছেন, ‘‘তুই কতো ভালো খেলোয়াড় আমরা দেখেছি। আমাদের সেই বিশ্বাসটা আছে। ’’ সব সময় উনারা সহযোগীতা করেছে এবং এখনও যে সহযোগীতা করে যাচ্ছে সেটা আমার ব্যাটিংয়ে কাজে লেগেছে। তাদের অনুপ্রেরণায় আমার ভেতর থেকে এসেছে যে আমি পারি। ’

শান্ত জানালেন স্কিলের থেকে খালেদ মাহমুদের থেকে মানসিক শক্তি পেয়েছেন তিনি। সেটাই পারফরম্যান্সের পেছনে বড় টনিক হিসেবে কাজ করেছে।

শতরানের ইনিংসটি সাজাতে শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিং করলেও শুরুতে শান্ত ছিলেন চুপচাপ। লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটার আক্রমণটা সামলান মেহেদী হাসান মিরাজ। শান্ত সময় নেন থিতু হতে। এরপর শুরু হয় তার কড়া শাসন। মিরাজের সঙ্গে শান্তর ওপেনিং জুটিতে আসে ৭০ রান। তাতে মিরাজের রান ৪৫, শান্তর ২৪।

নবম বলে তার ব্যাট থেকে আসে প্রথম বাউন্ডারি। ছক্কার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২২ বল পর্যন্ত। শুরুতে খানিকটা মন্থর হলেও থিতু হওয়ার পর মাঠ মাতিয়ে রাখেন এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সময় নিয়ে ইনিংস সাজানোর সুযোগ পাওয়ায় বন্ধু মিরাজকে ধন্যবাদ দিতে ভুল করেননি শান্ত।

‘২০০ রান তাড়া করতে হলে দুই দিক থেকেই আক্রমণ করতে হয়। মিরাজ যেভাবে ব্যাটিং করেছে তাতে আমার ব্যাটিং খুব সাহায্য করেছে। আমি শুরুর দিকে ওভাবে টাইমিং করতে পারছিলাম না। ধন্যবাদ মিরাজ যে, ও শুরু থেকে আমাকে বাঁচিয়েছে। উইকেট খুব ভালো ছিল। পরবর্তীতে আমি শুধু বল দেখেছি ওই অনুযায়ী শট খেলেছি।’

জাতীয় দলে তিন ফরম্যাটেই খেলেছেন শান্ত। কোনোটাতেই সুবিধা করতে পারেননি। অথচ যুব দলে থাকাকালিন তাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখেছিল বিসিবি। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে শান্ত মেলে ধরতে পারেননি। সেখানেই সব শেষ। না শেষ করতে চান না শান্ত। জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরতে মুখিয়ে থাকা এ ক্রিকেটার জানালেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করেই ফিরতে চান। এরপর বড় মঞ্চে পারফর্ম করে জায়গা পাকাপাকি করার ইচ্ছা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের।


ঢাকা/ইয়াসিন/ কামরুল



from Risingbd Bangla News https://ift.tt/36N2WqV