শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২
ভাষা আন্দোলনের শহীদদের ইতিহাস ছড়িয়ে পড়ুক সর্বব্যাপী...
আধুনিক বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ মীর মশাররফ হোসেন এর ভাষায়-‘মাতৃভাষায় যার ভক্তি নাই, সে মানুষ নহে’। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়েই ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য নিয়েই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল এবং দেশভাগের সময় বৈষম্যহীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল। দুই পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬% মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলত অথচ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেখা যায়, নতুন দেশের ডাকটিকিট, মুদ্রা, মানি-অর্ডার বা টাকা পাঠানোর ফর্ম, ট্রেনের টিকেট, পোস্টকার্ড এগুলোতে শুধু উর্দু ও ইংরেজি ব্যবহৃত হচ্ছে।কিন্ত দেশ ভাগ হওয়ার ১ বছরের মধ্যেই ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্পষ্ট করে বলেছিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে উর্দু - অন্য কোন ভাষা নয়।
“আমি খুব স্পষ্ট করেই আপনাদের বলছি যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, এবং অন্য কোন ভাষা নয়। কেউ যদি আপনাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে তাহলে সে আসলে পাকিস্তানের শত্রু ।” বৈষম্যহীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের কথা বলে অল্পকিছুদিন পর শুরু হলো দুই জাতির মধ্যে বৈষম্য। তার এই বক্তব্য পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছে এবং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি এনে দিতে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বা অঞ্চলে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিলনা। মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন শাসকগোষ্ঠী হিসেবে পাকিস্তানিদের জন্য যেমন ছিল লজ্জার, তেমনি সমগ্র বাঙালির জন্য ছিল গর্বের। তৎকালীন ভাষা আন্দোলনে ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে আপামর জনসাধারণ সবারই গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং অবদান ছিল। উক্ত আন্দোলনে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিউল্লাহসহ নাম না জানা অনেকের রক্ত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতার ভীত নড়িয়ে দিয়েছিল এবং বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল।
পরবর্তীতে ইউনেস্কো তা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এই দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নানা উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করছে। যা বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য মর্যাদার এবং গর্বের। অথচ এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও যারা জীবন দিয়েছিলেন তাদের পুরোপুরি স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছি। এজন্য জাতি হিসেবে আমাদের জন্য বিষয়টি অনেক লজ্জার।
আমরা ভাষা আন্দোলন নিয়ে চেতনা বিক্রি করি। অথচ তাদের ইতিহাস, সংগ্রাম ও ত্যাগ প্রজন্মের পর প্রজন্ম অজানায় থেকে যাচ্ছে। এছাড়াও আমরা সর্বব্যাপী বাংলা ভাষার প্রচলন করতেই পারিনি। বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে হাসি-তামাশা করি। বিশেষ দিনে শুধু তাদের কে স্মরণ করি এবং আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ করে দেই। বাংলা ভাষা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক, যাদের রক্তের বিনিময়ে এই ইতিহাস নির্মিত হয়েছে তাদের জীবন ও কর্ম প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জানতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু এই বিশেষ দিনটি পালনের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে।
আবু তাহের
শিক্ষার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়