রকেট স্টিমার সার্ভিস, ১০০ টাকা আয়ে ব্যয় ১৮৪ টাকা

রকেট স্টিমার সার্ভিস, ১০০ টাকা আয়ে ব্যয় ১৮৪ টাকা

রকেট স্টিমার সার্ভিস, ১০০ টাকা আয়ে ব্যয় ১৮৪ টাকা

বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)  অভ্যন্তরীণ রুটে পাঁচটি জাহাজে যাত্রী পরিবহনসেবা দেয়। এগুলো রকেট স্টিমার সার্ভিস নামে পরিচিত। এ সেবা দেওয়া হয় ঢাকা থেকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত। মাঝখানে অবশ্য আটটি ঘাটে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় রকেট। তবে একই নেপথে বিভিন্ন জায়গায় যেতে বেসরকারি লঞ্চ যাত্রীতে ভরা থাকে। যাত্রী কম পায় বিআইডব্লিউটিসির রকেট সার্ভিস। ভাড়া হিসাবে যা পাওয়া যায়, তাতে লোকসানের বহর বেড়েই চলেছে। ১০০ টাকা আয় করতে সংস্থার খরচ হচ্ছে ১৮৪ টাকা।

রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী রকেট স্টিমার সার্ভিসটি চলছে না চলার মত করেই। ইতোপূর্বের দৈনিক রকেট স্টিমার সার্ভিসটি এখন চলছে মাত্র সপ্তাহে ৩দিন। এতে গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের লোকসান। এত লোকসানের পিছনে যে সব কারণ আছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল সেগুলির ছাড়ার সময়। অনেক রাত পর্যন্ত বেসরকারি লঞ্চ চলার কারণে কাজ শেষ করে সেগুলিতেই ওঠা বেশি পছন্দ করেন যাত্রীরা। তাছাড়াও বেসরকারি লঞ্চ থামানো থাকে যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক জায়গায়। রকেটে যেতে সময়ও বেশি লাগে।সরকারী নৌ পরিবহন রকেট সার্ভিসের ব্যর্থতাকে পুজি করে রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে বেসরকারী নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নানামুখি নৈরাজ্য অব্যাহত রয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ব এই স্টিমার সার্ভিসের মোটা অংকের লোকসান গোনার চারটি কারণকে দায়ী করছে  বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা, যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ। প্রথমত, রকেট ছাড়া হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। বেসরকারি লঞ্চ ছাড়ে রাত নয়টা পর্যন্ত। যাত্রীরা কাজ শেষ করে রাতে বেসরকারি লঞ্চে ওঠাকেই বেশি সুবিধাজনক মনে করেন। দ্বিতীয়ত, সদরঘাটে একই পথে বেসরকারি লঞ্চ থামানো থাকে যাত্রীর জন্য সুবিধাজনক জায়গায়। রকেট থামানো থাকে দূরে। তৃতীয়ত, রকেটে যেতে সময় বেশি লাগে এবং যাত্রীসেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন গ্রাহকেরা। চতুর্থ কারণ অনিয়ম। অভিযোগ আছে, রকেটে টিকিটের বাইরে যাত্রী নেওয়া হয়। এই যাত্রীদের ভাড়া সরকারের কোষাগারে যায় না। নৌযান চালানোর জন্য তেল কেনায় চুরির অভিযোগও রয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, একসময় রকেট স্টিমার সদরঘাটের সর্বশেষ ১৩ নম্বর পন্টুনে রাখা হতো। কিন্তু বেসরকারি লঞ্চমালিকদের আপত্তিতে রকেট স্টিমারকে লালকুঠি ঘাটে সরিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে যাত্রী কম যায়।

ঢাকা থেকে বিভিন্ন পথে বেসরকারি নৌযান চলাচল করলেও রকেট স্টিমার চলে ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত। যদিও নাব্যতার কারণে এইগুলি এখন খুলনা পর্যন্ত যায় না , চলে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত। যে পাঁচটি স্টিমার চলে, তার মধ্যে ৩টি প্যাডল চালিত এবং অনেক পুরানো। বাকি দুটি মোটর চালিত এবং নতুন। ঢাকা থেকে মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত ‘সুলভ শ্রেণি’র যাত্রীভাড়া ২৮০ টাকা। আগের তুলনায় যাত্রী কমেছে। তবে অনেকেই টিকিট না কেটেও যাতায়াত করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

রকেট স্টিমার  মোটা অংকের লোকসান গুনলেও এই সার্ভিস বন্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই  বিআইডব্লিউটিসির। এ বিষয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব জায়গায় অন্য কোনো বেসরকারি নৌপরিবহন নেই, সেই সব জায়গার যাত্রীদের জন্য আমরা রকেট স্টিমারের সেবা অব্যাহত রেখেছি। বিআইডব্লিউটিসি একটি সেবামূলক সংস্থা। তাই লাভ না হলেও আমারা সেবা দিতে বাধ্য। তবে আমার চেষ্টা করছি লোকসান কমিয়ে আনতে। সার্ভিসের গুণগত মান উন্নয়নের পাশাপাশি আগামী এটি লাভজনক করে তুলতে আমরা কাজ করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল-ওআই

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/167833/রকেট-স্টিমার-সার্ভিস-১০০-টাকা-আয়ে-ব্যয়-১৮৪-টাকা