বন্যায় ২ জনের মৃত্যু, পানিবন্দি প্রায় ১০ লাখ

বন্যায় ২ জনের মৃত্যু, পানিবন্দি প্রায় ১০ লাখ

টানা বর্ষণে কক্সবাজারে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে নৌকা ডুবে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে গিয়ে রামু উপজেলার গর্জনিয়ার ক্যাজর বিল নামক এলাকায় নৌকা ডুবে ওই গ্রামের বশির মোহাম্মদের মেয়ে কামরুন্নাহার (২০) ও একই গ্রামের এরশাদ উল্লাহর শিশু কন্যা হুমায়রা বেগম মারা যায়।

এদিকে, বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি থাকায় বানবাসী মানুষগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ত্রাণ বা অন্যান্য সুবিধা পৌঁছাতে না পারায় অনাহারে মানববেতর দিন কাটাচ্ছে এসব মানুষ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, কাউয়ারখোপ, মিঠাছড়ি, রশিদ নগর ও জোয়ারিয়ানালার ইউনিয়নে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বাঁকখালী নদীর পানিতে ডুবে গেছে এসব ইউনিয়নের সব গ্রাম। এতে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সঙ্কটে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বানবাসীরা। এছাড়া গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া সংযোগ সেতু, খালেকুজ্জামান সেতুসহ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

কক্সবাজার সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁও, পিএমখালী, খরুলিয়া, বাংলাবাজার, কক্সবাজার শহরতলীর অন্তত অন্তত ২০ গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ঈদগাঁও-দরগাহপাড়া সড়ক যোগাযোগ।

বৃষ্টি ও জোয়ারে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পেকুয়ার দুই লক্ষাধিক মানুষ। পানির তোড়ে তিন পয়েন্টে ভেঙে গেছে জনপদ রক্ষার বেড়িবাঁধ। টানা চার দিনের বর্ষণে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চার শতাধিক গ্রামের প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা বাগুগুজারা রাবার ড্যাম সংলগ্ন পাউবোর বেড়িবাঁধ, সালাহ উদ্দিন ব্রিজ সংলগ্ন পূর্ব মেহেরনামা বেড়িবাঁধ, মগনামা ইউনিয়নের কাঁকপাড়া বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে সদর ইউনিয়ন, মগনামা, ঢেমুশিয়া, শীলখালী ইউনিনের অন্তত ৫০ গ্রাম।

ভারি বর্ষণে মহেশখালীর অন্তত ৪০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত চার দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। উপজেলার ছোট মহেশখালী, হোয়ানক, ধলঘাটা, কালারমারছড়া, শাপলাপুর, কুতুবজোম ইউনিয়নে বিপুল পরিমানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

টেকনাফে অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৩০ গ্রাম। বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবেশ করছে সাগরের পানি। এতে উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিরা কিছু কিছু ত্রাণ দিচ্ছে বলে খবর আসছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণ না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দুর্গত মানুষগুলো। দ্রুত ত্রাণসহ প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আবদুস সোবহান বাংলামেইলকে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খোঁজ রাখছে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে অনেক জায়গায় ত্রাণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সহজে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।