বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় ২ ও চালে বেড়েছে ৫ টাকা

বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় ২ ও চালে বেড়েছে ৫ টাকা

অর্থনীতি ডেস্ক :


এবার কেজিপ্রতি বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় গত বছরের তুলনায় ২ ও চালে ৫ টাকা বেড়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ফসল বোরোর প্রতিকেজি ধানের উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ আর চালের ৩৬ টাকা। গত বছর এ ব্যয় ছিল ধানে ২২ ও চালে ৩১ টাকা।

সম্প্রতি সচিবালয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বোরোর উৎপাদন ব্যয় প্রাক্কলন সংক্রান্ত এক সভায় এ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নীতি, পরিকল্পনা ও সমন্বয়) মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে ওই সভায় নজমুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন।


এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু খরচ মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এবার বোরোর উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে বোরোর ধান ও চালের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’

এ ব্যয়ের সঙ্গে কৃষকের লাভ যুক্ত করে সরকারিভাবে বোরো ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়।


খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় লক্ষ্যমাত্রা ও মূল্য নির্ধারণ করার পর বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম সাধারণত মে মাসে শুরু হয়ে আগস্ট পর্যন্ত চলে।

কবে সরকারের বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ও মূল্য নির্ধারণ করা হবে জানতে চাইলে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের মহাপরিচালক এম বদরুল আরেফিন বলেন, আশা করছি এপ্রিলের প্রথমার্ধে আমরা সভায় বসতে পারব। সেখানেই বোরোর সংগ্রহ মূল্য ও পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, শ্রমের মজুরি (পারিবারিক ও ভাড়াকৃত শ্রম), বীজ, জৈবসার, জমি কর্ষণবাবদ খরচ, সেচ ও ধান হতে চাল করার মিলিং খরচ (সিদ্ধ ও পরিবহনসহ), তুষ বা কুড়ার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে বোরোর উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এবারও একই নিয়মে উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।

উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ সভায় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, খাদ্য অধিদফতর, খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি বিপণন অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এবার এক কোটি ৯০ লাখ টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। গত বছর এক কোটি ৮০ লাখ ১৩ হাজার টন বোরো চাল উৎপাদিত হয়েছিল।

এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক কোটি ৮০ লাখ ৩৭ হাজার টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক কোটি ৯১ লাখ ৯৩ হাজার টন ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক কোটি ৯০ লাখ ৭ হাজার টন বোরো চাল উৎপাদিত হয়েছিল।


গত ৫ বছর ধরে দেশে আউশ, আমন, বোরো, গম, ভুট্টাসহ মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৩ কোটি ৮০ থেকে ৯০ লাখ টনের মতো হয়ে থাকে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সরকারি খাদ্যশস্যের মজুদ গড়ে তুলতে বোরো থেকেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ করা হয়। সরকার গত বছর বোরোতে ৭ লাখ টন ধান ও ৮ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। চালের সংগ্রহ মূল্য ছিল ৩৪ ও ধানের ২৪ টাকা।

কিন্তু ধান-চালের বাজার লাগামহীন হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে লক্ষ্য অনুযায়ী বোরো সংগ্রহে ব্যর্থ হয় সরকার। দাম বেড়ে যাওয়ায় মিল মালিক (মিলার) ও কৃষকরা নির্ধারিত মূল্যে ধান-চাল সরবরাহ না করায় বোরো সংগ্রহ থেকে পিছু হটতে হয় সরকারকে। গত বছর ১৫ লাখ টনের মধ্যে মাত্র আড়াই লাখ টনের মতো ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছিল সরকার।

বোরো সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের চালের মজুদ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো বাড়িয়েছিল চালের দাম, যা এখনো কমেনি। চালের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে নিম্ন আয়ের মানুষ।