গ্রামে অনলাইন শিক্ষা অধরাই
গ্রামে অনলাইন শিক্ষা অধরাই
স্মার্ট ডিভাইসের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, গুগল মিটের মাধ্যমে শিখন কার্যক্রম একটি ভাল উদ্যোগ।
শিক্ষা
আসিফ কাজলকরোনা মহামারীর কারণে ১৫ মাস বন্ধ সবধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরফলে প্রান্তিক পর্যায়ের প্রাথমিকের প্রায় ২ কোটি শিশু আক্ষরিক অর্থে পড়াশোনার বাইরে রয়েছে। এই সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় রেডিও-টেলিভিশনে পাঠ কার্যক্রম চালিয়েছে। তবে এ কার্যক্রমে সাড়া মেলেনি বলে খোদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই জানিয়েছেন।
এঅবস্থায় রোববার প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের গুগল মিট এ্যাপস এর মাধ্যমে এ অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হেসেন। এসময় তিনি বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ সময় শিখন ঘাটতি পূরণে পাঠ পরিকল্পনা অনুসরণ করে অনলাইন ও অফলাইন দুই বিভাগেই কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের হোমভিজিটসহ ওর্য়াকশীট শিক্ষার্থীদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছানোরও অনুরোধ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: নতুন করে এমপিওভুক্ত হলেন যেসব শিক্ষক-কর্মচারী
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে টিভি-রেডিও ও মোবাইলে যে শিখন কার্যক্রম চলেছে তা এখনো চালানো হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে গ্রামীণ পর্যায়ের কোনো শিক্ষার্থী এ থেকে তেমন সুফল পাচ্ছেনা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, গ্রামপর্যায়ে অভিভাবকদের হাতে স্মার্ট ডিভাইস না থাকা, ইন্টারনেট ব্যবহার না জানা ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় প্রধান কারণ।
সম্প্রতি গণস্বাক্ষরতা অভিযানের এক সমীক্ষায় দূরশিক্ষণের (সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও ও মোবাইল) মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ চিত্র উঠে আসে। এতে দেখা যায়, দূরশিক্ষণে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। বাকি ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ অংশ নেয়নি।
আরও পড়ুন: প্রাথমিকের ছুটি নিয়ে যা বললেন গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী
এতে দেখা যায়, শিক্ষার্থী দূর-শিক্ষণ প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে, তাদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ ডিভাইসের অভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। গ্রামীণ এলাকায় এই হার ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ; অনলাইন ক্লাস আকর্ষণীয় না হওয়ায় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে না; ৯৯.৩ শতাংশ বাড়িতে নিজে নিজে পড়ালেখা করেছে বলে জানায়।
প্রান্তিক পর্যায়ের সরকারি প্রাথমিকের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গুগল মিটের কার্যক্রম উদ্বোধন হলেও এক সপ্তাহ ধরে মাঠ পর্যায়ে এ কার্যক্রম চলছে। নিজ স্কুলের চিত্র তুলে ধরে এ শিক্ষক বলেন, আমার স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে ৪৫ জন শিক্ষার্থী আছেন। এরমধ্যে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন এমন অভিভাবকের সংখ্যা মাত্র দুইজন। এ অবস্থায় এর সুফল নিয়ে আমরাও সংশয়ে আছি। এ বিষয়ে অভিভাবক ফরিদা ইব্রাহীম বলেন, গ্রামের সব বাড়িতেই টেলিভিশন নেই। ইদানিং রেডিওর ব্যবহারও নেই বললেই চলে।
আরও পড়ুন: পেছাল চবির ভর্তি পরীক্ষা
প্রাথমিকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকৃতপক্ষে এই কর্মযজ্ঞ ৫ ভাগ শিক্ষার্থীর জন্য। আদতে ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষার বাইরেই থাকবে। এর চেয়ে সীমিত পরিসরে বিদ্যালয়ে খুলে প্রতিদিন একটি শ্রেণীকে ক্লাসের সুযোগ দিলে শিক্ষার্থীরা বেশি উপকৃত হতো।
গুগল মিটের সার্বিক কার্যক্রমের কর্ণধার ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক বদিয়ার রহমান বলেন, এই কার্যক্রমের জন্য কোনো অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা শিখন কার্যক্রমের জন্য আমরা সব পথ দিয়েই এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি। আমারা ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে রেডিও-টেলিভিশন- মোবাইল ও শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়ির কাজ পাঠিয়েও নানা ধরণের শিখর কার্যক্রম চালু রেখেছি।
স্মার্ট ডিভাইসের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, গুগল মিটের মাধ্যমে শিখন কার্যক্রম একটি ভাল উদ্যোগ। আমরা সবাই যদি একযোগে আমরা চেষ্টা করি তবে এর থেকে ভাল কিছু অর্জন করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ছে
গুগল মিট একটি ওপেন প্লাটফম উল্লেখ করে এই যুগ্ম সচিব আরো বলেন, এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষক -শিক্ষার্থীর মধ্যে ইন্ট্রারাকশন করা যাবে। এর মানে কোনো শিক্ষক চাইলেই যে কোনো শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করতে পারবেন যে কি বুঝেছে। আবার শিক্ষার্থীরাও তাদের প্রশ্ন শিক্ষকদের করতে পারবেন। এছাড়াও ক্লাসরুমের মত সবাই সবাইকে দেখতেও পাবেন। যে সুযোগ আগে কখনো ছিলোনা। আবার এই অ্যাপসটি লো ব্যান্ডউইথেও চলবে। মোটকথা আমরা যেভাবে পারছি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে চাইছি।
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ যতীন সরকার বলেন, শিক্ষার আলো পূণরায় সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তিনি মনে করেন, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ধনী শ্রেণীকে শিক্ষিত করবে আর গরীব অশিক্ষিতই থেকে যাবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/একে/আরএ
from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/education/160827/গ্রামে-অনলাইন-শিক্ষা-অধরাই