সড়ক বিভাগের অনিয়ম! ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে বেহাল দশা

সড়ক বিভাগের অনিয়ম! ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে বেহাল দশা


আব্দুল্লাহ্ আল মাসুদ :  ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভেঙেচুরে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে খানাখন্দক সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চালকরা মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চালাচ্ছেন। বৃষ্টি ও যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানেই ইট-খোয়া, ভিটুমিন উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ঈদে ঘরে ফেরা হাজার হাজার যানবাহন ও পশুবাহী ভারি ট্রাক নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সড়কে থেকে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। মহাসড়কের এ বেহাল অবস্থার কারণে তীব্র যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে উত্তরবঙ্গসহ ২৩ জেলার যাত্রীদের। আড়াই থেকে তিন ঘন্টার সময়ের রাস্তা এখন লাগছে ছয়/সাত ঘন্টা। টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের চরম দায়িত্বহীনতা, গাফিলতি, উদাসীনতা এবং নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে প্রতিবারের মতো এবারও এ মহাসড়কের করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সড়ক বিভাগ কোটি কোটি টাকা খরচ দেখিয়ে অতি নিম্নমানের মেরামত কাজ করছে। তাদের এ কাজ মহাসড়কে এক সপ্তাহের বেশী টেকশই হচ্ছে না। ফলে আগের মতোই খানাখন্দের সংখ্যা বাড়ছে এবং অসমতল মহাসড়কে পরিনত হচ্ছে।  

যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা জানায়, মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী থেকে ক্যাডেট কলেজ, রসুলপুর, করাতিপাড়া, মহেড়া, নাটিয়াপাড়া ভাতকুড়া এলাকাগুলোতে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় মহাসড়কে চলাচলকারী ভারী যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে পিচ, পাথর এবং ইট উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি মধ্যে গর্তে জমা কাদা পানি ও পাথর কুচি গাড়ির চাকার চাপে মহাসড়কের চলাচলরত ছোট যানবাহনের আরোহীদের শরীরে প্রচন্ড আঘাত করছে। মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাস বাসস্ট্যান্ড, পোষ্টকামুরী, কুর্ণী, শুভূল্যা, ধল্যা, গোড়াই ক্যাডেট কলেজ, হাটুভাঙ্গা রোড, সোহাগপুর, ধেরুয়া রেলক্রসিং, দেওহাটা, বাওয়ার কুমারজানি, আছিমতলা সেতুর দুইপাশ এলাকায় ছোট বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে জমে রয়েছে বৃষ্টির পানি। এর মধ্যে মির্জাপুর বাইপাস স্টেশন, দেওহাটা, ধেরুয়া রেলক্রসিং, পোষ্টকামুরী, বাওয়ার কুমারজানি ও হাটুভাঙ্গা এলাকায় গর্তের পরিমাণ বেশি রয়েছে। ওইসব স্থানে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালাচ্ছেন বলে চালকেরা জানিয়েছেন। কিছু দিন আগেও এসব স্থানে সড়ক বিভাগ কোনমতে মেরামত কাজ করেছে। ধেরুয়া রেলক্রসিং এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন ইট ও বালি দিয়ে গর্ত ভরাট করে দিচ্ছে। ওই এলাকায় যানবাহনের গতি খুবই কম থাকায় থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। টাঙ্গাইল থেকে ঢাকাগামী মহানগর পরিবহনের বাস চালক আলমাছ আলী ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গোপালপুরগামী বাসের সুপার ভাইজার মনির মিয়া বলেন, প্রতিদিন এই মহাসড়ক হয়ে উত্তরাঞ্চলের ২৩টি জেলার হাজার হাজার গাড়ী চলাচল করে। ঈদের সময় প্রায় ৩৫/৪০ হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে। বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহনের গতি বেশি থাকলে প্রচন্ড ঝাকুনি খেতে হয়। তাছাড়া যানবাহনের পাতি (স্প্রিং করার যন্ত্র) ভেঙে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে। এ কারণে তাঁদেরকে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির গতি কমিয়ে চালাতে হচ্ছে। এতে তাদের সময় বেশি লাগছে। তাছাড়া মহাসড়কে সৃষ্টি হওয়া গর্তে জমা পানি ও কুচি পাথর যানবাহনের চাকার চাপে রাস্তার পাশের লোকজন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের জামুর্কী পর্যন্ত চলাচলরত পিকআপের চালক দেলোয়ার হোসেন, আরশেদ মিয়া, রফিক মিয়া বলেন, আমাদের ছোট গাড়ি। খানাখন্দক মহাসড়কে যাত্রী নিয়ে চলাচলের সময় ব্যাপক ঝাকুনি খেতে হয়। খানাখন্দকের কারণে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ে। দ্রæত মহাসড়কের মেরামত কাজ করা না হলে ঈদে এই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ঢাকাগামী বিনিময় পরিবহনের বাসযাত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, মহাসড়কে সৃষ্টি হওয়া গর্তের উপর দিয়ে বাস চলার সময় প্রচন্ড ঝাঁকুনি লাগে। ঝাকুনিতে ভয় লাগে, কষ্ট হয় এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উপজেলার ধেরুয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, মহাসড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া-আসার সময় গর্তে জমা কাদাপানি যানবাহনের চাকার চাপে শরীরে লেগে কাপড় নষ্ট করে। তাছাড়া পাথর কুচি শরীরে এমন ভাবে আঘাত করে মনে হয় বুলেট লাগলো গায়ে।

এ বিষয়ে মির্জাপুর সড়ক ও জনপথ উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দ্রæত মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গর্ত বড় না হয় এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ইট-বালু দিয়ে সৃষ্টি হওয়া গর্ত ভরাট করে প্রাথমিক কাজ করা হচ্ছে। টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নুর-ই-আলম বলেন, বৃষ্টির জন্য সড়ক একটু খারাপ হয়েছিল। সেসব স্থানগুলো এখন মেরামত কাজ চলছে। যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে কোন সমস্যা হবে না।