দুদলের তিন সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনীতি অঙ্গণ

দুদলের তিন সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনীতি অঙ্গণ

রাজনীতি ডেক্স :  ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তিনটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক ময়দান। পাশাপাশি প্রধান দুই দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ব্যাপক যানজট হওয়ার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।

মঙ্গলবার আড়াইটায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ও ধানমন্ডি-৩২ নম্বর সড়কের রাসেল স্কয়ারে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৩০ ডিসেম্বর দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচনের উত্তাপ কমতে না কমতে মঙ্গলবার দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি পালন নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে এটা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল যেমন ভূমিকম্পের কম্পনে ঘুম ভাঙার পর ঘর থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টায় হুড়োহুড়ির মধ্যে আতঙ্কিত হয়ে ঢাকা, জামালপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অনেক স্থানে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। ঠিক তেমনি উভয় দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আজ যেন এমন হতাহত বা মৃত্যুর খবর না আসে। যেন রাজনীতির মাঠে আবারও না ফিরে আসে গত বছরের ৫ জানুয়ারি।

এদিকে সোমবার ৬ দশমিক ৭ মাত্রার এই শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ঠিক এমনি আজ দুপুর একটার পর থেকেই রাজনৈতিক কম্পনে অনুকম্পিত হয়ে উঠবে দেশের রাজনীতি।

কারণ, গতকাল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নিজ নিজ কার্যালয়ের সামনে শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে উভয় দলই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিন ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস এবং ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ পালনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চায়। দুই দলের একই স্থানে, একই দিনে সমাবেশের আবেদনের কারণেই কোন দলকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। এরপর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এবং বিএনপি নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চায়।

তবে ডিএমপি উভয় দলকেই কয়েকটি শর্তে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তা হলো- নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে হবে অর্থাৎ দুপুর থেকে মাগরিবের আজানের পূর্বেই শেষ করতে হবে; মাইক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে; দলীয় কার্যালয়ের ভেতর ও সামনে সমাবেশ করতে হবে; যানজট তৈরি করা যাবে না; সড়ক অবরোধ করা যাবে না; ব্যানার-ফেস্টুনের আড়ালে লাঠিসোঁটা আনা যাবে না; মিছিল করে সমাবেশে আসা যাবে না; পুলিশের দেওয়া চৌহদ্দির ভেতরে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শেষ করতে হবে।

গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের জরুরি বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে বলেন, ‘আবার নতুন করে চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা পরিষ্কার ভাষায় খালেদা জিয়াসহ জামায়াতকে জানিয়ে দিতে চাই- ষড়যন্ত্র করছেন, নাশকতা করেছেন, জনগণ তার সমুচিত জবাব দিয়েছে। কালকে আপনাদের জনসভা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বাংলার জনগণ দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীও দেখতে চায়- আপনারা কাল কোন ধরনের জনসভা করেন। যদি মনে করেন নাশকতা করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করবেন। তাহলে এর পরিণতি ভালো হবে না। শুভ হবে না। এর কঠোর জবাব দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত আছে- এটা মাথায় রেখে আপনারা কর্মসূচি দেবেন।’

একই সভায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ত্রাণ ও দুর্যোগমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিএনপির তাণ্ডব কিন্তু বোঝা যায় না। খালেদার যে চরিত্র মানুষ হত্যা আর রক্ত ছাড়া কিছু বোঝে না।  এ ছাড়া ওই সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কালকে যদি তারা কোনো সন্ত্রাসের কথা চিন্তা করে থাকে তাহলে এর সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে থেকে তাদের মোকাবিলা করবে।’

সোমবার রাতে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশে আসবেন, যাতে রাস্তায় বা অন্য কোথাও যানজটের সৃষ্টি না হয়। একই সঙ্গে কোনো রকম উসকানির মুখেও প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। জনসভা শান্তিপূর্ণ হবে।’