পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ সৌর প্রকল্প! একটুও অগ্রগতি নেই

পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ সৌর প্রকল্প! একটুও অগ্রগতি নেই

টাঙ্গাইলদর্পণডটকম : নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের পরিকল্পনায় হোঁচট খাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে গ্রিডভিত্তিক টেকসই জ্বালানির নতুন কোনো প্রকল্পই আসেনি। এমনকি দু’ট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক চুক্তি হলেও সেগুলো এখনো আঁতুর ঘরেই আছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত সরকারি আর বেসরকারি (আইপিপি) মিলিয়ে মোট ৮৪০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, যেগুলোর সবই পরিকল্পনাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

জানা গেছে, এসব প্রকল্পের জন্য প্রধান সমস্যা হচ্ছে অর্থায়ন এবং পর্যাপ্ত জমি। এ ধরনের কোনো প্রকল্প এখনো বাস্তবায়িত না হওয়ায় স্থানীয় ব্যাংকগুলো দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগেও ভরসা পাচ্ছে না। আবার সরকারও গ্রিডভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রণোদনা নেয়নি। তাই এ খাতে আশানুরূপ সাফল্য আসেনি। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, সোলার হোম সিস্টেমে সরকার বিশেষ প্রণোদনা কর্মসূচি নেয়ায় তা সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচলিত ধারণা হলো সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প অনেক ব্যয়বহুল। এর পেছনে  যুক্তি হিসেবে তারা বলেছেন, এসব প্রকল্প সাধারণত জমি লিজ নিয়েই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কিন্তু ব্যাংকগুলো নিজস্ব সম্পত্তি ছাড়া ঋণ দিতে চায় না। তাই উদ্যোক্তাদের জমি কিনতেই হবে। এতে প্রকল্প ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে প্রচুর বিনিয়োগ লাগলেও সৌর বিদ্যুৎ আদতে সাশ্রয়ী ব্যবসা, তাই এর জ্বালানি খরচ শূন্য। এতে পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে পুরো বিসিয়োগ উঠে আসে। আর এসব কেন্দ্রের নূন্যতম জীবন সীমা ২০ বছরেও বেশি হয়। 

পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কতটুকু:
সরকারি আর বেসরকারি (আইপিপি) মিলিয়ে মোট ৮৪০ মেগাওয়াটের ১৯টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে পিডিবির মহাপরিকল্পনায়।

এদের মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলপুরে প্রথম গ্রিড ভিত্তিক সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পরে উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য ২০১১ সালের ডিসেম্বরে একটি বেসরাকরি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সে সময় বলা হয়েছিল, ১৮ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হবে উপমহাদেশের সব থেকে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। পরে উদ্যেক্তা কোম্পানি প্রকল্প নিজেকে সরিয়ে নেয়।

এরপর জামালপুরের সরিষাবাড়িতে তিন মেগাওয়াটের এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য গত বছর চুক্তি করে পিডিবি। কেন্দ্রটি ২০১৬ এর ডিসেম্বরের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা। কিন্তু এখনো কোনো কাজই শুরু হয়নি। কবে শুরু হবে তা বিদ্যুৎ বিভাগও জানে না। গত ২৯ জুলাই বিদ্যুৎ উদ্যোক্ত কোম্পানি জামার্নির আইএফই (এরিকসেন) এবং বাংলাদেশের কনকর্ড প্রগতি কনসোর্টিয়াম (সিপিসি) ও জুপিটার এনার্জি লিমিটেড (জেইএল) এর যৌথ কনসোর্টিয়ামকে তাগাদা পত্র পাঠায় বিদ্যুৎ বিভাগ।

কুড়িগ্রামের ধরলা তীরে ৩০ মেগাওয়াট সোলার পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা আটকে আছে দু’বছর ধরে। জমি সংক্রান্ত জটিলতায় এটিও বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও আগামী জুনে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নদীর তীর সংরক্ষণ বিষয়ে পিডিবি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। প্রকল্পটির জন্য ১১০ একর জমির প্রয়োজন।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ৬০ মেগাওয়াটের সোলার পার্কের জন্য জমি প্রয়োজন ২০০ একর। জমি অধিগ্রহণ এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি।

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে সাত দশমিক চার মেগাওয়াটের সৌর প্রকল্পর বিদ্যুৎ ক্রয় প্রস্তাব গত ১ জুলাই সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।

হাতিয়া চার দশমিক দুই মেগাওয়াটের কেন্দ্রর প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ব্র্যাক। প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের অর্থে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে। ২০১৭ সালের জুন মাসে এখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে।  উৎপাদনে আসার কথা।

ঈশ্বরদী এবং সিরজগঞ্জের দু’টি প্রকল্পের ছাড়পত্র পেতে পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এগুলো যথাক্রমে দুই এবং এক মেগাওয়াটের। এখনো কাজ শুরু না হলেও আগামী এক বছরের মধ্যে কেন্দ্র দু’টির কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

ফেনীর সোনাগাজিতে ১০০ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্পের জন্য ৪৪৯ একর জমি অধিগ্রহণ করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের অর্থে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা।

সিরাজগঞ্জের শিমুলিয়ায় ৫ মেগাওয়াটের একটি সোলার পার্ক স্থাপন করবে সরকারি সংস্থা নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। তবে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং সেতু বিভাগের মধ্যে জটিলতা রয়েছে।

এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি) মুন্সিগঞ্জে একটি ৭৫ মেগাওয়াটের সৌর প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০১৭ সালের জুনে উৎপাদনে আসার জন্য নির্ধারিত প্রকল্পটির প্রস্তাবনা (ডিপিপি) কেবল চূড়ান্ত হয়েছে। একই কোম্পানি ৩৬ কিলোওয়াটের একটি মিনি গ্রিড সৌর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা আগামী ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরুর কথা। কিন্তু এর সর্বশেষ তথ্য হলো পরামর্শক কেবল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছে। অন্য কর্মকাণ্ড বহুদূরে।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ময়মনসিংহে ৫ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুতের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করছে।

আরইবি এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি রাজশাহীর পদ্মার চরে ২০০ মেগাওয়াটের প্রকল্প নির্মাণের কথা ভাবছে। তারা পাওরসেলের মাধ্যমে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপ করতে চায়।

বেসরাকরি প্রকল্পগুলোর মধ্যে সান এডিশন কোম্পানি কক্সবাজারে ২০০ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প নির্মাণ করতে চায়, যার প্রস্তাবনা ক্রয় প্রস্তাব সংক্রান্ত কমিটিতে পাঠানো হয়েছে অনুমোদনের জন্য। জুয়েলস পাওয়ার নামে আরেক কোম্পানিও কক্সবাজারে ২০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র করার জন্য প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এছাড়া ৫২ মেগাওয়াটের আরো দু’টি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য জমা হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতির বিষয়ে জানতে চাইলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান তাপস কুমার রায় বলেন, ‘নতুন যে কোনো কিছুতেই প্রথমে একটু সমস্যা হয়। তবে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে গেলেই চিত্র পাল্টে যাবে।’

তথ্যসূত্র : বাংলামেইল২৪ডটকম