নেতা-কর্মীদের নিয়ে আন্দোলন সফল হবে না, প্রয়োজন জনসম্পৃক্ততা
নেতা-কর্মীদের নিয়ে আন্দোলন সফল হবে না, প্রয়োজন জনসম্পৃক্ততা
সরকারবিরোধী আন্দোলন শুধুমাত্র দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে নিয়ে করলে তা সফল হয় না বলে মতামত দিয়েছেন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। এজন্য তারা সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষদের নিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য বিএনপিকে তাগিদ...
নিজস্ব প্রতিবেদকসরকারবিরোধী আন্দোলন শুধুমাত্র দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে নিয়ে করলে তা সফল হয় না বলে মতামত দিয়েছেন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। এজন্য তারা সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষদের নিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য বিএনপিকে তাগিদ দিয়েছেন।
টানা দুই দিনের বৈঠকের শেষ দিন শনিবার পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এই বৈঠকে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দরা বিএনপিকে এসব পরামর্শ দেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
প্রথম দিনের বৈঠকে শুক্রবার ২০টি পেশাজীবী সংগঠনের ১০২ জন অংশ নেন।
বৈঠকের শুরুতে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এর আগে আমাদের দলের নেতৃবৃন্দ মতামত দিয়েছেন। শুক্রবার পেশাজীবীরা মতামত দিয়েছেন। আজ আপনাদের কাছে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় করে সুনির্দিষ্ট মতামত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, জাতীয় প্রেসক্লাব, ইউট্যাব, বিএফইউজে, ডিইউজে, ডিআরইউ, জিয়া পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, জি-৯, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া জিয়া পরিষদ, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া সাদা দল, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিনাজপুর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বৈঠক শেষে ড. মাহবুব উল্লাহ সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমি বলার চেষ্টা করেছি যে, মানুষের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ ও দু:খ আছে। এটা রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যেও আছে। কিন্তু আপনারা (বিএনপি) সাংগঠনিকভাবে কতটা প্রস্তুত। কারণ আন্দোলন এখন যেকোন সময়ের চেয়ে করা বেশি কঠিন। সেই দিকটা কাজেই মনে রাখতে হবে। কোন রকম হঠকারী সুযোগের অবকাশ নেই।
বৈঠকে তার বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্দোলন ও সংগ্রাম করা গণতান্ত্রিক দেশের অধিকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মানুষের স্বাভাবিক যে আকাঙ্ক্ষা তা প্রকাশ। তাই যারা আন্দোলন করবেন তারা মনে রাখবেন, আন্দোলন যেন সহিংস না হয়। আন্দোলনে সাধারণ জনগণ যেন অংশগ্রহণ করতে ভয় না পায়। আর আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকলেই আন্দোলন সফল হয়। যদি তা না থাকে শুধুমাত্র ক্যাডার দিয়ে আন্দোলন হয় না।
ঊনসত্তরের আন্দোলনেরর কথা উল্লেখ তিনি বলেন, আমরা ঊনসত্তরে আন্দোলন করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে জানি, কিভাবে মানুষ ঢেউয়ের মতো এগিয়ে আসে। এখন অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেই সংস্কৃতি যদি ফিরিয়ে আনা না যায় তাহলে গণতন্ত্রের জন্য তা মঙ্গলজনক হবে না।
সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে পেশাজীবী নেতারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে একদফা দাবিতে আন্দোলনের পরামর্শ দেন। তারা বলেন, রাজনৈতিক কোন ছলচাতুরীর কাছে মাথানত করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজনে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে একই দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে যেতে হবে।
ঢাকাকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু করার পরামর্শ দিয়ে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত আন্দোলনের ব্যর্থ হয়েছে, ঢাকায় কিছু করতে না পারায়। পাশাপাশি তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত এক পেশাজীবী নেতা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি পেশাজীবীদেরকেও সমন্বয় করার পরামর্শ দেন।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজুদ্দিন নসু, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন, বেলাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।
পেশাজীবী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ড. মাহবুব উল্লাহ, শওকত মাহমুদ, ডা. এ জেডএমজাহিদ হোসেন, কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমদ, আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, আব্দুল লতিফ মাসুম, এ বি এম ওবায়দুল হক, ছাবিরুল ইসলাম হাওলাদার, অ্যাডভোকেট আসাদুজামান আসাদ, এম আব্দুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, কাদের গনি চৌধুরী, খোরশেদ আলম, বাছির জামাল, মাহমুদা হাবিবা, মাহমুদ হাসান, ডা. ফাইজুল ইসলাম ফারুকী, গাজি আব্দুল হক, রাশেদুল হক, দিদারুল আলম, আল-আমিন, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, এস এম ফজলুল হক, শামসুল আলম সেলিম, এম জে আবেদীন, অধ্যাপক তোফাজ্জেল হোসেন, অধ্যাপক এ কে এম মতিনুর রহমান, মাসুদা কামাল, সুলাইমান, ইদ্রিস আলী, মোদাব্বের হোসেন, শফিউল আলম দোলন, ড. এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক ডা. আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল্লাহিল মাসুদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন- আন্দোলনে হবে একদফা, অন্য অপশন নেই
কেএস/আর
from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/politics/177337/নেতা-কর্মীদের-নিয়ে-আন্দোলন-সফল-হবে-না-প্রয়োজন-জনসম্পৃক্ততা