রেজিস্ট্রেশনের জন‌্য ৩০০ টাকায় মেডিকেল

রেজিস্ট্রেশনের জন‌্য ৩০০ টাকায় মেডিকেল

রেজিস্ট্রেশনের জন‌্য ৩০০ টাকায় মেডিকেল

হাসিবুল ইসলাম

শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের (লার্নার) করার জন্য ঘুরছিলাম মিরপুর বিআরটিএর অফিসের সামনে। হঠাৎ করে সুজন নামের একজন এসে বললো, ‘কী লাগবে ভাই? কী করাবেন?’ আমি বললাম, ‘আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য আসছি। এখন লার্নার করব। কিন্তু কীভাবে কী করব বুঝতে পারছি না।’

সুজন আমার হাতের লার্নারের ফরমটা নিয়ে বলে, ‘এতো মেডিকেল করা নেই। আপনার আগে মেডিকেল করাতে হবে তার পরে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে এই ফরম জমা দিতে হবে। যাই হোক আপনার কিছুই করতে হবে না। যা করার আমি করে দিচ্ছি। আগে মেডিকেল করার জন্য ৩০০ টাকা লাগবে। ৩০০ টাকা দেন আমি মেডিকেল করিয়ে দিচ্ছি।’

আমি বললাম, ‘তাহলে ভাই আমাকে আপনার সাথে মেডিকেল করতে যেতে হবে না? তিনি বললেন, ‘না, আপনি দাঁড়ান। আমি করিয়ে নিয়ে আসছি। আর আপনি যদি ফুল প্যাকেজ নেন, তাহলে আট হাজার টাকায় ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে দেবো। আপনি শুধু ফিঙ্গার প্রিন্ট দেবেন আর ছবি তুলে যাবেন।’

এই কথা বলতে বলতে তিনি আমার লার্নার ফরমটা নিয়ে মেডিকেল করার জন্য চলে গেলেন। পরে আমি তাকে দেখে বললাম আমার লার্নার এখন করা লাগবে না। আমি আগামীকাল এসে করাব এবং আপনার মাধ্যমেই করাব। এই কথা বলে সেখান থেকে স্থান ত্যাগ করি।

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য সাধারণ গ্রাহক সেজে মিরপুর বিআরটিএতে গিয়ে ঠিক এভাবেই কার্যালয়ের বাইরে দালালদের সাক্ষাৎ মেলে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য দালালদের অনেক আগে থেকেই দৌরাত্ম দেখা যেত অনেক আগে থেকেই। কিন্তু নতুন সড়ক আইন হওয়ার পর থেকে গ্রাহকদের যেমন চাপ বেড়েছে, ঠিক তেমনি বেড়েছে দালালের সংখ‌্যাও।

প্রায় প্রতিটি বিআরটিএর কার্যালয়ের আশেপাশে দালাল চক্র এমনভাবে বসে থাকে এবং গ্রাহকদের সাথে কথা বলে। দেখলে মনেই হবে না যে তারা অবৈধ কাজ করছে। মনে হবে দালালি করার জন্য যেন সরকার লাইসেন্স করে দিয়েছে তাদের।

বিআরটিএর বাইরে সবুজ হোসেনের সঙ্গে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য কথার ছলে জিজ্ঞেস করি কীভাবে তিনি মাত্র ৩ মাসের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে দেবেন? কার মাধ্যমে তিনি এই কাজ করাবেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে অনেকেই আছি যারা এই কাজ করেই জীবনযাপন করছি। বিআরটিএর কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন যাদের দিয়ে আমরা এই কাজ করাই। তবে কার মাধ্যমে করাই সেটা আপনার না জানলেও চলবে।’

একটা ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দিলে কতো টাকা লাভ থাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমি বিআরটিএর যে কর্মকর্তাকে দিয়ে কাজ করাই তিনি লাভের টাকার প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়ে নেন। বাকি ৩০ শতাংশ টাকা আমার থাকে। তবে এই টাকার মধ্যে আমার স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীকেও ভাগ দিতে হয়।’

দালাল চক্র বিষয়ে বিআরটিএর ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মো. শফিকুল আলম সরকার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে দালালদের একটা প্রভাব আছে সেটা আমাদের সবারই জানা। এ কথা অস্বীকার করব না। তবে আগের তুলনায় এখন এটা অনেক কমে গেছে। তাছাড়া আমাদের এখানে যারা নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, তাদেরকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে যেন বিআরটিএর কার্যালয়ের মধ্যে কোনো দালাল চক্র প্রবেশ করতে না পারে।’

দালাল চক্রের অনেকেই বলছেন, বিআরটিএর কেউ কেউ এই অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি জড়িত থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা চাই সাধারণ গ্রাহকদের যথাযথাভাবে সেবা প্রদান করতে।’

তিনি গ্রাহকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি গ্রাহকদের বলব কেউ যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে, তাহলে দয়াকরে আমাদের কাছে এসে বলবেন এবং সেই ব‌্যক্তিকে ধরিয়ে দেবেন। আপনারা যদি এই কাজে আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে দালালচক্র কিছুতেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।’

 

ঢাকা/হাসিবুল/সনি



from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2DLfguX