জেলের ভয়ে স্বর্ণ বন্ধক রেখে খাবার বিতরণ
জেলের ভয়ে স্বর্ণ বন্ধক রেখে খাবার বিতরণ
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কাশীপুর ইউনিয়নের বৃদ্ধ ফরিদ আহমেদ ৩৩৩ ফোন করে জরিমানা হিসেবে ৭৫ হাজার টাকার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন...
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিনারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কাশীপুর ইউনিয়নের বৃদ্ধ ফরিদ আহমেদ ৩৩৩ ফোন করে জরিমানা হিসেবে ৭৫ হাজার টাকার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। শনিবার বিকেলে সদর উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে ওইসব খাদ্য বিতরণ করা হয়। ১০০ জনকে দেয়া সহায়তায় প্যাকেট ছিলো ১০ কেজি করে চাল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি করে ডাল, সয়াবিন তেল, লবণ ও পেঁয়াজ।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। উপজেলা প্রশাসন বাড়ির মালিক হিসেবে ফরিদ আহমেদকে জরিমানা করলেও প্রকৃতভাবেই পরিবারটি অসহায়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সদর ইউএনও আরিফা জহুরা জানিয়েছিলেন, একজন ব্যক্তি ৩৩৩ নাম্বারে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে সরেজমিনে হাজির হয়ে দেখা যায় তিনি নিজেই একটি চারতলা ভবনের মালিক। নিছক দুষ্টুমির ছলে ফোন করেন। বিভ্রান্ত করায় তাকে ১০০ প্যাকেট খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে বলা হয়েছে।
ভুক্তভোগী হলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম দেওভোগ এলাকার মৃত সুরুজ্জামান খানের ছেলে ফরিদ আহমেদ খান (৭৫)। তিনি শহরের নয়ামাটি এলাকার ‘আবুল গার্মেন্টস’ নামে হোসিয়ারী কারখানার শ্রমিক।
ফরিদ আহমেদ খান বলেন, আমি বাড়ির মালিক এটা সত্য কিন্তু এ চার তলা ভবনের দুই রুমের ফ্ল্যাটে আমি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করি। আর বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাটে আমার আরো ৫ ভাই ও এক বোন বসবাস করে। এ বাড়িতে কোনো ভাড়াটিয়া নেই। আমি হোসিয়ারীতে কাজ করি। মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন দেয়। এ টাকা দিয়ে মেয়ের পড়ালেখা, ছেলেটা শারীরিক প্রতিবন্ধী তাই তার ওষুধের টাকা, নিজের ওষুধ ও সংসার খরচ চলে না। খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করছি। ৩৩৩ নাম্বারে ফোন দিলে খাবার সহায়তা দিবে। যার জন্য ৩৩৩ এর ফোন দেই। একদিন পর স্থানীয় কাশিপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ফোন দিয়ে বলেন আপনি বাড়ির মালিক আপনার জন্য এ সহায়তা না। আপনি কেন চাইতে গেলেন? আমি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ক্ষমা চাইবেন। এর দুই দিন পর ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা করলে আমি ফোন দিয়েছি স্বীকার করি। মেম্বারের কথায় আমি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফোন দেয়ার জন্য ক্ষমা চাই। তখন তিনি ক্ষমা না করে ১০০ জনের মধ্যে খাবার বিতরণের জরিমানা করে। অন্যথায় ৩ মাসের জেল। সেজন্য আমি আজকে খাবার বিতরণ করি।’
ফরিদ আহম্মেদ খানের স্ত্রী হিরন বেগম বলেন, স্বর্ণের দোকানে মেয়ের গলার চেইন বন্ধক দিয়ে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। আর আশে পাশের আত্মীয় স্বজন, পরিচিতদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এ খাবার বিতরণ করছি। এ বলে তিনি কান্না শুরু করেন।’
এদিকে কাশিপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিয়েও নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।’
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি যদি সত্যিই অসহায় হয়ে থাকেন তাহলে ওনি যে টাকার ত্রাণ দিয়েছেন সেই টাকা উপজেলার ত্রাণ তাহবিল থেকে ফেরত দেয়া হবে।’
বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে
from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/160698/জেলের-ভয়ে-স্বর্ণ-বন্ধক-রেখে-খাবার-বিতরণ