শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২
টাঙ্গাইল দর্পণ অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের আকাশে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রান্তীয় বৃষ্টিবলয়। আবহাওয়া বিশ্লেষক সংগঠন বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, আজ ১০ এপ্রিল থেকে শুরু করে আগামী ২২ এপ্রিল পর্যন্ত এই বৃষ্টিবলয় দেশের আবহাওয়ায় প্রভাব বিস্তার করবে। ফলে দেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এলাকায় হতে পারে বৃষ্টিপাত। পাশাপাশি থাকছে কালবৈশাখী ঝড় ও তীব্র বজ্রপাতের আশঙ্কা।
বৃষ্টিবলয়ের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ। এখানে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া চলার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগে এই বৃষ্টিবলয়ের প্রভাব মাঝারি মাত্রায় থাকবে, আর তুলনামূলকভাবে কম প্রভাব পড়বে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে।
বিডব্লিউওটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃষ্টির বেশিরভাগ অংশই হবে হঠাৎ এবং স্বল্পস্থায়ী। কালো মেঘের আবরণে পশ্চিম-উত্তর দিক থেকে শুরু হবে দমকা হাওয়া, এরপর বজ্রপাতসহ বৃষ্টি, তারপর আবার পরিষ্কার হয়ে উঠবে আকাশ।
এই সময়ে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে কিছুটা উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
প্রতিটি বিভাগের সম্ভাব্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে এভাবে:
• সিলেট বিভাগ: ৯০–১৩০ মিমি
• রংপুর বিভাগ: ৬০–৯০ মিমি
• ময়মনসিংহ বিভাগ: ৫০–৭০ মিমি
• ঢাকা বিভাগ: ৫০–৭০ মিমি
• রাজশাহী বিভাগ: ৩০–৪৫ মিমি
• চট্টগ্রাম বিভাগ: ১৫–৫০ মিমি
• বরিশাল বিভাগ: ২০–৩৫ মিমি
• খুলনা বিভাগ: ২০–৩০ মিমি
এই বৃষ্টিবলয় দেশের উত্তরাঞ্চল — বিশেষত রংপুর ও কক্সবাজার অঞ্চল হয়ে প্রবেশ করেছে এবং ২২ এপ্রিল সিলেট অঞ্চল দিয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৃষ্টিবলয়ের কারণে দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ এলাকায় সেচের প্রয়োজনীয়তা মেটানো সম্ভব হবে। ফলে কৃষকদের জন্য এটি কিছুটা স্বস্তির খবর।
অন্যদিকে, কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, এই বৃষ্টিবলয়ের প্রভাবে আগামী ১০ থেকে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে দেশের ওপর দিয়ে শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড়, তীব্র বজ্রপাত এবং কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিও বয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ঝুঁকি বেশি।
এছাড়া রাজশাহী, খুলনা এবং বরিশালের কিছু এলাকায় মৃদু তাপপ্রবাহ বজায় থাকতে পারে বলে জানা গেছে।
এই সময় নাগরিকদের প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে—
• বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গায় অবস্থান না করা,
• বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা,
• এবং প্রয়োজনে দুর্যোগকালীন সহায়তা নিতে প্রস্তুত থাকা।
আবহাওয়ার এই অস্থির সময়ে প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা ও প্রস্তুতি জরুরি হয়ে পড়েছে। আগামী ১৩ দিনের এই বৈচিত্র্যময় ও ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।