প্রিন্ট এর তারিখঃ সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২
প্রকাশিত: ২০২৫-০৯-০৫ ০০:৫৯:০৮
টাঙ্গাইল দর্পণ অনলাইন ডেস্ক:
২০২৪ সালের জুলাই মাসে যখন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের দ্বিতীয় মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছিল, তখন তিনি নিজে এই পদে আগ্রহী ছিলেন না।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাবেক আইজিপি। ট্রাইব্যুনালে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন।
জেরায় মামুন বলেন, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আইজিপি পদে থাকতে আগ্রহী নন বলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে জানিয়েছিলেন। তবে গোপালগঞ্জকে কেন্দ্র করে দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে তাকে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রথমবারের মতো দেড় বছরের চুক্তিভিত্তিক আইজিপি পদে বহাল রাখার পর দ্বিতীয়বার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবে তিনি অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন।
জেরার সময় সাবেক আইজিপি স্পষ্ট করেছেন, তার নিয়োগে কোনো প্রকার তদবির কাজ ছিল না। বরং এটি ছিল সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ও অবসরোত্তর চুক্তিভিত্তিক পদায়ন। তিনি আরও জানান, ছাত্রজীবনে তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তার পরিবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সরকার আন্দোলন দমন করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করেছিল। এই নির্দেশনা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে দেওয়া হয় এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাস্তবায়িত হয়। রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি উল্লেখ করেন, তৎকালীন পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তারা সরকারের নির্দেশে আন্দোলন দমন কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, আন্দোলন দমনকালে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তার জন্য তিনি নিজ দায়িত্বে অপরাধবোধ অনুভব করছেন এবং ট্রাইব্যুনালে সত্য উদঘাটনের জন্য রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা তাকে গভীরভাবে আহত করেছে এবং দীর্ঘ পুলিশি কর্মজীবনে দায়িত্ব পালনের সময় এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করছেন।
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জেরায় উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র্যাব ও এসবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সমন্বয় বৈঠকে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল। একইভাবে ৫ আগস্ট আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমন্বয় এবং কঠোর অবস্থান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাবেক আইজিপি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, আন্দোলন দমন ও গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়, এবং তিনি পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নৃশংসতার ঘটনায় দুঃখ ও অপরাধবোধ অনুভব করেছেন। এছাড়া রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার মাধ্যমে তিনি সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করেছেন এবং দেশের মানুষ, নিহতদের পরিবার ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর সোয়া ১টার দিকে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ৮ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক আইজিপি নিজের বিবেকের তাড়নায় অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং তার সাক্ষ্য অকাট্য প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।