ডাংগুটির খেলোয়ারদের দিয়ে জনগণকে রক্ষা করা সম্ভব না

ডাংগুটির খেলোয়ারদের দিয়ে জনগণকে রক্ষা করা সম্ভব না

ডাংগুটির খেলোয়ারদের দিয়ে জনগণকে রক্ষা করা সম্ভব না

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মোদাচ্ছের আলী করোনা, টিকা এবং লকডাউনসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সাথে একান্তে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কিরণ শেখ।

কিরণ শেখ

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা তিনি। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কারাবন্দি শেখ হাসিনাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেয়ার পক্ষে সামরিক সরকারের সাথে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এই চিকিৎসক।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মোদাচ্ছের আলী করোনা, টিকা এবং লকডাউনসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সাথে একান্তে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কিরণ শেখ।  

করোনা সংক্রমণ প্রসঙ্গে শুরুতেই ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, কোভিড-১৯, বাংলাদেশে এটাকে করোনা নামেই ডাকে। সুতরাং আমি করোনা বলেই বলছি। করোনাভাইরাসকে কন্ট্রোল বা চিকিৎসা কিংবা এই অতিমারি থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায়- এজন্য চিকিৎসক দরকার। সকলের ভিতরে একটা কথা খুব প্রচলিত এবং বিজ্ঞানের দিক থেকে সঠিক, সেটি হচ্ছে, একে যদি দমন করতে হয়, যে দেশ দমন করতে চায় বা যারা দমন করতে চায় তাদের করোনার আগে থাকতে হবে। করোনার পিছনে থাকলে কখনোই এই মহামারি থেকে জনগণকে রক্ষা করা সম্ভব না এবং কট্রোল করা সম্ভব না। এজন্য বললাম, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত- তাদের কথাবার্তা এবং কার্যক্রম, আমাদের দেশে যে বাঁচ্চারা ডাংগুটি খেলে, তারা ঝগড়াঝাটি করলে তারা যে বুদ্ধি নিয়ে চলে, আমাদের মোটামুটি যাদের দায়িত্ব তাদের বুদ্ধির সীমারেখা একই পর্যায়ের। আর ডাংগুটির খেলোয়ার দিয়ে তো করোনার মতো মহামারি থেকে জাতিকে রক্ষা করা সম্ভব না।

তিনি বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে দায়িত্ব নিয়ে আমাদেরকে এখন পর্য ন্ত বাঁচিয়ে রেখেছেন। এখন পর্য ন্ত করোনা চলছে। কিন্তু বুঝতে হবে, উনি যেটা চান, সেটা যাদের দায়িত্ব তাদেরকে তোর তার (প্রধানমন্ত্রী) কথা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে। উনি তো কখনো উনার বক্তব্যে অতি কঠোরও করতে বলেননি বা ঢাংগুটি খেলার ছেলে-মেয়েদের মতো বক্তব্যেও দিতে বলেননি।’ 

করোনা সংক্রমণ রোধে গসরকার গৃহিত পদক্ষেপের বিষয়ে ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব স্পষ্ট কথা বলেন। আমাদের করোনায় কি করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধির মেনে চলার কথা বলেছেন। আর উনি যে অবস্থা টিকা যোগার করে আনছেন। এটা চিন্তারও বাইরে। এ ব্যাপারে আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ দেব। তিনিও যেসব কথা-বার্তা বলেন, তা অর্থপূর্ণ কথা বলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে কিছু কিছু মন্ত্রী যাদের দায়িত্ব, যেমন একটা উদাহরণ দেই- কিছুদিন আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সভায় বৈঠক হলো- সেই সভা থেকে বের হয়েই একজন সিনিয়র মন্ত্রী যে বক্তব্যে দিলেন, তাতে তো মনে হয়, উনি নরমাল কি না সেবিষয়ে জনগণ প্রশ্ন করতেই পারেন। কারণ উনি জনগণের অর্থে এখন দায়িত্ব পালন করেন। উনি বলছেন, যদি টিকার সনদপত্র না নিয়ে আসে তাহলে যেদিন থেকে লকডাউন উঠে যাবে তাদেরকে জরিমানা করা হবে। উনি তার জন্য তিনদিন সময় দিলেন!’

বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিনদিনের মধ্যে বাংলাদেশে যাদের টিকা প্রয়োজন তাদের টিকা হয়ে যাবে? অথচ আমাদের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বললেন, ওই বৈঠকে আমাদের এরকম কিছু আলাপ হয়নি। পরবর্তীতে তিনি (বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক) তার বক্তব্যে প্রত্যাহার করে নিলেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, উনি তো বাচ্চা পোলাপান না। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তারা যদি এভাবে বক্তব্যে দেন তাহলে জনগণতো স্বাভাবিকভাবেই বিভ্রান্ত হবে। সুতরাং এতেই বুঝা যায় আসলে কোন সিদ্ধান্তই হয়নি। আলাপ-আলোচনা হয়নি। উনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, একজন অভিজ্ঞ লোক, বঙ্গবন্ধু সময় থেকে রাজনীতি করেন- তার তো অনেক অবদান। কিন্তু উনারা হঠাৎ করে… আমার মনে হয় কি- এই অবস্থার ভিতরে একজন মুখপাত্রই থাকা উচিত। আর এই মুখপাত্রটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের থাকা উচিত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে কাউকেই দায়িত্ব দিতে পারে। যেমন ফরেন মিনিস্ট্রি। আমাদের সব সময় যে মন্ত্রী বলতে হবে তা তো না। ফরেন মিনিস্ট্রিতে এক মুখপাত্র থাকবে।  ‘ভারতে দেখবেন একজন মুখপাত্র আছে। সে জয়েন্ট সেক্রেটারি লেভেলের লোক। সেই সব গুরত্বপূর্ণ জিনিসিগুলো বলেন। কারণ সরকারের সিদ্ধান্ত বললেন। সুতরাং একজন মুখপাত্র, যদি তারা মনে যে না,  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের না করে ডিজি হেলথ থেকে করবে, সেখানেও হতে পারে।’ 

মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘একেকজন একেক কথা বললে জনগণ শুধু বিভ্রান্ত হয় না জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা চলে যায়। যেমন এক সময় বললেন যে, টিকা ১৮ বছর পর্যনন্ত করা হবে, তারপরে বলে দিলো ২৫ বছর। বললো, ১৮ বছর যদি করা হয়, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। একটা আহাম্মক জানে, ২৫ বছর পর্য।ন্ত করা লাগে না। ২০ করা যেতো। এটা কোন লজিক না। হতে পারে আমাদের অন্যান্য টেকনিক্যাল কারণে দেরি করা। সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু এমন কিছু বলা উচিত না, যেটা বিশ্বাসযোগ্য না। তারপরে তারা বললেন যে, ৭ তারিখ থেকে সারাদেশে টিকা দেয়া শুরু করবো। আর আপনি লকডাউন রাখলেন ১০ তারিখ পর্যযন্ত। এই তিনদিন লকডাউনের মধ্যে যদি দেশবাসী টিকার জন্য আসেন তাহলে দেশের কি হবে? এরপর আবার পরিবর্তন করা হলো। পুরোপুরি মনে হচ্ছে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটা চাচ্ছেন- সেটা করতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছেন। আমার মনে হয় এই ব্যর্থদের দিয়ে সফল কাজ বিশ্বের কথাও হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমি এদেশের এজন দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে, আমি আশা করবো- ভুলভ্রান্তি যা হয়েছে, সেদিকে যেতে চাই না। এখন থেকে যে যার দায়িত্ব তার বাইরে যাবেন না। আমি হাছান মাহমুদকে পছন্দ করি কেনো, তিনি এমন একটা কথাও আজ পর্যন্ত বলেননি, যা যুক্তিতে টিকে না। তিনি তো পারছেন। মন্ত্রণালয়ও চালাচ্ছেন, সবই তো করতে পারছেন। আপনারা না হয় উনাকেই দায়িত্ব দেন। উনি প্রতিদিন না হয় ব্রিফিং করবেন।’

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্রোরা যখন ডিজি হেলথ থেকে বলতো, সে তো সুন্দরভাবেই বলতেন। আর এখন কি হচ্ছে, যার যেটা কাজ না..। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বয়সের কারণে এমন বলতে পারেন। হতে পারে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা যুদ্ধে আছি। একারণে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী যদি এভাবে কথা-বার্তা বলে যদি যুদ্ধ চালান, সেই যুদ্ধে টিকা তো খুব কঠিন হবে। এটা আমাদেরকে বুঝে চলতে হবে। আমার মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আর বেশী দেরী না করে, যারা সঠিক কাজটি সঠিকভাবে করতে পারবেন তাদেরকে দিয়ে এ কাজগুলো করান। কারণ জনগণের বিশ্বাস যদি একবার নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সবচেয়ে বড় বিপদ হবে। এখন হয়তো বিভিন্ন ভয়ের কারণে অনেকে টিকা নিতে আসবেন। এটা ঠিক। কিন্তু যখন আমরা অনেকটা কমাতে পারবো তখন কিন্তু চ্যালেঞ্জ হবে টিকা নেয়া। কিন্তু এসব লোকের কথা-বার্তা যদি এরকম থাকে তাহলে একটা সময় আসবে যখন আমরা করোনার আগে চলতে পারবো না। শুধু মাত্র আমাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য করোনাই আমাদের আগে চলবে। সুতরাং আমি আশা করি, অতিতের ভুলভ্রান্তি ভুলে গিয়ে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা যেনো তাদের নিজের দায়িত্ব পালন করেন। আর না পারলে যিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেন  তার কাছে যেনো দায়িত্বটা অর্পণ করেন।’

বাংলাদেশ জার্নাল- কেএস/ বিএইচ

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/health/169628/ডাংগুটির-খেলোয়ারদের-দিয়ে-জনগণকে-রক্ষা-করা-সম্ভব-না