জমে উঠেছে নতুন টাকার ব্যবসা
মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০১৫
ঈদ
মানেই আনন্দ। এ আনন্দে অনিবার্য অনুষঙ্গ সালামি। নতুন জামা, নতুন জুতার
মতো ঈদের সেলামি মানেই টাকশাল থেকে আসা ঝকঝকে নতুন নোট। ঈদ সামনে রেখে
রাজধানীতে জমজমাট হয়ে উঠেছে নতুন টাকার বাজার। ছোটদের সেলামি দিতে বাড়তি
টাকা দিয়ে নোট সংগ্রহ করছেন সেলামিদাতারা।
রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল বাংলাদেশ
ব্যাংক ও সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন টাকার পসরা সাজিয়ে
বসেছেন পুরানো ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কেউ টুল নিয়ে বসে আবার কেউ দাঁড়িয়ে
বিক্রি করছেন টাকা। আইন অনুযায়ী বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও অবাধেই চলছে এ
ব্যবসা। বিক্রিও চলছে ধুমছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে
নতুন-পুরানো ব্যবসায়ীসহ নারী-পুরুষ মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন টাকার নোট বিক্রি
করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় নতুন টাকা বের
করেছেন তারা। কথা বলে জানা গেল, রাজধানীতে নতুন নোটের সবচেয়ে বড় অস্থায়ী
বাজার এটি। মতিঝিল ছাড়াও গুলিস্তান, ফার্মগেট, সদরঘাটে নতুন টাকার নোট
বিক্রি হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা। চাঁদ রাত পর্যন্ত চলবে
নতুন টাকার বিকিকিনি। দুই টাকা, পাঁচ টাকা, ১০ টাকা ও ২০ টাকার নোটের
চাহিদা ও দাম সবচেয়ে বেশি জানান বিক্রেতারা।
এক টাকার কয়েন থেকে শুরু করে এক হাজার
টাকা পর্যন্ত নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে টাকার বাজারে। টাকার পরিমাণ বেধে
বান্ডেল প্রতি বেশি নিচ্ছে ২০ থেকে ২৫০ টাকা। টাকার প্রতিটি বান্ডেলে ১০০টি
নোট থাকে। টাকার বাজারে এক টাকার কয়েন ১০০টি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০
টাকায়। দুই টাকার নোট এক বান্ডেল অর্থাৎ ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে
২৩০ টাকায়। পাঁচ টাকার বান্ডেলে বেশি নিচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ১০ টাকার
বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকা। ২০ টাকার বান্ডেল ২১‘শ থেকে ২২‘শ
টাকা। ৫০ টাকার বান্ডেলের দাম বেশি নিচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ১০০ টাকার
বান্ডেল ১০ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি করছে। এসব নোটেরই চাহিদা বেশি। এছাড়া
আছে ৫০০ ও এক হাজার টাকার নতুন নোট।
মামুন নামে এক টাকা ব্যবসায়ী জানান, নতুন
টাকার মূল উৎস বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখান থেকে কর্মচারীদের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা
টাকা বের করে নিয়ে আসেন। এ জন্য কর্মচারীদেরও কমিশন দিতে হয়। টাকা
বিক্রেতা রাশিদা বেগম জাগো নিউজকে জানান, প্রতি বছরই ঈদের আগে নতুন টাকার
চাহিদা বেড়ে যায়। ১০ রমজান থেকে তা বাড়তে থাকে। ১৫ রমজানের পর ব্যবসা ভালো
হচ্ছে। প্রতিদিন এখন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করছি। চাঁদা, কমিশন ও
খরচ বাদ দিয়ে ৮০০ থেকে হাজার টাকা থাকে।
গুলিস্তানের বিক্রেতা হাশেম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টাকার ব্যবসা করছি। শুধু
নতুন টাকা নয়, পুরাতন ও ছেঁড়া টাকা কমিশন ভিত্তিতে বদলিয়ে দেই। ঈদ ছাড়া
অন্যান্য সময়ে নতুন টাকার ব্যবসা তেমন একটা চলে না। রোজায় নতুন টাকার
চাহিদা বাড়ে। ১৫ রমজানের পর থেকে বিক্রি বেশি হচ্ছে। বান্ডেল ভেদে আলাদা
আলাদা রেট নেই। যেমন দুই টাকার বান্ডেলে ২০ টাকা বেশি নেই আর পাঁচ টাকায়
নেই ৫০ টাকা।
মতিঝিলে নতুন টাকা কিনতে আসা শেখ সাদি জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের ছুটিতে
গ্রামের বাড়ি যাবো। বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা ঈদের উপহার হিসেবে নতুন টাকা আশা
করে। তাই নতুন টাকা কিনতে এসেছি। ব্যাংকে গিয়েছিলেন কর্মকর্তারা সরাসরি
নতুন টাকা নেই বলে জানিয়েছেন। টাকা না পাওয়ায় এখানে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে
নতুন টাকা নিয়েছেন। টাকার মূল্যের চেয়ে ২৫০ টাকা বেশি দিয়ে একটি ৫, ১০ ও ২০
টাকার তিনটি বান্ডেল নিয়েছি।
উল্লেখ্য, ঈদ উপলক্ষ্যে এবার ২২ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছেড়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংক। ২ জুলাই থেকে নতুন নোটের বিতরণ শুরু হয়েছে। যা চলবে ১৬
জুলাই পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়টি অফিসসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের
নির্ধারিত শাখায় এ নতুন টাকা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একজন
সাধারণ মানুষ সাড়ে নয় হাজার টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেন। তবে বাণিজ্যিক
ব্যাংকগুলো নিজেরাই সীমা নির্ধারণ করে।