পুরুষ দিবস

পুরুষ দিবস

পুরুষ দিবস

স্যার বিশ্ব পুরুষ দিবসে আপনাকে শুভেচ্ছা।

নিলয় নীল

শুক্রবার সাধারণত টিউশনি করাই না কিন্তু তবুও আজ আন্টি যেতে বললেন। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ

- আন্টি একটা দিন কোন টিউশন রাখি না আমি। আজকেও ছাড় দিবেন না আমাকে?

আন্টি মুচকি হেসে বললেনঃ - আরে আসো না। আসলেই মজা টা বুঝবে। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে একটা।

আমি আমার ছাত্রীকে ফোন করলামঃ - কিরে নিতু কি ব্যপার? তোর মাকে বলতে পারলি না যে আজ শুক্রবার তুই পড়তে চাস না!

-স্যার পড়াশোনা বিষয় নাতো। আপনি আসুন আমিও আপনাকে সারপ্রাইজ দিব একটা।

আমার মাথা জ্যাম। মা মেয়ে দুইজনই আমাকে এই শুক্রবার ছুটির দিনে কি সারপ্রাইজ দিবে। যাইহোক নিতুকে পড়াই আমি সন্ধ্যা ৭টায়। আমার হোস্টেল হতে ৩০ মি এর পায়ে হাটা দূরত্ব। কানে ইয়ারফোন গুজে স্পটিফাই তে প্রিয় গান গুলোর প্লে লিস্ট ছেড়ে দিয়ে আমি বের হলাম ৬.২৫ এ। 

নিউমার্কেট হতে কেনা ব্লু কালারের টিশার্ট আর ঢাকা কলেজের সামনে থেকে কেনা ৫০০ টাকার জিন্স পরে আমি হেলেদুলে হাটছি। বাসা ওদের ধানমন্ডি ১৫ তে। ৫তলা বিল্ডিং এর তিন তলাতে ওদের বসবাস। আমি গান শুনছি আর ভাবছি এত সারপ্রাইজ আমি সামলাবো কিভাবে।

সারপ্রাইজড হলে মানুষের হরমোনাল সিক্রেশন বেড়ে যায় আমি তাই নিজেকে আগে ভাগেই প্রস্তুত করেছি।  ভাবছি এমন এক ভাব নিবো, যাতে আমি সারপ্রাইজড হই নি এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করব বিষয়টা সারপ্রাইজিং হলেও। এতে ওরাই সারপ্রাইজড হয়ে যাবে।

ঠিক ৭টায় কলিংবেল চাপলাম, দরজা খুলে গেলো কিন্তু ওপাশে কেউ নেই। আমি হাটি হাটি পা পা করে আগাচ্ছি। দেওয়ালে টানানো আমার কিছু ছবি। তাতে নানান লেখা। হাতের লিখা দেখে বুঝলাম আমার ছাত্রীর হাতের লেখা।

দীর্ঘ ৪বছর নিতুকে আমি পড়াচ্ছি। ৪বছর ধরে আছি এই সংসারটার সাথে। নিতুর আরেকটা ছোট্ট ভাই আছে যার একটা হাত নেই বয়স ৯ বছর। নিতুর বয়স ১৭। আন্টি কাজ করেন বিদেশি একটা অলাভজনক  সামাজিক সংগঠনে। (হিউম্যান রাইটস নিয়ে যারা কাজ করে যারা)

যাইহোক আমি আরেকটু সামনে যাই কিন্তু সারা বাসা চুপচাপ। বেশ ভড়কে গেলাম চোখ পড়লো আরেকটা ছবিতে তাতে নিচে লেখাঃ

স্যার বিশ্ব পুরুষ দিবসে আপনাকে শুভেচ্ছা।

পড়তে পড়তেই আন্টি, নিতু আর ছোট্ট ভাইটি ছুটে এলো। হাতে ওদের কেক। আন্টি আমার কাধে হাত দিয়ে বললেনঃ -বসো নিলয়।

আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আজ আমার জন্মদিন হলেও বিষয়টা মানাতো কিন্তু বিশ্ব পুরুষ দিবসে আমাকে এমন শুভেচ্ছা কেন জানাতে হবে।

আমি কেক টা সামনে নিয়ে সোফায় বসলাম  কেকের পাশে ছোট্ট রঙের  চিরকুটটা  আমার চোখ পড়লো। তাতে লেখাঃ -গত চারবছর ধরে বট ছায়াহীন এই পরিবার টিকে আগলে রাখার জন্য ধন্যবাদ। 

আমার চোখে ভাসলো ঠিক সেই দিনটার কথা যেদিন এক্সিডেন্ট এ আংকেল মারা যায় তার ছোট্ট ছেলেটা হাত হারায়!

বাংলাদেশ জার্নাল/এএম

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/other/literature-and-culture/182627/পুরুষ-দিবস