নিরাপত্তা ইস্যু : নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাক খাত

নিরাপত্তা ইস্যু : নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাক খাত

অর্থনীতি ডেক্স : শনির দশা পিছু ছাড়ছেনা দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের। রাজনৈতিক অস্থিরতা, কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধস, শ্রমিক অসন্তোষ, জিএসপি সুবিধা স্থগিতসহ নানা কারণে একের পর এক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সিংহভাগ রফতানিমুখী এই খাতটি। এখন আবার দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তা ইস্যুতে আরো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে পোশাক খাত। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা।

দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার পর এখন নিরাপত্তাহীনতায় দেশ ছাড়ছেন বিদেশিরা। তাই ব্যবসায়ীদের আশঙ্কাই যেন বাস্তব রূপ ধারণ করছে। বিদেশি নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করায় সফর ও বৈঠক বাতিল করছেন দেশের বাইরের ক্রেতারা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী মৌসুমে অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে ক্রয়াদেশ। ফলে তৈরি পোশাক শিল্প বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পরপরই পোশাক খাতের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও জাপান তাদের নাগরিকদের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। এতে করে আতঙ্ক বিরাজ করছে বিদেশিদের মাঝে। সর্বশেষ শুক্রবার দ্বিতীয় বারের মতো সতর্কতা জারি করলো যুক্তরাজ্য। এতে আবারো পশ্চিমাদের ওপর হামলার আশঙ্কা করেছে দেশটি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নেদারল্যান্ডসের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চেরোকি গ্লোবাল ব্র্যান্ডের ক্রেতা প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফরের নির্ধারিত তারিখ ছিল ১৫ ও ১২ অক্টোবর। কিন্তু নিরাপত্তার কারণ সফর বাতিল করেছে প্রতিষ্ঠান দুটির প্রতিনিধিরা। এছাড়াও মার্কিন দূতাবাসের ট্রাভেল অ্যালার্টের কারণে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড লিভাইস, ওয়ালমার্ট ও টার্গেটের মতো ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানও চলতি মাসের সফরসূচি স্থগিত করেছে। এদিকে জাপানি ব্র্যান্ড ইউনিক্লোর প্রতিনিধির বাংলাদেশ সফরের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্রেতারাও নিরাপত্তা ইস্যুতে তাদের সফর বাতিল করেছেন।

এদিকে পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সঙ্গে বায়ার্স ফোরামের মাসিক বৈঠক প্রতি মাসের প্রথম সোমবার হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তা ইস্যুতে তা বাতিল করেছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সংগঠন বায়ার্স ফোরাম দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বর্তমানে অনেকগুলো মানুষ একসঙ্গে বৈঠক করা নিরাপদ নয়।

আর একের পর এক সফর বাতিল করায় সামনের মৌসুমের ক্রয়াদেশ অনিশ্চিত হয়ে পরছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। নিরাপত্তা নিয়ে ক্রেতাদের উদ্বেগের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জগো নিউজকে বলেন, দু’জন বিদেশি নাগরিক খুন হওয়ার পর দেশে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে শুরু তৈরি পোশাক নয় গোটা রফতানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, যেহেতু রফতানির সিংহভাগ দখল করে আছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। চলমান ঘটনায় রফতানিতে বড় প্রভাব পড়বে পোশাক খাতে। আর নিরাপত্তা বিষয়টি যেহেতু জাতীয় ইস্যু তাই এটি সরকারকে মোকাবেলা করতে হবে। বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার নিরাপত্তা বিষয়ে বেশ তৎপর রয়েছে। আশা করছি, পরিস্থিতি অচিরেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বছরের এই সময়টায় বিদেশি ক্রেতারা দেশে আসে। আমাদের বাজার পর্যবেক্ষণ করে। সব কিছু বিবেচনা শেষে তারা পণ্যের অর্ডার দেয়। কিন্তু বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিরাপত্তা ইস্যুতে ক্রেতারা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে। অনেকে সফর বাতিল করছে। ফলে আগামীতে অনিশ্চিত হতে পারে ক্রয়াদেশ ।

তিনি আরো বলেন- রাজনৈতিক অস্থিরতা, কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধস, জিএসপি সুবিধাসহ নানা কারণে পোশাক শিল্প বিশাল চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। গত দুই বছরে দুটি রাজনৈতিক অস্থিরতা পার করেছি। রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনায় পোশাক খাতের ভাবমূর্তি অনেক ক্ষুণ্ন হয়েছে। এতে করে আগের তুলনায় আমাদের সক্ষমতা কমে এসেছে। বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ব্যবসায়ীদের আরো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে খাতটি।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতারিকারকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) এর সহ-সভাপতি এম এ মান্নান কচি জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশি নাগরিক হত্যা অনেক উদ্বেগের বিষয়। এ হত্যাকাণ্ডের ফলে পোশাক শিল্পের বিদেশি ক্রেতারা তাদের নির্ধারিত সফর, বৈঠক বাতিল ও স্থগিত করা শুরু করেছে। তিনি বলেন, যেহেতু রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। দেশে কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রথমেই এ শিল্পের ওপর আঘাত পড়ে। ফলে ইমেজ সংকটসহ নতুন বাজার তৈরিতেও বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়বে বাংলাদেশ। কেননা, দেশের এমন পরিস্থিতিতে পিছু হটবেন নতুন ক্রেতারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আবারো পোশাক শিল্প সঙ্কটের দিকে যাবে। যা পোশাক শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।

যদি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তাহলে পোশাক খাতে যে সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে তা কেটে যাবে বলে মনে করছেন তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের এই নেতা।