সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই
সহকারী প্রধান শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ায় অনেক বিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে নেতৃত্ব সংকট। অনেক শিক্ষক তাদের মানতে চান না।
আসিফ কাজলসারাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি বিদ্যালয় আছে ৩৫১টি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক নেই ২৬২টি বিদ্যালয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে সিলেট ও বরিশাল বিভাগের স্কুলগুলো প্রধান শিক্ষক শূন্য। আর খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৩৬টি স্কুল আছে এর মধ্যে মাত্র একটি বিদ্যালয়ে আছে প্রধান শিক্ষক। ফলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে এসব বিদ্যালয়ের কাজ।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগে এক জন প্রধান শিক্ষক আছেন নাম ফারহানা নাজ। সাতক্ষীরার এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন, তিনি সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে আছেন। মেহেরপুর জেলার মাহফুজুল হক প্রধান শিক্ষক পদ থেকে বর্তমানে জেলার শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা এসব জেলার সব বিদ্যালয় চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে।
শুধুমাত্র বরিশাল জেলার একটি বিদ্যালয়ে আছেন একজন প্রধান শিক্ষক। সিলেট বিভাগের সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ বিভাগের কোনো জেলার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এছাড়াও রংপুরের ঠাকুরগাঁও, নীলফামারি, পঞ্চগড়, লালমনিরহাটেও কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ জেলারও একই অবস্থা। এমনকি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার স্কুলগুলোতেও কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। শুধু প্রধান শিক্ষকই নয় ৬৪ জেলার ৩৩টিতেই নেই কোনো জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহকারী প্রধান শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ায় অনেক বিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে নেতৃত্ব সংকট। অনেক শিক্ষকই তাদের মানতে চান না। এছাড়া প্রশাসনিক জটিলতা তো রয়েছেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ভারপ্রাপ্ত এক জন প্রধান শিক্ষক বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, আগে বাইরে থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতো সরকার। এরপর ২০০৫ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এ নিয়োগ কার্যক্রম। দীর্ঘ ১৬ বছর এ পদে নিয়োগ না থাকায় ভয়াবহ আকারে সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থী ভর্তি ও অন্যান্য কার্যক্রমেও বেড়েছে দুর্নীতি।
এ বিষয়ে খুলনা মাউশি আঞ্চলিক উপ পরিচালক এ এস এম আব্দুল খালেক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, খুলনা জেলার একটি মাত্র স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকলেও স্কুলগুলো যে চলছে না এমনটি নয়। প্রতিটি স্কুলেই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন সহকারী প্রধান শিক্ষকরা। তবে প্রধান শিক্ষক থাকলে প্রতিষ্ঠান অবশ্যই আরও বেশি ভালো চলতো বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে সিলেট অঞ্চলের পরিচালক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানা যায়, জাতীয়করণ করা নতুন যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে তাদের অধিকাংশ বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হলেও এখনো শিক্ষকদের পদ সৃজন হয়নি। এখন পর্যন্ত তিনটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ সৃজন হয়েছে। এ বিষয়ে মাউশি ও মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে।
সূত্র জানায়, ফিডারপদ পূর্ণ না হওয়ায় এ পদে নিয়োগ দিতে পারছে না সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী হেড মাস্টার হতে হলে এসিস্ট্যান্ট হেড মাস্টার হিসেবে কর্মরত থাকতে হবে পাঁচ বছর। কিন্তু সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে এমন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন না থাকায় পদোন্নতি দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদ পূরণে সময় লাগবে আরও দুই বছর। একবার বিশেষভাবে পদোন্নতি দিয়ে এ সংকট দূর করা হয়েছিলো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সরকারি মাধ্যমিকে প্রধান শিক্ষকদের সংকট আমাদের নজরে এসেছে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। খুব দ্রুত সময়েই প্রধান শিক্ষক পদ পূরণ করা হবে।
কিভাবে পূরণ করা হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষকদেরকেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিশেষভাবে পদোন্নতি দেয়া হবে। আর এটা নতুন বছরের শুরুতেও হতে পারে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/একে/ওয়াইএ
from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/education/181207/সরকারি-মাধ্যমিক-বিদ্যালয়-চলছে-প্রধান-শিক্ষক-ছাড়াই