মুনাফার লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ

মুনাফার লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ

মুনাফার লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করছে রূপসা নামের নাম সর্বস্ব এক প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রামে রূপসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে সাড়ে ৮ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় শত শত ইপিজেড শ্রমিক ও নিম্ম আয়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

রূপসা কিং গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এই মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠানটি অধৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে শত শত নিম্ম আয়ের মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে আসছিলো। তারা কয়েকজন ব্যক্তির প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দায়ের হলে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম ডিভিশনের একটি ইউনিট এই মাল্টিপারপাস কোম্পানির কার্যালয়ে অভিযান চালায়।

অভিযানে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় ৮ কোটি ৪২ লাখ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয় এই কার্যালয় থেকে। এই অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইপিজেড থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নুরুল হুদা।

পুলিশ ও টাকা আমানতকারী স্থানীয়রা জানান, রূপসা কিং গ্রুপের প্রতিষ্ঠা রূপসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন মাল্টিপারপাস কোম্পানি। নগরীর ইপিজেড থানার চৌধুরী মার্কেটে এক কার্যালয় খুলে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের দ্বিগুণ তিনগুণ মুনাফা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে আসছিলো।

এই প্রতিষ্ঠানের মালিক চেয়ারম্যান লায়ন মো. মুজিবুর রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান মুছা হাওলাদার। প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ইপিজেড সংলগ্ন এলাকায় কার্যালয় স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানার নিম্ম আয়ের শ্রমিক, ফুটপাতের ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির নিম্ম আয়ের মানুষের কাছ থেকে ডিপিএস-এর নাম দিয়ে আমনত সংগ্রহ করে আসছে।

কারো কাছ থেকে এক লাখ, কারো কাছ থেকে পাঁচ লাখ এবং সর্বনিম্ম ১০/২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আমানত নিয়ে তারা এসব টাকা আত্মসাতের প্রচেষ্ঠা চালিয়ে আসছিলো বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ জমা হয়।

সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে মঙ্গলবার বিকেলে থেকে এই প্রতিষ্ঠানে অভিযান শুরু করে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ টিম। অভিযানে এখন পর্যন্ত ৮ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার নগর টাকা উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তাকে। পুনরায় ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে নিয়ে অভিযান চলবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান বিপিএম পিপিএম জানান, ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ এই অভিযান পরিচালনা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে। অভিযানে সিএমপি’র ইপিজেড থানা পুলিশ সাথে আছে। অভিযান সম্পন্ন হলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান যাবে।

এদিকে অভিযানের খবরে রূপসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে অর্থ আমনতকারী শত শত শ্রমিক উদ্বিগ্ন হয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে। তারা তাদের আমানত ফিরে পাবেন কি-না এই নিয়ে শঙ্কিত।

আলাউদ্দিন নামের এক গার্মেন্টস শ্রমিক জানান, দ্বিগুন মুনাফা দিবে বলে প্রতিশ্রুতি পাওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানে এক লাখ টাকায় এক ডিপিএস খুলেছেন তিনি। এই টাকা তিনি ফিরে না পেলে নিঃস্ব হয়ে যাবেন।

একই ভাবে আমেনা, সুমি, নজরুলসহ আরো অনেক কেউ ২০ হাজার, কেউ ৫০ হাজার আবার কেউ ৩ লাখ টাকা আমানত রাখার কথা জানান। দিনের পর দিন শ্রমিকের চাকুরি করে সামান্য সঞ্চিত অর্থ মুনাফার লোভে এই প্রতিষ্ঠানে জমা দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা টাকা নিয়ে নিজেরা কোটিপতি হয়ে শ্রমিকদের নিঃস্ব করে দিয়েছেন।

 

চট্টগ্রাম/রেজাউল/বুলাকী

 

 



from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2TokzJO