লীড বাংলাদেশের হাত ধরে চট্টগ্রামের ডিজিটাল মার্কেটিং

লীড বাংলাদেশের হাত ধরে চট্টগ্রামের ডিজিটাল মার্কেটিং

লীড বাংলাদেশের হাত ধরে চট্টগ্রামের ডিজিটাল মার্কেটিং

পরিবর্তন আপনাতেই আসে না, কাউকে না কাউকে তা আনতে হয়। বর্তমান শতাব্দীর গোড়া থেকেই সারা বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গনে শুরু হয় এক নতুনত্বের, পরিবর্তনের। যা গত এক দশকে মহিরূহের আকার ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

পরিবর্তন আপনাতেই আসে না, কাউকে না কাউকে তা আনতে হয়। বর্তমান শতাব্দীর গোড়া থেকেই সারা বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গনে শুরু হয় এক নতুনত্বের, পরিবর্তনের। যা গত এক দশকে মহিরূহের আকার ধারণ করেছে। 

এ পরিবর্তনের নাম ডিজিটালাইজেশন, যার ছোঁয়ায় বদলে গেছে উৎপাদন-বিপণনসহ ব্যবসায়িক শৃঙ্খল বা বিজনেস চেইনের প্রতিটি পর্যায়। বৈশ্বিক এ পরিবর্তনের ঢেউ এসেছে বাংলাদেশেও।  

বিশেষত বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশনের কল্যাণে বাংলাদেশেও ডিজিটাল পালাবদলের সূচনা ঘটে। কিন্তু এর সুফল রাজধানী ঢাকায় যতটা দ্রুত এসেছে, সে তুলনায় বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার পরও চট্টগ্রাম অনেকটাই পিছিয়ে ছিলো।

আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল মার্কেটিং কোনো প্রতিষ্ঠান ছিলো না। ফলে, ডিজিটাল বিশ্বের সাথে সংযুক্ত চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক চিন্তাচেতনা অনেকাংশেই গতানুতিক ধারাতেই চলে আসছিলো। 

চট্টগ্রামের যে কয়টি প্রতিষ্ঠান সেসময় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলো, তারা প্রত্যেকেই ঢাকার এজেন্সিগুলোর শরণাপন্ন হয়েছিলো। ক্রমে এ শূন্যস্থান পূরণ হয়। 

বর্তমানে চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কাজ করলেও পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামের ডিজিটাল হয়ে ওঠার পালাবদল শুরু হয় লীড বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে।

২০১৫ সালে চট্টগ্রামের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি হিসেবে কাজ শুরু করে এ প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জগতে চট্টগ্রামকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানের রূপকার ইমতিয়াজ উদ্দীন জিহাদ। 

চট্টগ্রামের প্রথম ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ‘লীড বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি এ কয়েক বছরে শুধু নিজের প্রতিষ্ঠানটিকেই নয়, একইসাথে চট্টগ্রামের গড়ে ওঠাতেও রেখেছেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। 

পরিবর্তন করেছেন মানুষের মানসিকতা ও কাজের ধারা, তৈরি করেছেন নতুন কর্মসংস্থান। ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছে একটি পূর্ণাঙ্গ মার্কেটিং সলিউশনস প্রতিষ্ঠান হিসেবে।

২০১৫ সাল থেকে ইমতিয়াজ জিহাদের লীড বাংলাদেশ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের দু’শটিরও অধিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে চলেছেন। একসাথে প্রায় চল্লিশটির মতো প্রতিষ্ঠানের কাজ চলমান থাকেই। 

চট্টগ্রামের অনেকগুলো কোম্পানির ডিজিটাল যাত্রা শুরুই হয়েছে লীডের হাত ধরে। এ ৫ বছরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্মাণ করেছে ৬০ এর অধিক অডিও-ভিজ্যুয়াল ও ডকুমেন্টারি। 

শতাধিক ইভেন্ট সফলভাবে সম্পাদনের দায়িত্বও দক্ষতার সাথে পালন করেছে। বর্তমানে লীড বাংলাদেশ আলাদা আলাদা টীমের মাধ্যমে একাধারে টেকনোলজি বা আইটি সেবা, মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন নির্মাণ, ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট এবং সফটওয়্যার সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

তার উঠে আসার দীর্ঘ যাত্রার গল্প শুনতে চাইলে লীড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ জিহাদ জানান, ‘ঢাকার একটি ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের শহর চট্টগ্রামে ফিরে এসে দেখি এখানকার বড় কোম্পানিগুলোই তাদের নানা প্রয়োজনে ঢাকামুখী।

বিশেষত ব্র্যান্ডিং, এক্টিভেশন, বিজ্ঞাপন নির্মাণ, ডিজিটাল মার্কেটিং, স্মার্ট ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট- এসব বিষয়ে কাজ করে এমন কোনো এজেন্সিই তখন চট্টগ্রামে ছিলো না। এমনকি চট্টগ্রামের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এসবের গুরুত্ব সম্পর্কেও অবহিত ছিলো না। 

ফলে, এ শূন্যস্থান পূরণে নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৫ সালে শুরু করি লীড বাংলাদেশ। এবং এই ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমরাই চট্টগ্রামে একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিলাম। এর সুফল যেমন পেয়েছি, দুর্ভোগও কিন্তু কম নয়।’

দেখা যায়, একেবারেই নতুন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকার প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হয় লীড বাংলাদেশকে, যা মোটেও সহজ কাজ ছিলো না। এছাড়া ডিজিটালাইজেশনের জন্য বাজার প্রস্তুত ছিলো না, ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর মানসিকতা উন্নয়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। 

এমনকি সেসময় চট্টগ্রামে এসব কাজে দক্ষ জনবলেরও খুব অভাব ছিলো। ফলে, চাইলেও প্রতিষ্ঠানের পরিধি ও ব্যাপ্তি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছিলো না।

জিহাদের ভাষ্যে, ‘দক্ষ জনবল ব্যতীত এ কাজে সফল হওয়াটা অনেকটা অসম্ভবই। কেননা, এখানে কেউ প্ল্যানিং করবে, কেউ কপি ক্যাপশন লিখবে, কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইন করবে এবং কেউ চ্যানেল ম্যানেজমেন্ট করবে, সেই সাথে কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে কাউকে। এতোসব কাজ যদি এক বা দুজন করতে যায় তখন পুরো কাজটি আর ভালো হয় না।’

এ অভাব ঘুচাতে তাই তিনি দক্ষ মানুষ তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠা করেন টীম চিটাগাং নামে একটি যুব সংস্থা। গত ৫ বছর ধরে এ সংস্থা কাজ করছে চট্টগ্রামের তরুণদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও সমাজের অসহায় মানুষগুলোকে স্বাবলম্বী করা নিয়ে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়াও বর্তমান যুগে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় এমন নানান দক্ষতা ও সফটস্কিলসের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে এ সংস্থাটি। এ পর্যন্ত টীম চিটাগাং সাড়ে তিন শতাধিক তরুণের দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করেছে।

‘এই ক্ষেত্রেও চট্টগ্রামে আমরাই প্রথম। যেহেতু একাডেমিকভাবে এসব বিষয় তখনো খুব গুরুত্ব সহকারে পড়ানো হচ্ছিলো না, তাই প্রয়োজন ছিলো স্কিল ডেভলপমেন্ট কোর্স করায় এমন প্রতিষ্ঠানের। 

কিন্তু ঢাকায় তা প্রচুর থাকলেও চট্টগ্রামে ছিলো না। ফলে, শুরুতেই বেশ সাড়া পাই আমরা।  বর্তমানে আমাদের ক্যাপ্টেনদের (সদস্য) মধ্যে যারা গ্রাজুয়েশন করেছে তাদের একজন ও বেকার নেই, সবাই কোন না কোন ক্ষেত্রে ভালো করছে’, জানালেন জিহাদ।

এসবের বাইরে তিনি বর্তমানে কাজ করছেন ই-কমার্স নিয়েও, লীড লাইফ নামে ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছু সকলের দোর-গোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। 

জিহাদ বলেন, ‘ঢাকায় বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আছে যারা নানা রকম পণ্য বা সেবা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে চট্টগ্রামে একটি শূন্যতা দীর্ঘদিন ধরেই। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি’। এক্ষেত্রেও লীড লাইফ চট্টগ্রামের মানুষের জীবনযাত্রায় ও মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

আজকের ইমতিয়াজ জিহাদের শুরু হয়েছিলো শূন্য টাকা মূলধন নিয়ে কেবল সাহস আর মনের জোরের উপর ভর করে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে বলেন ২২ জন থেকে ২২০ জনের টীমে পরিণত হতে চান শীঘ্রই। 

আর, আপাতত ঢাকায় এবং দেশের বাইরে দুটো অফিস করাই সামনের লক্ষ্য। তবে, মূল কার্যালয় চট্টগ্রামে রেখে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই প্রভাব রাখতে চান বিশ্বজুড়ে।

লীড বাংলাদেশের এ সাফল্য শুধু প্রতিষ্ঠানটিরই নয়, একইসাথে চট্টগ্রামে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অগ্রযাত্রারও গল্প। সময়ের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে আরও নানা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে, উঠে এসেছেন নতুন ডিজিটাল মার্কেটার। 

তাদেরও অনুপ্রেরণা দেয় চট্টগ্রামে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্র গড়ে দেওয়া লীড বাংলাদেশের সংকট, সংগ্রাম ও সাফল্যের এই আখ্যান।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/168879/লীড-বাংলাদেশের-হাত-ধরে-চট্টগ্রামের-ডিজিটাল-মার্কেটিং