‘জীবন দেব, তবু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না’

‘জীবন দেব, তবু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না’

‘জীবন দেব, তবু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আমি একজন শ্রমিক। রক্ত দেব, জীবন দেব, তবু আমাদের সকল দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না’।

খুলনার খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিক এম এ রাজু এসব লিখে বুকে প্লাকার্ড ঝুঁলিয়ে আমরণ অনশন করছেন।

একই মিলের অনশনরত ষাটোর্ধ শ্রমিক সুলতান মিয়া বলেন, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যদি চাকরি করে টাকা-পয়সা না পাই তাহলে অনশনে মরাও ভালো।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘মজুরি নেই, ঘরে চাল, ডাল, তেল নেই। ছেলে-মেয়েদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার নিশ্চয়তা নেই। পরিবারে চলে হাহাকার। এভাবে কি জীবন চলতে পারে?’

এদিকে, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনায় আমরণ অনশনরত অভূক্ত অর্ধশত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে বুধবার ১৫/১৬ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বাকিদের অনশনস্থানে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। শরীরে স্যালাইন নিয়ে জীবন বাজি রেখেই তারা ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন।

এর আগে মঙ্গলবার বিকাল থেকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়সহ ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় পাটকলের শ্রমিকরা।

আন্দোলনে থাকা পাটকলগুলো হচ্ছে, ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল, কার্পেটিং জুট মিল ও  জেজেআই জুট মিল।

কাঁথা-বালিশ, লেপ, কম্বল নিয়ে আমরণ অনশনপালনকারী শ্রমিকরা মঙ্গলবার তীব্র শীতের মধ্যে রাজপথে অনশন পালন করেন। শ্রমিকদের এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তাদের পরিবারের সদস্যরাও। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি থেকে না ফেরার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।

প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের শ্রমিক কাদের মিয়া রাইজিংবিডিকে জানান, কাঁথা-বালিশ নিয়ে মঙ্গলবার রাত কাটিয়েছি অভুক্ত থেকে। বুধবার রাতও চলে এসেছে। কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান হয়নি। আমরা হয়তোবা এভাবে আন্দোলন করতে করতে মারা যাবো। একই সড়কে সামিয়ানা টানিয়ে ক্রিসেন্ট ও দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকরা আমরণ অনশন করছেন।

এসব স্থানে অনশনরত শ্রমিক মো. আহাদ আলী মেম্বার, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শাহাবুদ্দিন, আবুল খায়ের হেমায়েত, মো. হিরণ, মো. সাজেদুল ইসলাম ওয়াসিম, মো. জব্বার হাওলাদার, আব্দুল সত্তার, আবুল হোসেন হারুন, কাওসার, জাগাঙ্গীর, তৌয়েব আলী, মন্টু, খুকি, রেহেলা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদেরকে স্যালাইন দিতে দেখা গেছে। এদিকে অনশন কর্মসূচির কারণে পাটকলগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে বিআইডিসি সড়কের দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, প্রচণ্ড শীত ও ক্ষুধার কারণে অর্ধশত শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সমস্যা সমাধানে ঢাকায় মঙ্গলবার বৈঠক হলেও তার ফলপ্রসু না হওয়ায় শ্রমিকরা অনশন অব্যাহত রেখেছেন। যতই কষ্ট হোক, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে।

তিনি আরো জানান, শ্রমিকরা নিজ নিজ মিল গেটের সামনে এ কর্মসূচি পালন করছেন। জুট মিলগুলোতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী বনিজ উদ্দিন মিয়া রাইজিংবিডিকে জানান, কয়েকদিন আগে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা হয়েছে। এখন শ্রমিকরা মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন নিয়ে আন্দোলন করছেন।

এদিকে, আগামী ১৫ ডিসেম্বর পাট মন্ত্রণালয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পাটমন্ত্রী ও শ্রম মন্ত্রীর বৈঠকের কথা বলেছেন । বৈঠকের আগ পর্যন্ত শ্রমিকদের অনশন কর্মসূচি স্থগিত রাখার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে বুধবার রাতে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে তার খুলনাস্থ বাস ভবনে শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের কথা রয়েছে।

 

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী



from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2qIZspD