আজ হানাদার মুক্ত হয় রাজৈর

আজ হানাদার মুক্ত হয় রাজৈর

আজ হানাদার মুক্ত হয় রাজৈর

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে সাড়ে তিন শত মুক্তিযোদ্ধাসহ শহীদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে আজ ৪ ডিসেম্বর মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়

বাংলাদেশ

মাদারীপুর প্রতিনিধি

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে সাড়ে তিন শত মুক্তিযোদ্ধাসহ শহীদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে আজ ৪ ডিসেম্বর মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে মাদারীপুরের রাজৈর থানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ১৩৫ জন পাক হানাদারকে বন্দী করা হয়। মুক্ত হয় রাজৈর উপজেলা। তবে ৪৯ বছরেও অধিকাংশ শহীদ পরিবারের অনেকেরই খোঁজ নেয়নি কেউ। অসহায় শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি সম্মানটুকু পর্যন্ত দেখানো হয়নি। এ বিষয়ে সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন পরিবারগুলো।  

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কমলাপুর, পাখুল্যা, লাউসর, কদমবাড়ি, মহিষমারী, ইশিবপুর ও কবিরাজপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর সাথে লড়াই করে। এসময় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় হানাদার বাহিনী। সেদিন ১৩১ জন মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা কর হয়। এরপর পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের রাজৈর বড় ব্রীজ, আমগ্রাম ব্রীজ ও টেকেরহাটের বৌলগ্রাম, রাজৈর থানা ও পাখুল্যায় মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। এখানে অংশগ্রহণ করেন সাবেক রক্ষীবাহিনীর ডেপুটি ডিরেক্টর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) সরোয়ার হোসেন মোল্যা। সকাল ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াইয়ে পরাস্ত হয়ে সর্বশেষ ৩ ডিসেম্বর মধ্য রাতে পাকবাহিনী রাজৈর ছেড়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে মুক্তিযোদ্ধারা টেকেরহাট বন্দরে তাদের আক্রমণ করেন। গ্রামবাসীর সহায়তায় ১৩৫ জন পাক হানাদারকে বন্দী করেন মুক্তিযোদ্ধারা। নয় মাসের যুদ্ধে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় সাড়ে তিন শত মানুষ শহীদ হন। 

১৯৭১ সালে পাকহানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদরের হাতে নিহত রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের সুতারকান্দি গ্রামের আদিত্য ভাবুকের ছেলে নিত্যানন্দ ভাবুক জানান, আমার বাবাকে রাজাকাররা বাড়ি এসে গুলি করে হত্যা করে। বাবা নিহত হওয়ার পর মা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে বাঁচিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও কোন সরকারই আমার বাবার প্রতি কোন সম্মান দেখায়নি। এমনকি বিন্দুমাত্র সাহায্য দেয়নি আমাদেরকে। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন তিনি।

পাকবাহিনীর হাতে নিহত বাজিতপুর ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের অতুল আচার্য্যরে পুত্রবধূ আলো রানী আচার্য্য জানান, তার শ্বশুরকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ভারতের রোড নামক স্থানে বসে গুলি ও মাথা ইটের উপর রেখে থেতলে নৃসংশভাবে হত্যা করে। অভাবী সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে সংসার মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পর্যন্ত কোন সরকারই তাদেরকে সহায়তা দেয়নি। অতুল আচার্য্যরে পুত্রবধূ আলো রানী আচার্য্য সরকারী সহায়তা কামনা করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইউসুফ আলী মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আলবদর রাজাকারদের বিচার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু মাদারীপুরের রাজৈরে যারা কুখ্যাত রাজাকার, যারা আমাদের মা বোনের ইজ্জত হরণ করেছে, ঘর বাড়ি লুট করছে, তাদের অদ্যাবধি বিচার শুরু করা হয়নি। তাদের বিচার করার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান তিনি।

বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক বলেন, রাজৈরের কুখ্যাত রাজাকারের বিরুদ্ধে এখনও কোন মামলা বা বিচারকাজ শুরু না করায় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান মিয়া বলেন, দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য সাকা চৌধুরী, মুজাহিদ এদেরকে  যেমন ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, রাজৈরবাসীও দাবি করছে রাজৈরের চিহ্নিত রাজাকারদেরকে ফাঁসি দিয়ে রাজৈরকে কলঙ্কমুক্ত করার।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদেরকে এই বিজয়ের মাসে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাই।

রাজৈর উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ সেকান্দার আলী সেখ বলেন, রাজৈরের মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে পাকহানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে রাজৈর থানা হানাদারমুক্ত করে। পাক আর্মিরা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে টিকতে না পেরে টেকেরহাট থেকে ৩ ডিসেম্বর রাতে পালিয়ে ফরিদপুর যাওয়ার পথে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ছাগলছিড়া নামক স্থানে ১৩৫জন পাক আর্মি ধরা পড়ে। নয় মাসের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় সাড়ে তিন শত মানুষ শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদরদের হাতে নিহতদের মধ্যে অনেক পরিবারই ৪৮ বছরেও সরকারিকোন সাহায্য পায়নি। তাদেরকে সাহায্য দেওয়ার কোন সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে  মাদারীপুর জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ শাজাহান হাওলাদার বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরকারি উদ্যোগে স্মৃতি স্তম্ভ করা হবে, সেখানে তাদের নাম লেখা হবে। আর্থিক সাহায্যের ব্যাপারটি ইউএনও বা জন প্রতিনিধিরা করতে পারেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

© Bangladesh Journal


from BD-JOURNAL https://www.bd-journal.com/bangladesh/97814/আজ-হানাদার-মুক্ত-হয়-রাজৈর