প্রিন্ট এর তারিখঃ রবিবার ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২
প্রকাশিত: ২০২৫-০৮-০২ ০০:৩৫:০৮
জন্ম ১লা আগষ্ট, ১৯৪৬ সাল । জন্ম জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় । বাবার নাম এ, এফ তসলিমদ্দিন আহমেদ । মায়ের নাম মেহেরুননেছা ।
এই গুণী কণ্ঠশিল্পীর শৈশব বেড়ে ওঠে পুরানা ঢাকায় । ১৯৬৭ সালে কলেজ অব মিউজিক থেকে ডিগ্রী অর্জন করেন । ঐ বছর থেকেই রেডিও ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান গেয়ে আসছেন । তিনি প্রথম ১৯৬৯ সালে “আগন্তক” সিনেমায় প্রথম প্লেব্যাক করেন । আলাউদ্দীন রোডে হাজীর বিরিয়ানির পাশেই ছিল বাসা। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার বড় খুরশীদ আলম।
তিন ভাই খুরশীদ আলম, মুরশিদ আলম, সরোয়ার আলমের মধ্যে খুরশীদ আলম বড়। ছোটবেলা থেকেই খুরশীদ আলমের সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ ছিল। পরিবারের তেমন কেউ সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। চাচা ডা. সাজেদুর রহমান টুকটাক রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতেন। আর চাচার কাছেই সঙ্গীতের হাতেখড়ি খুরশীদ আলমের।
স্কুল জীবনে গানের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন তিনি। স্কুল বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় তার সঙ্গীতে পদার্পণ। তার স্ত্রী রীনা আলম এবং দুই মেয়ে মেহরিন আলম ও মেহনাজ আলম। গান নিয়ে কেটে যায় তার সারাদিন। অবসরে গান শোনেন, ক্রিকেট খেলা দেখেন। তিনি আজিমপুরের ওয়েস্টিন হাইস্কুলে পড়তেন। তার শিক্ষা জীবন কাটে নবাবপুর গভর্নমেন্ট হাই স্কুল, কলেজ অফ মিউজিক এবং তৎকালীন সরকারি জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি)।
“চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে..”
এই গানের জনপ্রিয় গায়কের কণ্ঠের জাদুকর মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। যিনি দরদমাখা কণ্ঠে গান গেয়ে চলেছেন আজ পর্যন্ত। মাগো মা ওগো মা, চঞ্চল দুনয়নে, আজকে না হয় ভালোবাসো, ও দুটি নয়নে স্বপন চয়নে, চুমকি চলেছ একা পথে সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের শিল্পী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৪২৫টি চলচ্চিত্রে হাজারের বেশী গান গেয়েছেন তিনি।
১৯৬১-৬২ সালে জাতীয় আধুনিক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় এবং ১৯৬২-৬৩ সালে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হন তিনি। বাংলাদেশ বেতারে আধুনিক গানের অডিশন দিতে এসে পরিচয় হয় প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক সমর দাসের সঙ্গে । সমর দাস তাকে নিয়ে গেলেন সঙ্গীতের ওপর বিশেষ শিক্ষা দেয়ার জন্য। তিনি তাকে শিখিয়েছেন কিভাবে কোন বিখ্যাত শিল্পীকে অনুসরণ করে ভালো গান করা যায়। তিনি তাকে প্রায় ছয় মাস সঙ্গীতের ওপর জ্ঞান দান করেন। এরপর আজাদ রহমানের সঙ্গে সঙ্গীত নিয়ে দুই বছর কাজ করেন তিনি।
১৯৬৭ সালে কবি সিরাজুল ইসলামের (প্রয়াত) লেখা এবং আজাদ রহমানের সুরে কণ্ঠ দেন একটি আধুনিক গানে। যেই গানের কথা হলো তোমার দু-হাত ধরে শপথ নিলাম। সে সময়ে গানটি তৎকালীন পুরো পাকিস্তানে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বর্তমানেও গানটি বেশ জনপ্রিয়। সে বছরই তার কণ্ঠে আরেকটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী গান হলো- ‘‘চঞ্চল দু’নয়নে বলো না কি খুজছো ?’’ মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রথম প্লে ব্যাক করেন ১৯৬৯ সালে বাবুল চৌধুরীর পরিচালনায় এবং ইফতেখারুল আলমের প্রযোজনায় আগন্তুক মুভিতে। ১৯৬৯ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ মুভির গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, তিনি লালুভুলু মুভির সাতটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সেই মুভিটিকে চারটি ভাষায় রূপান্তরিত করা হয়েছিল।
খুরশীদ আলম ষাটের দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গনের গানের ভান্ডারকে করেছেন সমৃদ্ধ। এখনও অব্যাহত আছে তার ক্লান্তিহীন সঙ্গীত সাধনা। বাংলা সিনেমার সুবর্ণ সময়ের একজন খ্যাতিমান প্লে-ব্যাক সিঙ্গার খুরশিদ আলম। একটা সময় ছিল বাংলা সিনেমার গান মানেই খুরশিদ আলম। বাংলা চলচ্চিত্র সংগীতকে তিনি অনেক কিছু দিয়েছেন। সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে সর্বাধিক গান গেয়েছেন কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম।
খুরশীদ আলমের গাওয়া অনেক গান রয়েছে জনপ্রিয়তার তালিকায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. মাগো মা, ওগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা।
মুভির নাম- সমাধি
গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার – সত্য সাহা
২. তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছো মানুষ কি না…।
মুভি- লালুভুলু
গীতিকার- মাসুদ করিম, সুরকার – সুবল দাস।
৩. বন্দি পাখির মতো মনটা কেদে মরে
মুভি- আগন্তুক
৪. ধীরে ধীরে চল ঘোড়া, সাথী বড় আনকোরা…
মুভি- শাপমুক্তি, সুরকার- সত্য সাহা
৫. ও দুটি নয়নে স্বপনে চয়নে নিজেরে যে ভুলে যাই…
মুভি- অশ্রু দিয়ে লেখা, সুরকার- আলী হোসেন।
৬. বাপের চোখের মণি নয়, মায়ের সোনার খনি নয়…।
মুভি – জোকার
সুরকার – আনোয়ার পারভেজ, গীতিকার – গাজী মাযহারুল আনোয়ার
৭. চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে…।
মুভি – দোস্ত দুশমন
গীতিকার – দেওয়ান নজরুল, সুরকার – আলম খান
৮. যে সাগর দেখে তৃপ্ত দু চোখ…
গীতিকার – মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সুরকার – খন্দকার নুরুল আলম
৯. ঐ আকাবাকা নদীর ধারে…
গীতিকার – এম এম হেদায়েত, সুরকার – আলী হোসেন
১০. তোমার দু’হাত ধরে শপথ নিলাম (আধুনিক)
সুরকার – আজাদ রহমান, গীতিকার – কবি সিরাজুল ইসলাম